কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা সতর্ক করেছেন।
গত এক বছর ধরেই অর্থনীতির প্রায় সকল ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নজর থাকা দরকার।
কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’-এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ‘শওগাত আলী সাগর লাইভে’ অন্টারিও প্রভিন্সের বাজেট নিয়ে আলোচনায় তারা এই মত প্রকাশ করেন।
স্থানীয় সময় বুধবার (৩১ মার্চ) রাতে ’অন্টারিওর বাজেট: কি আছে কি নেই’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় করোনাকালীন অর্থনীতি এবং বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন অর্থনীতিবিদ, অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শিশির শাহনওয়াজ, ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা শেখ সাদ আলম এবং টরন্টো ভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান উইমেন রাইটস অর্গানইজেশনের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা জাহাঙ্গীর।
কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির উপর করোনার প্রভাব তুলে ধরে অর্থনীতিবিদ, অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শিশির শাহন্ওয়াজ বলেন, 'কোভিড-১৯ সরকারের জন্য একটি ভয়াবহ ভূমিকম্প। এটি একদিকে যেমন সরকারের ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে অন্যদিকে রাজস্ব আয় কমিয়ে দিয়েছে। সরকারের দেওয়া প্রনোদনা মানুষের হাতে কিছুটা অর্থের যোগান দিলেও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড গতিশীল না হওয়া পর্যন্ত মানুষের উদ্বেগ কমবে না।'
অন্টারিও সরকারের বাজেটের উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'নতুন কোনো বিপর্যয় দেখা না নিলে মানুষ এবং অর্থনীতি বাঁচানোর যে পরিকল্পনা নিয়ে সরকার এই বাজেট ঘোষণা করেছে সেটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। তবে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।' তিনি সরকারের ভোক্তা মন্ত্রণালয়কে এই ব্যাপারে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন।
অর্থনীতিবিদ ড.শিশির শাহন্ওয়াজ স্বাস্থ্যখাত নিয়ে ফেডারেল এবং প্রভিন্সিয়াল সরকারের মধ্যে কাজের সমন্বয় বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে বলেন, 'প্রভিন্সিয়াল সরকারের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বড় ধরনের বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালগুলোতে কি পরিমাণ বিনিয়োগ হচ্ছে, নতুন হাসপাতাল স্থাপন হচ্ছে কী না এই বিষয়গুলোর অনুপস্থিত। সরকার এখনো কোভিড মোকাবেলার মধ্যেই স্বাস্থ্যখাতের বিনিয়োগকে সীমিত রেখেছে। কিন্তু কোভিডের বাইরেও স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন রয়েছে।'
তিনি আশা প্রকাশ করেন, নাগরিকদের করোনার টিকা দেওয়া শেষ হলেই অর্থনীতি সচল হয়ে উঠবে এবং স্বল্পতম সময়ে কানাডা, আমেরিকা এবং মেক্সিকোর অর্থনীতি নতুন রুপে ঘুরে দাঁড়াবে।
উদ্যোক্তা এবং আমদানিকারক সাদ আলম শেখ আশংকা প্রকাশ করে বলেন, 'মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করতে আন্তর্জাতিক পরিসরে বড় ধরনের একটি রাজনীতি বা কারসাজি চলছে বলে মনে হয়। এখন পৃথিবীর কোথাও খাদ্যসামগ্রীর দুষ্প্রাপ্যতা তৈরি হবে না। কিন্তু পণ্য সরবরাহে নানা উপায়ে বাধাগ্রস্থ করে সরবরাহকে নিয়ন্ত্রিত করার চেষ্টা হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, 'কোভিডের শুরুতে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর ঘাটতি দেখা দিলেও পরে সেগুলো আমরা কাটিয়ে উঠেছি। কিন্তু নতুন করে আমদানি করা পণ্যের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। ফলে শিগগিরই বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করতে পারে।'
আলোচনায় অংশ নিয়ে সাউথ এশিয়ান উইমেন রাইটস অর্গানইজেশনের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা জাহাঙ্গীর কোভিডে কানাডায় নারীদের উপর অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়ার চালচ্চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'কোভিডের ছোবল কানাডায় বসবাসরত দক্ষিণ এশিয়ার বিশেষ করে বাংলাদেশি নারীদের পেছন থেকে আরও পেছনে ফেলে দিয়েছে। সরকার কোভিডকালীন নানা ধরনের প্রণোদনা দিলেও তাদের অনেকেই শর্ত পূরণ করতে না পারায় সেই সুবিধা পাননি।'
তিনি আরও বলেন, 'ফেডারেল-প্রভিন্সিয়াল সকল পর্যায়ের সরকারই স্বীকার করছেন যে নারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কিন্তু বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে এই স্বীকার করা ছাড়া সেই অর্থে মেয়েদের এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য সুনির্দষ্ট পদক্ষেপের কথা বলা হচ্ছে না। বাজেটে মহিলাদের রি-ট্রেইনিং-এর জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু রি-ট্রেইনিং-এর মাধ্যমে দক্ষতা বাড়ানোর পর তাদের জন্য পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান কোথায় হবে তার নির্দেশনা বাজেটে নেই। তিনি বাজেটে ন্যূনতম মজুরী এবং শ্রমিকদের সিক লিভ বাড়ানোর পদক্ষেপ না নেওয়ার সমালোচনা করেন।'
’নতুনদেশ’-এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর তার আলোচনায় বাজেটসহ ফেডারেল এবং প্রবিন্সিয়াল সরকারের নানা সিদ্ধান্ত, পদক্ষেপ নিয়ে কমিউনিটিতে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'কানাডার নাগরিক হিসেবে সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপের ব্যাপারেই আমাদের মতামত তুলে ধরা দরকার।'
বিডি প্রতিদিন/ অন্তরা কবির