সোমবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ভাইরাল কাহিনি

‘আমি বললাম, আপনার গানের যে ভয়ানক গলা, এই গলা নিয়ে কয়েক দিন রেওয়াজ করলে আশা করা যায় বিল্ডিংয়ের লোকজন বাড়িওয়ালার কাছে লিখিত প্রতিবাদলিপি পাঠাবে...’

ইকবাল খন্দকার

ভাইরাল কাহিনি

আমার এক বন্ধু বলল, আমি আগে আগে জন্মগ্রহণ করে ফেলেছি। এত আগে জন্মগ্রহণ না করে যদি বর্তমানে জন্মগ্রহণ করতাম, তাহলে উত্তরে বৈচিত্র্য আনতে পারতাম। আমি বললাম, উত্তরে বৈচিত্র্য আনতে পারতি মানে? তুই কি ঢাকা উত্তরের কথা বলছিস নাকি? বন্ধু এবার আমাকে রামঝাড়ি মারল। বলল, আহাম্মকের মতো কথা বলিস কেন? আমি উত্তরে বৈচিত্র্য আনার কথা বলেছি। এখানে উত্তর মানে প্রশ্নের জবাব। ঢাকা উত্তর না। আমি এবার গভীর আগ্রহ প্রকাশ করলাম, তাহলে উত্তরে কী ধরনের বৈচিত্র্য আনার কথা বলছিস? বন্ধু বলল, ছোটবেলায় আমাদের শিক্ষকরা যখন ক্লাসরুমে জিজ্ঞেস করতেন তোমরা বড় হয়ে কী হতে চাও? তখন আমরা কী করতাম? সবাই একই টাইপের উত্তর দিতাম। ডাক্তার হতে চাই, ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। কিন্তু আমাদের জন্মটা এ সময়ে হলে যেটা হতো, এই একঘেঁয়ে উত্তরের বাইরে গিয়ে বলতে পারতাম, স্যার, আমি বড় হয়ে ভাইরাল হতে চাই।

আমার এক ছোটভাই ফোন করে বলল, ভাই, আপনি তো জানেন আমি একটা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু ব্যবসাটা ভালো চলছে না। এ জন্য চিন্তাভাবনা করেছি, ব্যবসা চেঞ্জ করব। সম্প্রতি ‘কাঁচাবাদাম’ নামে একটা গান ভাইরাল হয়েছে নিশ্চয়ই শুনেছেন। সবচেয়ে ভালো হতো যদি কাঁচাবাদামের ব্যবসা করতে পারতাম। কিন্তু একই জিনিস তো বারবার ভাইরাল হবে না। এ জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই টাইপেরই অন্য কিছুর ব্যবসা করব। কিন্তু কীসের ব্যবসা করা যায়, বুঝতে পারছি না। আমি বললাম, এত বোঝাবুঝির কিছু নেই। তুমি কাঁচাবাদামের সঙ্গে মিল রেখে কাঁচামরিচের ব্যবসা শুরু কর। ছোটভাই বলল, ভালো বুদ্ধি। তবে বেশি ঝাল লাগলে যাতে একটা সমাধান করা যায়, মানে ঝাল মুখ মিষ্টি বানানো যায়, এ জন্য কাঁচামরিচের সঙ্গে কাঁচাগোল্লার ব্যবস্থাও রাখি। মানে ‘কাঁচা’র মধ্যে থেকে যতটুকু যা করা যায় আর কি। আমি বললাম, ঠিক আছে, ‘কাঁচা’র মধ্যেই যেহেতু থাকতে চাচ্ছিস, বাসার কাপড়গুলোও কাঁচা হয়ে যায় যাতে। এতে ভাইরাল হতে না পারলেও বউয়ের কাছে অন্তত ভালো থাকতে পারবি।

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, মানুষ হুটহাট ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি এই যে চেষ্টা করি, ভাইরাল হতে পারি না। ভাইরাল হতে করণীয় কী? আমি বললাম, করণীয় কী, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। তবে পরীক্ষামূলকভাবে একটা কাজ করে দেখতে পারেন। আপনি তো দশ তলায় থাকেন, তাই না? ওঠা-নামা করেন লিফটে, তাই তো? প্রতিবেশী বললেন, যেহেতু দশ তলায় থাকি, অতএব লিফটে ওঠানামা করব, এটাই তো স্বাভাবিক। আমি বললাম, ‘স্বাভাবিক’ কাজ করলে জীবনেও ভাইরাল হতে পারবেন না। আপনাকে করতে হবে অস্বাভাবিক কাজ। কী, পারবেন করতে? প্রতিবেশী বললেন, পারব না মানে? অবশ্যই পারব। আমি বললাম, তাহলে আজকে থেকে দশ তলায় সিঁড়ি বেয়ে ওঠা যাবে না। উঠতে হবে দড়ি বেয়ে। তিন দিন ওঠেন, আশা করি ভাইরাল হয়ে যাবেন। প্রতিবেশী আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, ফালতু বুদ্ধি দেবেন না তো! যদি দড়ি ছিঁড়ে পড়ি, সেই দায় কে নেবে? আমি বললাম, দায় নেওয়ার কিছু নেই। দড়ি বেয়ে দশ তলায় ওঠানামা করতে গিয়ে যদি দড়ি ছিঁড়ে পড়েন, তাহলে তৎক্ষণাৎ ভাইরাল হয়ে যাবেন বলে আমার বিশ্বাস। এখনই ট্রাই করুন।

আমার এক ভাবি বললেন, আজকাল গানই বেশি ভাইরাল হচ্ছে। এ জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি গান শিখব। আপনি কী বলেন? আমি বললাম, আপনার গানের গলা সম্পর্কে আমি অবগত। যদি গান শিখতে যান বা নিয়মিত গান গাইতে যান, তাহলে ভাইরাল শিল্পী রানু মন্ডলের মতোই অবস্থা হতে পারে। ভাবি খুব খুশি হলেন। আমি বললাম, এত খুশি হওয়ার কিছু নেই। রানু মন্ডল রাস্তায় ঘুরে ঘুরে গান গাইতেন, নিশ্চয়ই জানেন? ভাবি কিছুটা আশঙ্কা নিয়ে বললেন, জি, জানি। তো? আমি বললাম, আপনার গানের যে ভয়ানক গলা, এই গলা নিয়ে কয়েক দিন রেওয়াজ করলে আশা করা যায় বিল্ডিংয়ের লোকজন বাড়িওয়ালার কাছে লিখিত প্রতিবাদলিপি পাঠাবে। আর বাড়িওয়ালা এসে আপনাকে সপরিবারে বের করে দেবে। তার মানে পরবর্তী বাসা খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত মাল-সামানাসহ আপনাকে রাস্তায়ই অবস্থান করতে হবে। আমি আমার কথাটা পুরোপুরি শেষ করতে পারলাম না। ভাবি চলে গেলেন। কে জানে, কোনো সংগীত প্রশিক্ষকের খোঁজে গেলেন কি না!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর