ধর্ষণের উদ্দেশ্যে নয়, একান্তে সময় কাটাতে বাসায় আনুশকাকে ডেকেছিল বলে গণমাধ্যম বরাবর পাঠানো খোলা চিঠিতে অভিযুক্ত দিহানের মা দাবি করেছেন। তিনি এ ঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন জানিয়ে সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। ডিএমপির রমনা বিভাগের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে জানা গেছে, রাজধানীর ধানমন্ডির মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নূর আমিনের সঙ্গে ফারদিন ইফতেখার দিহানের আরও দুই মাস আগে থেকে সম্পর্ক ছিল। তবে এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। হাসপাতালের দেওয়া বয়সের ওপর ভিত্তি করে নিহতের বয়স প্রাথমিকভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এদিকে, ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা গতকাল এ হত্যা মামলায় ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক আসাদুজ্জামানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। আবেদনে বলা হয়, ‘এ মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ঘটনাস্থল থেকে নিহত স্কুলছাত্রীর ওড়না, সালোয়ার, কামিজ, বিছানার চাদর, বালিশের কাপড় জব্দ করা হয়েছে। জব্দ করা এ আলামতে ডিএনএর উপাদান বিদ্যমান আছে কিনা তা পরীক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন।’ গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কলাবাগানের একটি বাসায় আনুশকার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা মো. আল আমিন বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় হত্যা মামলা করেন। দিহানকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
দিহানের মায়ের খোলা চিঠি :
গত ৭ জানুয়ারি আমার বাসায় আমার ছেলে দিহান ও ওর বান্ধবী অরনা আমিনের ঘটনায় আমি হতবাক। একজন মা ও নারী হিসেবে এ ধরনের ঘটনা মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর। গত দুদিন আমি কোনো সংবাদমাধ্যমে কথা বলিনি। কারণ, আমি পুরো ঘটনা বোঝার চেষ্টা করেছি। দিহানের বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আমার ছেলের ধর্ষণ এবং হত্যার উদ্দেশ্য ছিল কি না, তা মা হিসেবে জানার চেষ্টা করেছি। একজন নারী হিসেবে কোনো কিশোরীর অসম্মান হোক বা ধর্ষিত হোক- কখনো চাই না।
কিন্তু মেয়েটির ইচ্ছায় শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল কিনা এবং একমাত্র শারীরিক সম্পর্কের কারণেই রক্তক্ষরণ ও মৃত্যু হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে পুলিশ প্রশাসনের ওপর আমি বিশ্বাস রাখতে চাই এবং বিচার বিভাগের ওপর আস্থা রাখতে চাই। বিচারের আগে আমার ছেলেকে ধর্ষক বা হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত না করার জন্য সমাজের সবার প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
মামলায় ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ :
আদালত প্রতিবেদক জানান, আনুশকা নূর আমিন ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা এ নির্দেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক আসাদুজ্জামান আদালতে আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, এ মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ঘটনাস্থল থেকে নিহত স্কুলছাত্রীর ওড়না, সালোয়ার, কামিজ, বিছানার চাদর, বালিশের কাপড় জব্দ করা হয়েছে। জব্দ করা এ আলামতে ডিএনএর উপাদান বিদ্যমান আছে কিনা তা পরীক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন। এ ছাড়া নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে জব্দ করা মালামাল চিফ ডিএনএ এনালিস্ট ফরেনসিক, ডিএনএ ল্যাবরেটরি অব বাংলাদেশ পুলিশ ও সিআইডির পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া ডিএনএ পরীক্ষার জন্য মামলার একমাত্র হাজতি আসামি ইফতেখার ফারদিন দিহানেরও নমুনা সংগ্রহ করা প্রয়োজন। শুনানি শেষে বিচারক তদন্ত কর্মকর্তাকে ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি দেন।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল