শিরোনাম
শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইনের খসড়ায় যা আছে

আগামী সপ্তাহে যাচ্ছে আইন মন্ত্রণালয়ে, ভোটার সংখ্যা বিবেচনার প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় সংসদের সীমানা নির্ধারণ-সংক্রান্ত আইন সংশোধনীর খসড়া চূড়ন্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী সপ্তাহে এ আইনের সংশোধনী আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠাবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, জনসংখ্যা কোটার ভিত্তিতে আসন বণ্টন; সিটি করপোরেশন, বড় বড় শহরের ও পল্লী এলাকার ভারসাম্য রক্ষা এবং সিটিতে মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের মাধ্যমে আসন নির্ধারণ করার প্রস্তাব রয়েছে প্রস্তাবিত খসড়ায়। আগামী সপ্তাহে আইনের সংশোধনী ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা বাংলায় সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইন করার প্রস্তাব রেখেছি। সব এলাকায় আসন বণ্টনে ভারসাম্য বজায় রাখতে জনসংখ্যার পাশাপাশি ভোটারসংখ্যা বিবেচনায় এনে সীমানা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। এটি এখন আইন মন্ত্রণালয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে, তারপর ক্যাবিনেটে যাবে। এরপর সংসদে যাবে। চূড়ান্তভাবে কী হয় তা পরবর্তী সময়ে দেখা যাবে।’ ‘সীমানা নির্ধারণ আইন, ২০১৯’ নামে নতুন  আইনটি পাস হলে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে বিদ্যমান ‘দ্য ডিলিমিটেশন অব কনস্টিটিউয়েন্সিস অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬’ রহিত হবে। বাংলা ভাষায় নতুন এ আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়ার দুই বছরের মাথায় বুধবার কমিশন সভায় এর খসড়া চূড়ান্ত হয়। এ বিষয়ে কমিশনের সচিব মো. আলমগীর বলেন, প্রস্তাবিত খসড়া হালনাগাদ করে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় তা দেখে ফেরত পাঠানোর পর এবার চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় তেমন বড় পরিবর্তন নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আগের সঙ্গে ৯০% মিল রয়েছে, ১০% নতুন সংযোজন ও মডিফাই করা হয়েছে। জনসংখ্যা, ভোটারসংখ্যা, ভৌগোলিক, যোগাযোগ ও প্রশাসনিক ইউনিট বিবেচনায় নিয়ে আসন পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাব করা হয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইন নতুন করে প্রণয়নের উদ্যোগ নিলেও তা থেমে গিয়েছিল। সে সময় নির্বাচন কমিশনের খসড়া কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়, ভোটার তালিকা প্রতি বছর হালনাগাদ হওয়ায় সীমানা নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় শুধু জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি না করে ভোটারসংখ্যা বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। এর সঙ্গে বড় বড় শহরের আসনসংখ্যা সীমিত করে দিয়ে আয়তন, ভৌগোলিক অখ-তা ও উপজেলা ঠিক রেখে এবার সীমানা নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়। সবার সঙ্গে আলোচনা করে সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার পরও নতুন আইন প্রণীত হয়নি। নতুন করে আইন সংস্কারের প্রস্তাবগুলো নিয়ে এ বছর নভেম্বরে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা জানান, প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় ‘জাতীয় জনসংখ্যা কোটা’র ভিত্তিতে প্রতিটি জেলায় আসন বণ্টন করার বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে।

 সেই সঙ্গে আসন বণ্টনে জনসংখ্যা কোটা কীভাবে নির্ধারণ হবে তাও উল্লেখ করা হয়েছে। ২, ৫, ৬ ধারা ও বিভিন্ন উপধারায় ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। ২ ধারায় যুক্ত হচ্ছে ‘জাতীয় জনসংখ্যা কোটা’ নামে নতুন উপধারা।

 এই ধারার ‘ক’ উপধারায় সিটি করপোরেশন ছাড়া সমগ্র দেশের বিদ্যমান ভোটারসংখ্যা এবং সর্বশেষ আদমশুমারি প্রতিবেদনে প্রাপ্ত জনসংখ্যার গড় নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। ‘খ’ উপধারায় সিটি করপোরেশনগুলোর বিদ্যমান ভোটারসংখ্যা ও সর্বশেষ আদমশুমারি প্রতিবেদনে প্রাপ্ত জনসংখ্যার যোগফলের দুই-তৃতীয়াংশের গড় নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ‘ক’ ও ‘খ’-তে প্রাপ্ত ফলাফলের যোগফলকে সংসদের মোট আসনসংখ্যা দিয়ে বিভাজনের মাধ্যমে প্রাপ্ত সংখ্যার ভিত্তিতে আসনসীমা নির্ধারণের কথা ‘গ’ উপধারায় বলা হয়। খসড়ায় বলা হয়, এইভাবে প্রতিটি জেলার জনসংখ্যা ও ভোটারসংখ্যার গড় নির্ধারণ করে জনসংখ্যার কোটা দিয়ে ভাগ করে প্রতিটি জেলার আসন বণ্টন করতে হবে। প্রাপ্ত জনসংখ্যার গড় এবং জাতীয় জনসংখ্যা কোটার ভিত্তিতে প্রাপ্ত গড়ের ব্যবধান ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কম-বেশি হলে সংশ্লিষ্ট জেলার আসনসংখ্যার কোনো কম-বেশি হবে না। ৬ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, যা কিছুই থাকুক না কেন, কমিশন প্রত্যেক জেলার অনুকূলে অন্যূন একটি আসন বণ্টন করবে। প্রস্তাবিত আইনটি প্রক্রিয়া শেষে পাস হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নতুন পদ্ধতিতে সীমানা পুনর্নির্ধারণ হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর