সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভ্যাট নিবন্ধিত অ্যাসেম্বলিং ফ্যাক্টরির জন্য এসির যন্ত্রাংশ আমদানিতে ডিউটি বৈষম্যের নিরসন চাই

এম লুৎফর রহমান

ভ্যাট নিবন্ধিত অ্যাসেম্বলিং ফ্যাক্টরির জন্য এসির যন্ত্রাংশ আমদানিতে ডিউটি বৈষম্যের নিরসন চাই

ভ্যাট কমপ্লায়েন্স কমপ্রেসার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি ছাড়া কোনো ভ্যাট নিবন্ধিত এয়ারকন্ডিশন সংযোজনকারী কোম্পানি এসির খুচরা  যন্ত্রাংশ আমদানি করতে ১৫৪% ডিউটি পরিশোধ করতে হচ্ছে। যা মুক্তবাণিজ্যের ক্ষেত্রে এয়ারকন্ডিশনের আমদানি মূল্য অসহনীয় হয়ে পড়েছে। অথচ ২০২১-২২ সালে ভ্যাট নিবন্ধিত এয়ারকন্ডিশনার সংযোজনকারী ফ্যাক্টরির জন্য এই এয়ারকন্ডিশনের যন্ত্রাংশ আমদানিতে ডিউটির পরিমাণ ছিল ৮৪%। যাদের কমপ্রেসার তৈরির কারখানা নাই, তাদের যন্ত্রাংশ আমদানিতে কাস্টমস ডিউটি ১৫৪% হওয়ায় ভ্যাট নিবন্ধিত এয়ারকন্ডিশনার সংযোজনকারীগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে কোটি কোটি টাকা খরচে গড়ে ওঠা ফ্যাক্টরির মালিকসহ কর্মহীন হয়ে পড়েন কয়েক লাখ শ্রমিক। কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এসব কোম্পানি চালু রাখা প্রয়োজন। তাই আসছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে দেশের সব এসি অ্যাসেম্বলিং ফ্যাক্টরিগুলোকে আগের মতো ৮৪% কাস্টমস ডিউটিতে এয়ারকন্ডিশনের খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। ৫% কাস্টমস ডিউটিতে কমপ্রেসার আমদানির অনুমতিসহ প্রতিটি আইটেমের কাস্টমস ডিউটিতে আগের মতো করে বন্ধ হয়ে যাওয়া ফ্যাক্টরিগুলো চালু করে বেকার হয়ে যাওয়া লোকগুলোর কর্মসংস্থান করবে এ দাবি।  আশা করছি সরকারপ্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা বিষয়টি বিবেচনা করবেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এয়ারকন্ডিশনারের কমপ্রেসার ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের কোনো ফ্যাক্টরি নাই। তাই কমপ্লায়েন্স কমপ্রেসার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি ছাড়া এসির যন্ত্রাংশ আমদানি করলে ১৫৪% কাস্টমস ডিউটি পরিশোধ করতে হবে মর্মে নির্দেশনা প্রদান করেছে। এনবিআরের এ নির্দেশনার ফলে যাদের কমপ্রেসার তৈরির কারখানা নাই, তাদের ব্যবসাবাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, যেসব কোম্পানির কমপ্রেসার তৈরির কারখানা আছে, তাদের তো আর কমপ্রেসার আমদানি করার প্রয়োজন নেই। তারা নিজেদের প্রয়োজন মতো নিজেরাই কমপ্রেসার উৎপাদন করে এসি বাজারজাত করতে পারে। কিন্তু আসলে বাংলাদেশে এয়ারকন্ডিশনের কমপ্রেসার ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের কোনো ফ্যাক্টরি নাই। শুধু একটি প্রতিষ্ঠান ফ্রিজের। আমার মতো ছোট ছোট  কোম্পানি, যাদের কমপ্রেসার উৎপাদনের কারখানা স্থাপনের সক্ষমতা এবং অর্থ কোনোটাই নাই, তাদের জন্য ব্যবসা করা কঠিন হয়ে গেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একটি মাত্র আদেশে। আমার জানা মতে, দেশে একটি মাত্র কোম্পানি আছে, যারা ফ্রিজের ছোট ছোট কমপ্রেসার তৈরি করে। কিন্তু সব মডেলের ফ্রিজের কমপ্রেসার তৈরি করে না, সামান্য কিছু কমপ্রেসার তৈরি করে। ভ্যাট কমপ্লায়েন্স কমপ্রেসার ফ্যাক্টরি ছাড়া কেউ এসির খুচরা আমদানি করলে ১৫৪% ডিউটি পরিশোধ করতে হবে। এনবিআরের এমন নির্দেশনার কারণে আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে কোনো যন্ত্রাংশ  আমদানি করতে না পারায় শ্রমিক-কর্মচারীদের চাকরি থেকে বিদায় করে দিতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের অবগতির জন্য বলতে চাই, ভ্যাট কমপ্লায়েন্স কমপ্রেসার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি যদি দেশে কমপ্রেসার তৈরিই করে, তাহলে তাদের তো আমদানি করার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এয়ারকন্ডিশনের কমপ্রেসার কিন্তু আমার মতো যাদের কমপ্রেসার তৈরির কারখানা নাই তারাই এয়ারকন্ডিশনের কমপ্রেসারসহ সব ধরনের কাঁচামাল আমদানির পর দেশে সংযোজন করে বাজারজাত করছে। তাই আমাদের বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ করছি। আমরা যারা এসি অ্যাসেম্বলিং করি, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) থেকে আমাদের বিভিন্ন ধরনের সহায়তা করেছে। আমরা ৮৪ শতাংশ ভ্যাট ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করে আসছিলাম। এই ভ্যাট বর্তমানে ১৫৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আমাদের ওপর জুলুম ও অন্যায় করা হচ্ছে। বাংলাদেশে যেহেতু এখনো এসির কমপ্রেসার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি নাই, তাই এ ধরনের বিধান বাতিল অথবা প্রত্যাহার করা হোক। কারণ একটি মাত্র ফ্যাক্টরি ফ্রিজের কিছু কমপ্রেসার তৈরি করে। তাহলে এসির কমপ্রেসারের বেলায় কেন এ ধরনের নিয়ম বহাল রয়েছে। হওয়ার কথা ছিল যার কমপ্রেসার ফ্যাক্টরি নাই, সে-ই কমপ্রেসার আমদানি করতে পারবে। কিন্তু হয়েছে উল্টোটা। যে কমপ্রেসার উৎপাদন করছে, তাকেই আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। জটিলতা শুধু কমপ্রেসার ম্যানুফ্যাকচারিং ছাড়া যেসব এয়ারকন্ডিশনার ও ফ্রিজ ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাক্টরি আছে সবার প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে।

লেখক : চেয়ারম্যান, সুপ্রিম এয়ারকন্ডিশনিং কোম্পানি

সর্বশেষ খবর