রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ভাঙন বাড়ছেই, নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ

প্রতিদিন ডেস্ক

ভাঙন বাড়ছেই, নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ

লালমনিরহাটে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে

বাড়ছে নদী ভাঙন। বাড়ছে হাহাকার। ধারাবাহিক ভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। ভাঙনকবলিতরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। তাদের ঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। দুর্বিষহ, মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার পাঁচটি উপজেলায় তিস্তা নদীর গর্ভে ৪২টি ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। পরিবারগুলো বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। এ বছরের কয়েক দফা বন্যা ও পাঁচ উপজেলার ২০টি পয়েন্টে তিস্তা নদীর ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিলীন হয়েছে ঘরবাড়ি, মসজিদ, মাদরাসা, কবরস্থান, ফসলি জমি, স্কুলসহ বিভিন্ন স্মৃতিবিজড়িত স্থাপনা। সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে প্রায় হাজারো পরিবার। লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, দিঘলটারি, কালমাটি,  চোংগাডারা, গোকুণ্ডা, মোগলহাট আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী, পাটিকাপাড়া, সিন্দুর্না, গড্ডিমারী ও পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রামসহ জেলার প্রায় ১০টি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। ভাঙন থেকে রক্ষা পায়নি বসতভিটা, গাছপালা, ফসলি জমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সপ্তম দফায় তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় তিন দিন ধরে বন্যার পর কমতে শুরু করেছে পানি। বন্যাকবলিত এলাকায় এখনো কোনো ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেনি। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। তিস্তাপারের বন্যাকবলিত জাহানারা বলেন, দুই দিন ধইরা পানির নিচে ডুবে আছি। এখনো সরকার থেকে সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের চোংগাডারা গ্রামের শফিকুল মিয়া বলেন, তিন দিন ধরে বন্যার পানিতে কষ্ট ভোগ করলাম। এখন নদীর পানি নেমে যাচ্ছে, তবে ভাঙনের আতঙ্কে পড়েছি।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, তিস্তার পানি কমার পাশাপাশি নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, বন্যাকবলিত মানুষের তালিকা করা হয়েছে। খুব দ্রুত খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হবে। যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন তাদের পুনর্বাসন করা হবে। কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামের তিস্তা নদীতে গত কয়েক দিন ধরে তীব্র নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। মাত্র চার দিনেই তিস্তা নদীর প্রবল ভাঙনে জেলার উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের ৩টি গ্রামের মানুষের প্রায় আড়াই শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বিলীন হয়ে গেছে কমিউনিটি ক্লিনিক, দুটি মসজিদ, একটি মন্দির, ঈদগাহ মাঠ, বজরা পশ্চিমপাড়া দাখিল মাদরাসা, পুরাতন বজরা বাজার ও একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাঙনকবলিতদের অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে। উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা ভাঙনকবলিতদের পাশে দাঁড়াননি বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। উলিপুরের বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম কালপানি বজরা, কালপানি বজরা ও সাতালস্কর গ্রামে গত এক মাস নদী ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করেছে। এসব এলাকার হাজার হাজার মানুুষ এখন নিঃস্ব। তাদের ঘরবাড়ি জায়গা জমি নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। ওই এলাকার উত্তরে জজমিয়ার বাড়ি থেকে দক্ষিণে রোস্তম মৌলভীর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যেভাবে নদী ভাঙছে তাতে ভাঙনকবলিতরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এরই মধ্যে গত চার দিনে আকস্মিক ভাঙনের তীব্রতায় প্রায় আড়াই শতাধিক বাড়িঘর, ৫০০ বিঘা ফসলি জমি, গাছপালা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার, মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহ মাঠসহ অনেক স্থাপনাও নদীগর্র্ভে চলে গেছে। এক রাতেই ওই এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিক ও অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি মুহূর্তের মধ্যেই নদী গ্রাস করে নেয়। ভাঙনকবলিত এলাকায় দ্রুত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ জানান এলাকাবাসী। বজরা পশ্চিমপাড়া দাখিল মাদরাসার সুপার মৌলভী রেফাকাত হোসেন জানান, হঠাৎ করে তিস্তা নদীর প্রবল ভাঙনে মাদরাসার অর্ধেক নদীতে চলে গেছে। প্রতিষ্ঠানটির অবশিষ্ট অংশ যে  কোনো সময় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কালপানি বজরা এলাকার মোজাম্মেল হক (৬৫) জানান, তিন দিন থাকি এটে (খোলা মাঠে) পড়ি আছি। উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল কুমার জানান, ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের ভাঙনকবলিতদের দ্রুত তালিকা করতে বলা হয়েছে। তালিকা পেলেই ভাঙনকবলিতদের সহযোগিতা শুরু করা হবে।

সর্বশেষ খবর