পিনাক-৬ লঞ্চের মালিক আবু বকর সিদ্দিক কালুকে (৬৪) আজ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জুলহাস ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী ৬নং আদালতে আবেদন করেন। অপরদিকে, আসামি পক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিলসহ জামিনের আবেদন করেন। আমলী ৬ এর বিচারক মো. হারুন-অর-রশীদ উভয়পক্ষের দরখাস্তসহ রিমান্ড শুনানির জন্য আগামী ১৮ আগস্ট সোমবার দিন ধার্য্য রেখে তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন। আদালত থেকে রিমান্ড পেলে মামলার সঠিক তদন্তের স্বার্থে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসেন মজুমদার।
উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট ৩ শতাধিক যাত্রী নিয়ে মুন্সীগঞ্জে লৌহজং উপজেলার মাওয়া এলাকায় মাঝপদ্মায় ডুবে যায় পিনাক-৬ নামের লঞ্চটি। এ ঘটনায় ১০৪ জন জীবিত উদ্ধার হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে ৪৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করে ২৭ জনকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয এবং ২১ জনকে বেওয়ারিশ হিসেবে শিবচর পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছে অনেকে। তাদের মধ্যে সরকারের হাতে ৬১ জনের একটি তালিকা রয়েছে।
ঘটনার একদিন পর গত ৫ আগস্ট মাওয়া নৌপরিবহন পরিদর্শক (টিআই) জাহাঙ্গীর হোসেন ভূইয়া বাদী হয়ে পিনাকের মালিক আবু বকর সিদ্দিক কালুসহ ৬ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর কালু পলাতক থাকে। ঘটনার পর থেকে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তার অবস্থান নিশ্চিত করে র্যাবের গোয়েন্দারা। পরিশেষে বুধবার রাত ৩টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ এলাকার হাউজিং সোসাইটির একটি বাসা থেকে তাকে আটক করে র্যাব-৭ ও র্যাব-১১ এর যৌথ একটি অভিযান দল। পরে তাকে ঢাকায় র্যাবের সদর দপ্তরে নিয়ে এসে প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদ করা হয়। বুধবার রাতে তাকে লৌহজং পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। র্যাবের সদর দপ্তরে তিনি র্যাবের কাছে লঞ্চটি আনফিট এবং অন্যায়ভাবে অনুমোদন নেওয়ার কথাসহ ভিন্ন অনিয়মের কথা স্বীকার করলেও বৃহস্পতিবার আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের দেখে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবী করেন। পুলিশ হেফাজতে থেকে এ সময় তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন তার কোন দোষ নাই। তার লঞ্চের সব কাগজপত্র সঠিক আছে। দুর্ঘটনার দিন তার লঞ্চে মাত্র একশ' বিশজন যাত্রী ছিলো বলেও দাবি করেন তিনি।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, সেদিন কাওড়াকান্দি এবং কাঠালবাড়ি লঞ্চ ঘাটে যে সমস্ত সরকারি কর্তৃপক্ষ ছিল যারা লঞ্চের পরিদর্শন করেন তাদের কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আমার বিরুদ্ধে কেন এত ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও অনেক কথা বলতে থাকেন। এ সময় কর্তব্যরত পুলিশ তাকে বাধা দিয়ে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ভ্যানে তোলে।
এদিকে, একইদিনে আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুভাষ নন্দী, রিমান্ড বাতিলপূর্বক আসামির জামিনের আবেদন করেন। সরকার পক্ষের রিমান্ড আবেদন এবং আসামি পক্ষের জামিনের আবেদন উভয় দরখাস্ত শুনানির জন্য আগামী ১৮ আগস্ট দিন ধার্য্য রাখেন।