ভয়-ভীতি-হুমকি-ধমকি আমলে না নিয়ে নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে ডেমক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন-দৌড়ে অবতীর্ণ হয়েছেন বাংলাদেশি মোহাম্মদ তৈয়বুর রহমান হারুন। কুইন্সে বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যামাইকার হিলসাইড এলাকা নিয়ে গঠিত ডিস্ট্রিক্ট-২৪ এর বর্তমান কাউন্সিলম্যান ররী ল্যাঙ্কম্যানের বিরুদ্ধে একমাত্র প্রার্থী হচ্ছেন হারুন। দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১২ সেপ্টেম্বর। এ উপলক্ষে ১৪ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে মানিকগঞ্জের সন্তান হারুন বলেন, ‘৫১৭৬৫ ভোটারের মধ্যে ৪ সহস্রাধিক বাংলাদেশিসহ এশিয়ান হলেন ১৩ হাজার। আর মুসলমান ভোটারের সংখ্যা হচ্ছে ৪ হাজার।’
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও হারুনের নির্বাচনী প্রচার কমিটির অন্যতম নেতা ফখরুল আলম বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন পেতে সর্বোচ্চ ৫ হাজার ভোট দরকার। আশা করছি তার চেয়েও বেশি ভোট পাবেন আমাদের প্রার্থী। সে লক্ষ্যে আমরা ভোটারদের কাছে যাচ্ছি।’
‘তবে আগে থেকেই যারা মূলধারার রাজনীতিতে জড়িত রয়েছেন, তাদের অনেকেই প্রকাশ্যে কাজ করতে সাহস পাচ্ছেন না। কী এক অজ্ঞাত কারণে তারা ভীত-সন্ত্রস্ত। নেপথ্যে বর্তমান কাউন্সিলম্যানের কাছে থেকে পাওয়া সুযোগ-সুবিধাও হতে পারে’-উল্লেখ করেন ফখরুল আলম।
এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ তৈয়বুর রহমান হারুন অভিযোগ করেন, ‘নির্বাচনী কাজে অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন এক নারী সংগঠককে আমি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছিলাম। নানা ধরনের ভয় দেখিয়ে তাকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।’ ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এমন জঘন্য তৎপরতায় ডেমক্র্যাটিক পার্টির নেতাদেরও মদদ রয়েছে। কারণ, অনেকেই অভিবাসীদের নেতৃত্বে দেখতে আগ্রহী নয়’-উল্লেখ করেন হারুন।
হারুন বলেন, ‘ব্যালটে পরাজয়ের আশংকা থেকেই কেউ কেউ আমাকেও প্রচ্ছন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যেতে। কিন্তু জীবন থাকতে আমি তা করবো না। অভিবাসী সমাজের অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নে এই নির্বাচনকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি।'
প্রত্যেক বাংলাদেশি-আমেরিকানকে ভোট কেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত করার জন্য সংবাদ সম্মেলন থেকে মিডিয়ার আন্তরিক সহায়তা কামনা করা হয়।
মোহাম্মদ হানিফের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে হারুনের নির্বাচনী প্রচার কমিটির ম্যানেজার ডোনাল্ড ক্যাপলেন অভিযোগ করেন, ‘বর্তমান কাউন্সিলম্যান ররী ল্যাঙ্কম্যান বিভিন্ন সংস্থাকে বিপুল অর্থ দিচ্ছেন। অর্থের লোভে পড়ে অনেকেই নিজ কমিউনিটির যোগ্য প্রার্থীর কথাও আমলে নিতে চাচ্ছেন না। তবে সকল মুসলমান এবং সকল বাংলাদেশি জোট বাধলে কেউই ঠেকাতে পারবে না হারুনের বিজয়।’
প্রসঙ্গত, এই নির্বাচনী এলাকার ৮০ শতাংশেরও অধিক ভোটার হলেন ডেমক্র্যাট। তাই দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে যিনি টিকে যাবেন, তিনিই মূলত বিজয়ী বলে মনে করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, ‘আমরা ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিতকল্পে হারুনকে জয়ী করতে চাই। হারুন হচ্ছেন অভিবাসী সমাজের কণ্ঠস্বর। এখন সময় হচ্ছে পরিবর্তনের। কারণ, অভিবাসীরাই এই সিটিকে গড়ছে, সিটিকে বিশ্বের রাজধানীতে পরিণত করেছে। অভিবাসীদের মেধা আর শ্রমেই নিউইয়র্ক আজ সারাবিশ্বে কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে’।
সংবাদ সম্মেলনের মঞ্চে আরো ছিলেন ডেমক্র্যাটিক পার্টির সংগঠক এডভোকেট মুজিবর রহমান, তাজুল ইসলাম, শাহনেওাজ, আজহারুল হক মিলন প্রমুখ।
সিটি কাউন্সিলের ৩২ নম্বর ডিস্ট্রিক্ট থেকেও হেলাল শেখ নামে আরেক বাংলাদেশি ডেমক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়নের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন। একইদিনে তার জন্যও ভোট প্রার্থনা করা হয় বাংলাদেশি-আমেরিকানদের কাছে। হেলাল শেখের সমর্থনেও মাঠে নেমেছেন অনেক বাংলাদেশি। তারাও তহবিল গড়ছেন প্রচারণা জোরদারকল্পে।
নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের ৫১টি আসনেই নির্বাচন হবে আসছে নভেম্বরের ৭ তারিখ মঙ্গলবার।
নিউইয়র্ক সিটিতে দুই লাখের অধিক বাংলাদেশি বসবাস করলেও এখন পর্যন্ত একজনও সিটি কাউন্সিল কিংবা অঙ্গরাজ্য পার্লামেন্টে জয়ী হতে পারেননি। ৯৫ শতাংশ বাংলাদেশি-আমেরিকানই ডেমক্র্যাট হওয়া সত্বেও কংগ্রেসের মনোনয়নও পাচ্ছেন না শুধুমাত্র অনৈক্যের কারণে।
বিডি-প্রতিদিন/১৫ জুলাই, ২০১৭/মাহবুব