চলমান অভিযান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এ ধরনের অপকর্মে মদদদাতা ও ক্ষেত্র প্রস্তুতকারিদেরকেও চিহ্নিত করতে হবে। রাজনীতিকদের সাথে আমলাসহ মধ্যস্বত্ত্বভোগীদেরকেও কাঠগড়ায় নিতে হবে। অন্যথায় শেখ হাসিনার দুর্নীতি ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তপনা-বিরোধী এ অভিযান অতীতের সামরিক শাসকদের মতোই লোক দেখানো হবে। এমন অভিমত পোষণ করেছেন যুক্তরাষ্টে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার বাংলাদেশিরা।
অপরদিকে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিতরা অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন চলমান দুর্নীতি-বিরোধী অভিযানের প্রতি। এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের অঙ্গিকার অনুযায়ী-এমন অভিমতও পোষণ করেছেন অনেকে। বাংলাদেশে চলমান অভিযানের ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে প্রবাসীদের অভিমত এখানে উপস্থাপন করা হলো।
আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সমিতির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং উইসকনসিন ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের চেয়ারপার্সন হিসেবে অবসরগ্রহণকারি এমিরিটাস অধ্যাপক ড. জিল্লুর আর খান (৮১) বলেন, দুনিয়াব্যাপিই দুর্নীতি রয়েছে। বাংলাদেশেও রয়েছে। তবে এটি নিয়ন্ত্রণে শেখ হাসিনা যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তাকে আমি সবসময়ই সমর্থন দিচ্ছি। কারণ, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে উন্নয়ন দৃশ্যমান হবে না। মানুষ স্বস্তি পাবে না। এটি বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে খুবই অসম্ভব একটি ব্যাপার ছিল। কিন্তু তা লাগাম টেনে ধরেছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। এটি তার পক্ষেই সম্ভব। লোভ-লালসার ঊর্দ্ধে থাকা নেতার পক্ষেই দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে সফলতা অর্জন সম্ভব। ইতিমধ্যেই আমেরিকান রাজনীতি ও প্রশাসন নিয়ে কর্মরতদের মধ্যেও বিষয়টি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
ফ্লোরিডায় বসবাসরত প্রবীন এই অধ্যাপক আরও বলেন, দুর্নীতি চিরতরে নির্মূল করা কোন দেশের পক্ষে সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশেও হবে না। তবে তা নিয়ন্ত্রণ করা গেলেই প্রত্যাশিত উন্নয়ন দ্রুত দৃশ্যমান হবে। আর এর মধ্যদিয়েই শেখ হাসিনার ভিশন অনুযায়ী বাংলাদেশ উন্নতবিশ্বের তালিকাভুক্ত হবে। এজন্যে সকলকে দলমতের ঊর্দ্ধে উঠতে হবে।
৫১ দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতি এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারিদের সমন্বয়ে গঠিত ‘বাই-নাশনাল চেম্বার অব কমার্স’র নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট আতিকুর রহমান শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এটি আরো আগে শুরু করা উচিত ছিল। তাহলে বাংলাদেশ এবং দলগতভাবে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা অটুট থাকতো। তবে বিলম্বে হলেও আমি শেখ হাসিনার এ সাহসী পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। আশা করছি, তা সকলের জন্যেই প্রযোজ্য হবে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং আমেরিকার মধ্যে মেধাভিত্তিক স্টুডেন্ট আদান-প্রদানের দায়িত্ব পালনকারি ‘আমেরিকান ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ’র প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. গোলাম মাতব্বর বলেন, গত ১৭ অক্টোবর মেডিসনে ‘সাম্প্রতিক বাংলাদেশ এবং নিকট ভবিষ্যত’ শীর্ষক এক কনফারেন্সে অংশগ্রহণকারি শিক্ষক-গবেষকরা বাংলাদেশের উজ্জ্বল সম্ভাবনার নানা প্রসঙ্গ উপস্থাপন করেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এগিয়ে চলার অবিস্মরণীয় অধ্যায় নিয়েও তারা কথা বলেছেন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সূচকে জীবন-মানের উন্নতির স্বীকৃতি থাকলেও অভ্যন্তরীণভাবে তা থমকে দাঁড়াচ্ছে বলে অভিমত পোষণ করেছেন। দলীয় এবং ক্ষমতার উচ্চআসনে থাকাদের সংযোগ কাজে লাগিয়ে হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি এবং সরকারী আমলাদের কাড়ি কাড়ি অর্থ কামানোর পর তা আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে পাচারের তথ্যও উপস্থাপিত হয়। এমন পরিস্থিতির অবসানে প্রধানমন্ত্রীর এ অভিযানকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে। এটি যেন থেমে না যায়।
ওয়াশিংটন ডিসিতে খ্যাতনামা একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অর্থনীতিদি ও লেখক ড. ফাইজুল ইসলাম বলেন, ‘এখনই মন্তব্য/মতামত প্রকাশের সময় হয়নি। কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, এর আগেও অনেকে এমন ঘোষণা দিয়ে অভিযান শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে নিজেরাই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়েছেন। আমি কিছু বলার অপেক্ষা করতে চাই সামনের বছরের টিআইবি রিপোর্ট, ফ্রিডম হাউজের রিপোর্টসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জরিপ পর্যন্ত। আমি নিশ্চিত হতে চাই যে, বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথ সুগম হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রতিনিয়ম মিডিয়াকে আক্রমণ করছেন। তারপরও থেমে নেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা। এর মধ্য নিয়ে অনেক রহস্য উদঘাটিত হচ্ছে। সে ধরনের পরিবেশ কি বাংলাদেশ রয়েছে?’ ‘মোট কথা অন্যদের মতো আমি এ অভিযানের ব্যাপারে উচ্ছ্বসিত নই।
যুক্তরাষ্ট্র সেনসাস ব্যুরোর উচ্চপদে দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে অবসরগ্রহণকারি ড. খন্দকার মনসুর বলেন, জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার এ উদ্যোগে সাধারণ প্রবাসীদের ন্যায় আমিও অভিভূত। এটি অব্যাহত রাখতে হবে এবং এখন যারা চিহ্নিত হচ্ছে তাদের গডফাদারকেও ধরতে হবে। তা নাহলে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি ড. মনসুর আরো উল্লেখ করেছেন, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের বাইরেও কিছু লোক ক্যাসিনো বাণিজ্যসহ টেণ্ডার বাণিজ্যে কাড়ি কাড়ি টাকা কামিয়ে তা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন। এক্ষেত্রে আমলারাও জড়িত। তাদেরকেও শক্তহাতে প্রতিহত করতে হবে সুশাসনের স্বার্থে।
আমেরিকা বাংলাদেশ এলায়েন্সের চেয়ারপার্সন ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম শেখ হাসিনার এ পদক্ষেপকে অভিনন্দিত করে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ফিরেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, মাথা ঘুরে দাঁড়িয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। দুর্নীতি মুক্তও হবে গোটাবিশ্বকে অবাক করে দিয়ে। আর এভাবেই জাতিরজনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা দৃশ্যমান হয়ে উঠবে। এজন্যে সকল প্রবাসীকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে।
ইন্টারন্যাশনাল সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউট’র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল ইউসুফ বলেন, অনৈতিক কাজে লিপ্তদের চিহ্নিত করার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগসহ সকল সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনকে পুনর্গঠিত করার এ প্রক্রিয়া সফল হলে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথ বেয়ে সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ রচনার প্রত্যাশা ত্বরান্বিত হবে। দলে এবং প্রশাসনে এমন শুদ্ধি অভিযানের প্রশংসা এখন আমেরিকাতেও শুনতে পাচ্ছি। এ অভিযান সুষ্ঠুভাবে অব্যাহত থাকুক-এ কামনা সকলের।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা