আমার এক বড় ভাই বললেন, ভাগ্য ভালো ছোটবেলায় প্রেসার ছিল না। তখন যদি এখনকার মতো হাইপ্রেসার থাকত তাহলে নিশ্চিত হার্টঅ্যাটাক করে বসে থাকতাম। তাহলে এবার বোঝ, তখন আমি কী পরিমাণ টেনশন করেছি। আমি বললাম, বুঝতে পেরেছি। কিন্তু এটা বুঝতে পারছি না ছোটবেলায় আপনি কী নিয়ে এত টেনশন করতেন, হাইপ্রেসার থাকলে যা হার্টঅ্যাটাকের কারণ হতে পারত! বড়ভাই বললেন, তখন তো টেনশন একটা জিনিস নিয়েই ছিল। সেটা হচ্ছে- রোল নম্বর। আর আমার রোল নম্বর বরাবরই শেষদিক থেকে প্রথম থাকত। আর এটা নিয়েই ছিল আমার গভীর টেনশন। এখন মনে হয় কি জানিস, শেষই ভালো। মানে শেষ দিক থেকে প্রথম হওয়াই ভালো। আমি বললাম, আপনার সঙ্গে আমি সহমত হতে পারলাম না। বড় ভাই বললেন, একটু চোখ কান খোলা রেখে চারপাশে তাকা। আশা করি খুব সহজেই সহমত হতে পারবি। আমি চোখ খোলা রাখার স্বার্থে চশমা খুলে পকেটে ঢুকিয়ে ফেললাম। আর কান খোলা রাখার স্বার্থে ইয়ারফোন খুলে ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেললাম। তারপর অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন সহমত হতে পারব।
আমার এক প্রতিবেশী বললেন, ‘শেষ ভালো’ নিয়ে আজকাল অনেক কথাই হচ্ছে। তবে আমি একটা কথা বিশ্বাস করি, শেষ ভালো যার, সব ভালো তার। আর কথাটা কিন্তু আমি এমনি এমনি বিশ্বাস করি না। কারণ আছে। আমি কারণটা জানতে চাইলাম। প্রতিবেশী বললেন, আমার বাসায় যতবার মেহমান আসে ততবারই আমি হয়রানির শিকার হই। কীভাবে হয়রানির শিকার হই, একটু বলি। মেহমান যারা আসে তারা সবাই কিন্তু বউয়ের পক্ষের। মানে শ্বশুরবাড়ির। তো তাদের জন্য আমার বউ হরেক পদের খাবার রান্না করে। আর তারা খায় গলা পর্যন্ত ভরে। সমস্যা হচ্ছে, আমাকে তাদের সঙ্গে বসতে দেওয়া হয় না। আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় তাদের খাবার পরিবেশনের। আমি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে খাবার পরিবেশন করতে করতে একসময় দেখি সব খাবার শেষ। বিশেষ করে শুরুর দিকে যেসব মজার মজার আইটেম থাকে সেগুলো শেষ। বাকি থাকে বল শেষদিকের এক-দুইটা আইটেম। আর এর মধ্যে কমন একটা আইটেম হচ্ছে- ডাল। পাতলা ডাল। আরও পরিষ্কারভাবে যদি বলি, মেহমানদের খানাপিনার পর আমাকে পাতলা ডাল দিয়ে খাওয়া শেষ করতে হয়। আমি বললাম, আপনি মনে হয় অপ্রাসঙ্গিক কথা বলছেন। নইলে শেষ ভালো যার সব ভালো তার প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে পাতলা ডালের প্রসঙ্গ টেনে আনবেন কেন? প্রতিবেশী বললেন, ভাইরে, আপনি আমাকে ভুল বুঝলেন। পাতলা ডালের প্রসঙ্গ আনলাম এ জন্য, যেহেতু পাতলা ডাল খানাপিনার শেষ আইটেম আর পাতলা ডাল রান্না যদি ভালো হয় মানে লবণ মরিচ হলুদ যদি ঠিকঠাক থাকে তাহলে আমার মতো অভাগা স্বামীদের খাওয়াটা ভালো হয় আরকি। নইলে পেট খালি থাকে। আর খালি পেটে গ্যাস জমে ভুটুরভাটুর শব্দ করে।
আমার এক ভাবি বললেন, ‘শেষ ভালো’ হওয়াটা আসলেই খুব জরুরি। নইলে লজ্জায় পড়তে হয়। যেমন লজ্জায় পড়েছিল আপনার ভাই। গতকালের ঘটনা। ঘটনা তো না, দুর্ঘটনা। আমি বললাম, একটু ব্যাপারটা শুনি। ভাবি বললেন, না, মানে আপনার ভাই শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারে না, আপনি তো জানেনই। তবু সে চেষ্টা করে। এই যেমন গতকালও একজনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে খুব চেষ্টা করছিল। প্রায় পার পেয়েও গিয়েছিল। কিন্তু শেষে গিয়ে খেলো ধরা। আমি জানতে চাইলাম কী ধরনের ধরা তিনি খেয়েছেন। ভাবি বললেন, আপনার ভাই এক মহিলার সঙ্গে ঠিকঠাকভাবেই শুদ্ধ ভাষায় কথা বলছিল। কিন্তু শেষ দিকে এসে বলে কী, আমাদের মনে রাখতে হবে, সব বিষয় নিয়ে ‘বক্কর চক্কর’ চলে না।