আটলান্টিকের এপাড় আমেরিকাতেও ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের ঢেউ লেগেছে। সুদূর এ প্রবাস থেকে ট্যুইটার, ফেসবুক, স্কাইপে চলছে নির্বাচনী প্রচারণা। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশি মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন নিয়ে তুমুল আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক চলছে।
প্রসঙ্গত: ২২ এপ্রিল বুধবার পর্যন্ত টানা ৩দিন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং জাতিসংঘ সদর দফতরের প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকায় রেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা স্থান পায়। বুধবার জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেনি ডুজারিক বলেছেন, 'বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মটরকেডে হামলার বিষয়ে বেশ ক'টি প্রশ্ন পেয়েছি। বাংলাদেশের সর্বশেষ পরিস্থিতির আলোকেও অনেকে জানতে চেয়েছেন। সে সব প্রসঙ্গে আমরা অবহিত হয়েছি যে, দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ ওইসব অপকর্মের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছেন।'
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন পুনরায় সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আপিল করেছেন যে, নিরাপদ এবং ভয়হীন পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণার মাধ্যমেই কেবলমাত্র স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমুলক এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সম্ভব। ২২ এপ্রিল স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যারি হার্ফ আগের দিনের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেছেন, 'নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকলকেই দায়িত্বশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে।'
আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা গত এক সপ্তাহে নিউইয়র্ক, নিউজার্সী, ম্যাসেচুসেটস, ওয়াশিংটন মেট্রো, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, মিশিগান, ইলিনয় প্রভৃতি স্থানে ডজনখানেক সভায় মিলিত হয়ে দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এ সময় প্রার্থীর জন্যে তহবিল গঠনের কথাও জানানো হয়। নিজ নিজ পরিবারের সদস্য এবং ঘনিষ্ঠজনদের টেলিফোনে ভোট কেন্দ্রে যাবার আহবান জানানো হচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
সভাগুলোতে বলা হয়, এ নির্বাচনের ফলাফল হবে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে পাড়ি জমানোর অবলম্বন, তাই যে কোন মূল্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। বক্তারা অবশ্য সকল ধরনের সহিংসতা পরিহার করার জন্যে সংশ্লিষ্টদের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।
বক্তারা উল্লেখ করেছেন যে, এর আগে সিটি ও পৌরসভা নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানে সরকারের যে ভূমিকা ছিল তা যেন অটুট থাকে আসন্ন নির্বাচনেও। নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের এক নিবাচনী সমাবেশে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাসির টেলিফোনে বক্তব্য প্রদানের সময় প্রবাসীদের অকুন্ঠ সমর্থন প্রত্যাশা করেন। ২০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে নাসিরের সাথে টেলি সংলাপের সমন্বয় করেন আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেন মিঠু। এ সময় ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের উত্তর ও দক্ষিণের প্রার্থীদের জন্যেও ঢাকার প্রবাসীদের ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার আহবান জানান নূরনবী কমান্ডার, জাকারিয়া চৌধুরী, শাহীন ইবনে দিলওয়ার, কমরউদ্দিন আহমদ, নজরুল ইসলাম বাবুল, এ বি সিদ্দিক প্রমুখ। এর আগে নিউইয়র্কে বসবাসরত চট্টগ্রামের প্রবাসীরা নাসিরের সমর্থনে আরেকটি সভায় মিলিত হয়ে নির্বাচনী তহবিলে অর্থ প্রেরণসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। এ সময় জানানো হয়, নিউইয়র্কে ৩০ হাজারের অধিক চট্টগ্রামবাসী রয়েছেন। সকলেই যদি দেশে তার স্বজনদের ভোট প্রদানে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন তাহলে দলীয় প্রার্থীর বিজয় কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এ সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কম্যুনিটি লিডার এন আমিন, আব্দুল কাদের মিয়া, ইসমত হক খোকন, শিবলী সাদিক শিবলু প্রমুখ।
২১ এপ্রিল মঙ্গলবার রাতে বস্টনে চট্রগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নাগরিক কমিটির প্রার্থী আ জ ম নাছির সমর্থক গোষ্ঠীর উদ্যোগে এক নির্বাচনী প্রচারণা সভায় একই অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, চট্টগ্রামবাসী আর অযোগ্য, অদক্ষ মেয়রের অধীনে থাকতে চায় না। নগরীর দুর্গন্ধময় পরিবেশ, পানিবন্দী অবস্থা ও অরাজক পরিস্থিতি থেকে নগরবাসীর মুক্তির সময় এসেছে। এতে নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ চৌধুরী, ইকবাল ইউসুফ প্রমুখ।
বিএনপির সমর্থকরাও বসে নেই। তারাও দলীয় প্রার্থীর জন্যে একইভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে। তবে তাদের নির্বাচনী সভাগুলো পরিণত হচ্ছে ঢাকায় খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলার প্রতিবাদ সমাবেশে। ৪ খন্ডে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির উদ্যোগে পৃথক পৃথকভাবে এসব সভা হয়েছে নিউইয়র্ক এবং ফ্লোরিডায়। সর্বশেষ ২১ এপ্রিল রাতে নিউইয়র্কেও জ্যাকসন হাইটসের নির্বাচনী প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি নেতা গিয়াস আহমেদ। বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, আলহাজ্ব সোলায়মান ভূইয়া, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক এম এ বাতিন, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রদলের সভাপতি আতাউর রহমান আতা, যুক্তরাষ্ট্র জাসাসের সভাপতি আবু তাহের, নিউইয়র্ক সিটি বিএনপি’র সভাপতি আলহাজ্ব মাহফুজুল মাওলা নান্নু, ব্রুকলীন বিএনপি’র সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ ও সেক্রেটারী জাহাঙ্গীর সোরাওয়ার্দী, বিএনপি নেতা আবুল বাশার, মো. সেলিম প্রমুখ।
রাজধানী ঢাকায় নির্বাচনী প্রচারকালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম জিয়ার ওপর অতর্কিত হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বক্তারা।
এর আগে ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিত আরেক নির্বাচনী সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ সম্রাট। এতে আরও বক্তব্য রাখেন মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল। সেখানেও দলীয় প্রার্থীদের বিজয় ত্বরান্বিত করতে আত্মীয়-স্বজনকে টেলিফোনে অনুরোধ জানানো হচ্ছে বলে জানানো হয়।
বিডি-প্রতিদিন/২৩ এপ্রিল ২০১৫/ এস আহমেদ