সালটা ১৯৮৪। একটি সংখ্যা, একটি শব্দ। আর ৩৫ বছরের পুঞ্জিভুত আবেগ। ইসলামপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, হাটুভাংগা, রায়পুরা, নরসিংদী থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল আনুমানিক ৫০ (পঞ্চাশ) জন। কালের পরিক্রমায়, প্রয়োজনের তাগিদে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া সেই সকল বন্ধুদের ফেসবুক মেসেঞ্জার অ্যাপসের কল্যাণে ফিরে পেল ৩৫ বছর পর। ফিরে পেল স্কুল জীবনের হারানো স্মৃতি আর সোনালী অতীত এবং গ্রুপের নাম দেওয়া হলো "ইসলামপুর-৮৪"।
বন্ধুত্ব জীবনের অমর বন্ধন যা কখনোই হারিয়ে যায় না। ছাত্রজীবনে এবং কর্মজীবনে অনেক বন্ধু আসে কিন্তু শৈশবের বন্ধুদের কখনোই ভুলা যায় না। ছোটবেলায় প্রথম যে মানুষগুলো চার দেয়ালের বাইরের পৃথিবীতে সবচেয়ে আপন হয় তারা হলো স্কুলের বন্ধুরা। সেই শৈশবকে ফিরে আনার নামই “ইসলামপুর-৮৪”। এই গ্রুপে ৩০ জন বন্ধুকে খুঁজে পাওয়া গেছে। বাকি আরও ২০ জন বন্ধুকে খোঁজা হচ্ছে।
ইসলামপুর-৮৪ ব্যাচের মধ্যে অনেকেই এখন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আমলা, ব্যবসায়ী এবং চাকুরীজীবী। কেউ কেউ আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইন্ডিয়া, মালয়েশিয়া, কাম্বোডিয়া এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসরত এবং প্রতিষ্ঠিত। অনেকে আবার বাংলাদেশে সম্মানজনকভাবে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত। তাদের সামগ্রিক আন্তরিকতা এবং সহযোগিতায়ই এই গ্রুপের অগ্রগতি।
২০১৮ সালে কাম্বোডিয়া প্রবাসী হুমায়ুন কবিরের মাধ্যমে এই গ্রুপের সৃষ্টি। তিনি কাম্বোডিয়াতে ২৮ বছর যাবৎ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে বসবাসরত। তিনি যৌথভাবে আবার কাম্বোডিয়া এবং বাংলাদেশের সিটিজেন। তিনিই এই গ্রুপের উদ্যোক্তা।
বিভিন্ন ফেসবুক পেজে বন্ধুদের আইডি থেকে সহপাঠীদের খুঁজে বের করে ইসলামপুর-৮৪ নাম দিয়ে মেসেঞ্জার গ্রুপ খোলেন এবং সব সহপাঠীদের খুঁজে খুঁজে বের করে করে এই গ্রুপে অ্যাড করে সবাইকে নিবিড় সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ করেন। তাকে যে প্রথম উৎসাহ যুগিয়েছিল এবং যার সঙ্গে ৩৫ বছর পর মেসেঞ্জারের মাধ্যমে প্রথম যোগাযোগ হয়েছিল সেই সৌভাগ্যবান সহপাঠী হলো রফিক, বাশার, ঝিনুক, নারগিস এবং নাজ। তারপর হুমায়ুন কবিরের মধ্যে আগ্রহ জাগে যে করেই হউক হারানো বন্ধুদের খুঁজে বের করতেই হবে।
সেই প্রচেষ্টায় হাতে হাত মেলাতে এগিয়ে আসেন বন্ধুবর মাসুদ, জাহাঙ্গীর, মুজিবুর, আপেল, হাবিব, জাকির, মনিরুজ্জামান, সেলিম, আবু আহম্মেদ, জিল্লুর, শাহজউদ্দিন, আতাউর, জলিল, অহিদ, মুজাম্মেল, মাঈন উদ্দীন, কাদের, জালাল, সফিক, লিপি, খোকা, উকিল, মুরাদ, মাসেদুল, আতিক এবং আরও অনেকে। তাদের গভীর ভালোবাসায় এবং অনুপ্রেরণায় হুমায়ুন কবির কাম্বোডিয়া থেকে বাংলাদেশে এসে ঢাকাস্থ হাংরি ডাক রেস্টুরেন্টে ২৬ জন ক্লাসমেটদের উপস্থিতিতে ৩০-৩৫ বছর পর এক আবেগের মিলনমেলায় প্রথম পুনর্মিলনীর মাধ্যমে এই গ্রুপের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
গ্রুপের উদ্দেশ্য হলো সব সহপাঠীদের একই ফ্রেমে নিয়ে আসা। একে অপরের বিপদে আপদে পাশে থেকে সুখে দুঃখের সাথী হওয়া। সেবামূলক কাজ করা। ইসলামপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের যে শিক্ষকদের অবদানে সবাই আজ প্রতিষ্ঠিত, উনাদের মূল্যায়ন করা, পাশাপাশি বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে যথা সম্ভব শরিক হয়ে সহযোগিতা করা।
নির্বিঘ্নে নিরবচ্ছিন্নভাবে দৃঢ় মনোবল বজায় রেখে লেখাপড়া চালিয়ে নেয়ার জন্য গরিব এবং মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে থেকে তাদের উৎসাহিত করা এবং সর্বোপরি স্কুলের পাশে থাকা। ইতোমধ্যে স্বল্প পরিসরে ইসলামপুর-৮৪ গ্রুপের মাধ্যমে যে কাজগুলো হয়েছে তন্মধ্য, শিক্ষকদের নিয়ে বিদ্যালয়ে ইফতার মাহফিলের আয়োজনের মাধ্যমে আর্শিবাদ নিয়ে সামাজিকভাবে প্রথম গ্রুপের যাত্রা শুরু করেছে।
এরপর স্কুলে বৃক্ষরোপন কর্মসূচি আয়োজনের মাধ্যমে স্কুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা এবং সবুজ পরিবেশের উপর দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। ২য় পূণর্মিলনীর মাধ্যমে বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং স্কুল কমিটিরদের নিয়ে গ্রুপের ভবিষ্যৎ প্ল্যান এবং করণীয় সম্পর্কে ধারণা প্রদান করাসহ সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।
পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যে একটা সুন্দর অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষার্থীদের সম্বর্ধনা দেয়াসহ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষকদের সম্মাননা প্রদান এবং পাশাপাশি দিনব্যাপী গরিব এবং অসহায় মানুষের জন্য ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হবে। তাছাড়া দরিদ্র এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানসহ সর্বোপরি অসহায়দের (?) পাশে দাঁড়ানো এবং সার্বিক সহায়তা করাই এই গ্রুপের মূল উদ্দেশ্য।
গ্রুপকে আর্থিকভাবে মজবুত করার জন্য যা যা প্রয়োজন, গ্রুপের মেম্বাররা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবে। সেবামূলক কাজের মাধ্যমে সবার মঙ্গল কামনা করাই এই গ্রুপের প্রধান উদেশ্য।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত