রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

সেই রিয়াদকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ

কর্মজীবী তালাকপ্রাপ্ত টার্গেট

মাহবুব মমতাজী

রিজওয়ানুল ইসলাম ওরফে রিয়াদ (৩৩)। বাড়ি নীলফামারী। পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। চাকরি করতেন রাজধানীর বনানীর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ঘেঁটে তালাকপ্রাপ্তাদের খুঁজে বের করতেন তিনি। প্রেম ও বিয়ের কথা বলে হতেন ঘনিষ্ঠ। তারপর নানা কৌশলে তাদের কাছ থেকে ধার নিতেন টাকা। তবে নারীদের কাউকেই বিয়ে না করে সব ধরনের যোগাযোগের মাধ্যম বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যান রিয়াদ। বিয়ে করার কথা বলে বিয়ে বিচ্ছেদ হওয়া (ডিভোর্সি) তিন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলেছেন তাদের। সামাজিক মর্যাদাহানির শঙ্কায় পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি দুই নারী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্রী রিয়াদের বিরুদ্ধে রাজধানীর কলাবাগন থানায় গত ৪ জুলাই মামলা করেন। তবে মামলার তিন মাস পরও আসামি রিয়াদের অবস্থান এখনো জানতে পারেনি পুলিশ।  এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার এসআই সুমিত আহমেদ বলেন, মামলাটির এখনো তদন্তাধীন। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, হিন্দু ধর্মাবলম্বী তালাকপ্রাপ্তাসহ নীলফামারীর আরেক নারীকে একই কৌশলে ঠকিয়েছেন রিয়াদ। তাদের কেউই মানসম্মানের ভয়ে তার কথা প্রকাশ করেননি। তিনি কর্মজীবী তালাকপ্রাপ্তাদের খুঁজে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এরপর তাদের টাকা নিয়ে হাওয়া হয়ে যান। জানা গেছে, রিয়াদ নীলফামারী সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০০৫ সালে এসএসসি পাস করেন। পরে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে অনার্স সম্পন্ন করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সান্ধ্যকালীন এমবিএ করেন। গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর পূর্ব কুখাপাড়ার নতুন জেলখানা রোডে। পিতার নাম শফিকুল ইসলাম। বনানীর একটি সফটওয়্যার ফার্মে চাকরিকালে থাকতেন মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটির ৪ নম্বর সড়কের ১৯৭ নম্বর বাড়িতে। প্রতারণার অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে রিয়াদের ব্যবহৃত একাধিক মোবাইলফোন নম্বরে কল করে সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ চন্দ্র জানান, মামলাটির তদন্তের স্বার্থে তারা প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার যা যা করা দরকার তা সম্পন্ন করেছেন। অভিযুক্ত রিয়াদ যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন সে জন্য তারা ইমিগ্রেশনে চিঠি দিয়েছেন। রিয়াদের খোঁজ জানতে তার স্থায়ী ঠিকানার সংশ্লিষ্ট থানায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। রিয়াদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে তার বাবা শফিকুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি তা ধরেননি।  কলাবাগান থানার মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত জানুয়ারি মাসে রিয়াদের সঙ্গে ভুক্তভোগীর ফেসবুকে পরিচয় হয়। তারপর প্রেমের প্রস্তাব দেয় রিয়াদ। ওই নারী তখন বলেন, প্রেম নয়, বিয়ের ব্যাপারে তিনি চিন্তা-ভাবনা করছেন। এরই মধ্যে ওই নারী ফেব্রুয়ারিতে টিউমারের চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। সেখান থেকে ফেরার পর রিয়াদ তার সুস্থতার জন্য অনেক যত্ন নেয়। ভালো আচরণের মাধ্যমে ওই নারী ও তার পরিবারের সদস্যদের আস্থা অর্জন করে রিয়াদ। এর কিছুদিন পর তারা দুজন বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। পরে গত ৫ মে রিয়াদ তার ছোট ভাইয়ের বিয়ের কথা বলে ৪ লাখ টাকা ধার চান। ৭ মে ওই নারী তার স্থায়ী আমানত ভাঙিয়ে আড়াই লাখ টাকা রিয়াদের হাতে তুলে দেন। সেই টাকা নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পর থেকেই যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় রিয়াদ। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে দুর্ব্যবহার শুরু করে। কিছুদিন পর আরেক নারীর সঙ্গে সম্পর্কের কথা জানতে পেরে মামলার বাদী রিয়াদের বন্ধুদের মাধ্যমে তার খোঁজ করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে গত ২৬ মে রাতে রিয়াদ এই নারীর বাসায় যান। তার আচরণের জন্য ক্ষমা চান। সবকিছু ঠিকঠাক করে অল্পদিনের মধ্যেই বিয়ের আশ্বাস দিয়ে সেই রাতে তার বাসায় থাকতে চান। পরদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তাকে ধর্ষণ করে কাউকে কিছু না বলে পালিয়ে যান রিয়াদ। পরদিন পাওনা টাকার জন্য মোহাম্মদপুরের বাসায় গেলে বাসার দারোয়ান দিয়ে তাকে তাড়িয়ে দেন রিয়াদ। ঘটনার পর তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে যান ওই নারী। তাদের কাছে প্রতিকার চাইলে কোনো সহযোগিতা করেনি। পরে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করলে সবাই ধর্ষণ মামলা না করার পরামর্শ দিলে তিনি দেরিতে মামলাটি করেন।

সর্বশেষ খবর