দেশের চিকিৎসা গবেষণার মানোন্নয়নে সরকারি অর্থায়নে দেড় হাজার কোটি টাকার বঙ্গমাতা ন্যাশনাল মলিকিউলার রিসার্চ সেন্টার প্রকল্প হাতে নিয়েছিল সরকার। কিন্তু ছয় বছরে রাজধানীর মহাখালীতে নির্ধারিত জায়গায় গবেষণাগারের নির্মাণকাজই শুরু হয়নি। অথচ কেনা হয়েছে ১৫ কোটি টাকার ১২৯টি যন্ত্র। ছয় বছরে ছয় প্রকল্প পরিচালক বদল হলেও এখনো গবেষণাগারের জায়গা দখলমুক্ত করতে পারেনি স্বাস্থ্য বিভাগ। জানা গেছে, দেশে আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরিতে ২০১৮ সালে অনুমোদন পায় বঙ্গমাতা ন্যাশনাল সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার রিসার্চ সেন্টার প্রকল্প। বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) অধীনে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের কাজ ২০১৯ সালে শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের জুনে। এরপরে কয়েক দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরে নেওয়া হয়। কিন্তু এখনো গবেষণাগারের জায়গা দখলমুক্ত করার কাজই শুরু হয়নি। কাগজে থাকা ১৬ তলা সেই গবেষণাগারের জায়গায় মহাখালী সাততলা বস্তির সারি সারি ঘর। প্রকল্পের অগ্রগতির চেয়ে আগের প্রকল্প পরিচালকদের মনোযোগ বেশি ছিল যন্ত্রপাতি কেনাকাটায়। নির্মাণকাজ শুরু না হলেও থেমে থাকেনি কেনাকাটা। মহাখালীর বিএমআরসি ভবনের অষ্টম তলায় ১৪ কোটি ৭২ লাখ টাকায় বানানো হয়েছে অন্তর্বর্তী গবেষণাগার। বিএমআরসির ২৮১তম সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে গবেষণাগারের সাতটি ইউনিটে ১২৯টি যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। ইউনিটগুলোর মধ্যে রয়েছে- সেলকালচার ফ্যাসেলিটি ইউনিট, মলিকিউলার বায়োলজি (ডিএনএ, আরএনএ) ইউনিট, মলিকিউলার বায়োলজি (প্রোটিন) ইউনিট, অ্যানালাইটিক্যাল ল্যাবরেটরি ইউনিট, হিসটোপ্যাথোলজি ইউনিট, অ্যাডভান্স ফ্যাসেলিটি ইউনিট, মাইক্রোবায়োলজি ইউনিট। এ পর্যন্ত গবেষণা হয়েছে মাত্র দুটি। ২০২৩ সালের জুনের পর থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে গবেষণাগারের মূল্যবান যন্ত্রপাতি।
এ গবেষণাগার চালু করে প্রকল্পকে এগিয়ে নিতে নতুন করে উদ্যোগ নিচ্ছে বিএমআরসি। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েবা আক্তার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কিছু জিনিস আগে থেকে হয়ে এসেছে। রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে আগে থেকে অনেক যন্ত্রপাতি কিনে রাখা ছিল। এগুলো তো নষ্ট করলে জনগণের ক্ষতি। এজন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই যন্ত্রপাতিগুলোকে সচল করে ব্যবহার উপযোগী করে ল্যাব চালু করা হবে। এজন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে। এই ল্যাবে প্রকল্প পরিচালক ছাড়া আর কোনো জনবল ছিল না। এজন্য কাজ পরিচালনার মতো প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। ল্যাব সচল করে এটাকে কাজে লাগানোর জন্য গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখানে গবেষণা করার ব্যাপারে উৎসাহিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’ বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েবা আক্তার বলেন, ‘গবেষণাগারের জন্য আগের প্রকল্প পরিচালকরা অনেকগুলো যন্ত্রপাতি কিনেছিল। এগুলো তো নষ্ট করলে জনগণের ক্ষতি। এজন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই যন্ত্রপাতিগুলোকে সচল করে ব্যবহার উপযোগী করে ল্যাব চালু করার। এজন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই গবেষণাগারে প্রকল্প পরিচালক ছাড়া আর কোনো জনবল ছিল না। এজন্য কাজ পরিচালনার মতো প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। ল্যাব সচল করে এটাকে কাজে লাগানোর জন্য গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখানে গবেষণা করার ব্যাপারে উৎসাহিত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’ বিএমআরসি সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা জীবপ্রযুক্তি বিষয়ক আন্তর্জাতিক মানের সব সুযোগসুবিধা সংবলিত একটি গবেষণাগার তৈরির জন্য নেওয়া হয়েছিল এ প্রকল্প। এই গবেষণাগারে বায়োটেকনোলজি এবং মলিকিউলার বায়োলজি ব্যবহার করে সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের প্যাটার্ন নির্ণয়ের সক্ষমতা তৈরির পরিকল্পনা ছিল। এতে করে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা বিষয়ক গবেষণার মাধ্যমে দেশ বিদেশে পরিচিতি লাভ করার উদ্দেশে নেওয়া হয়েছিল এ প্রকল্প। কিন্তু শুধু যন্ত্রপাতি কেনাকাটার বেড়াজালে ঝুলে গেছে এ প্রকল্প।
এ ব্যাপারে চিকিৎসাবিজ্ঞানী শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, ‘গবেষণাগারের নির্মাণ কাজ এগিয়ে নিয়ে, জনবল নিয়োগ দিয়ে তারপর যন্ত্রপাতি কেনাকাটা করা উচিত ছিল। এখন যদি জনবল নিয়োগ দিয়ে গবেষণাগার চালু না করা হয়, তাহলে এসব যন্ত্র গলারকাঁটা হয়ে উঠবে। ভূমি অধিগ্রহণ না করে, অবকাঠামো নির্মাণ না করে যন্ত্র কেনার ঘটনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আগেও ঘটেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন গবেষণাগার চালুর উদ্যোগ নিতে প্রকল্প প্রস্তাবনাকে পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে পরিকল্পনা যাচাইবাছাই করে প্রকল্প যতদ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে হবে।’