নির্ধারিত কাজের শেষে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর বাথা আসেন কুমিল্লার ফারুক হোসেন। জামাল কমার্শিয়াল মার্কেটের পূর্ব পাশের মসজিদে ইশার নামাজ আদায় করে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে আটক করে পুলিশ। বৈধ ইকামার (রেসিডেন্ট পারমিট) কথা বলা হলেও তাতে কর্ণপাত করেনি পুলিশ। ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সফর জেলে।
শুধু ফারুক নয়, সেদিন জামাল কমার্শিয়াল মার্কেট থেকে আটক করা হয় ৭৫ জন বিদেশি নাগরিককে। তাদের মধ্যে ৪০ জন বাংলাদেশি ছিলেন বলে জানা গেছে। তাদের অধিকাংশেরই বৈধ ইকামা ছিল। বৈধ ইকামা থাকার পরেও আটকের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
জানা গেছে, সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিনই আটক হচ্ছেন শতশত বাংলাদেশি। আর আটকদের অনেকেরই ছিল বৈধ ইকামা। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্যমতে চলতি বছর পুলিশের কাছে আটক হয়ে দেশে ফিরেছেন ১৬ হাজার বাংলাদেশি।
এদিকে আটকরা অভিযোগ করে বলেন, 'বৈধ ইকামা থাকার পরও পুলিশের হাতে আটক হলে দূতাবাস কোনো সহায়তা করে না'। সফর জেলে আটক বাংলাদেশিদের সাথে কথা বলে তাদেরকে সহযোগিতা করার সুযোগ থাকলেও সেটা করছে না দূতাবাস। যোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
এই বিষয়ে জানতে রবিবার দুপুরে ফোন করা হলে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ এবং শ্রম কল্যাণ কাউন্সিলর মেহেদী হাসান ফোন রিসিভ করেননি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, আটক করার পর তাদের নামে সৌদিতে নিষিদ্ধ এমন কাজে জড়িত থাকার মামলা দেয়া হয়। যেমন সবজি বিক্রি, রাস্তায় পানি বিক্রি, হকারী ও ভিক্ষাবৃত্তি। আর তখন তাদেরকে কোনো রকম আইনি সহায়তা দেয়া সম্ভব হয় না। বাধ্য হয়ে তাদেরকে দ্রুত দেশে যেতে বিশেষ ট্রাভেলপাস ইস্যু করতে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রিয়াদ আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা বলেন, বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। এই ব্যাপারে বিভিন্ন সময় দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি কিন্তু তারা উল্টো আমাদেরকে এই বিষয়ে কথা না বলতে চাপ সৃষ্টি করে থাকে। গতমাসে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী সৌদি আরবে আসলে আমরা তার সাথে দেখা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, দেশ থেকে সরকারের কেউ আসলে দূতাবাস কর্মকর্তারা তাদের কিছু ভালো কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। কিন্তু প্রবাসীদের দুঃখ-দুর্দশার কথা বলেন না কমিউনিটির কেউ বলতে চাইলেও তাদেরকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়। দূতাবাসে কাজের গতি ফিরিয়ে আনতে কর্মকর্তাদের নিয়মিতি বদলী নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে দাবি জানান এই নেতা।
ভোক্তভোগীদের স্বজনরা বলছেন এই বিষয়ে দূতাবাসের পদক্ষেপ নেয়া দরকার। যাদের বৈধ ইকামা আছে তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠানো ঠেকাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো উচিৎ সেই সাথে কথিত ফ্রি ভিসায় যাতে কেউ প্রবাসে পাড়ি না জমান সে ব্যাপারে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর তাগিদ দেন।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম