শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

আফ্রিকার গর্ব আল-কারাউইন

বিশ্বের প্রাচীনতম গ্রন্থাগার

সাহিত্য ডেস্ক

আফ্রিকার গর্ব আল-কারাউইন

বিশ্বের প্রাচীনতম গ্রন্থাগার আফ্রিকার মরক্কোতে অবস্থিত আল-কারাউইন। হাজার বছরের বেশি পুরাতন এ গ্রন্থাগার এখনো বিলিয়ে যাচ্ছে জ্ঞানের আলো। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই গ্রন্থাগারে ভিড় করতেন বিভিন্ন দেশ থেকে আগত জ্ঞানী-গুণী, পর্যটক ও ছাত্র-শিক্ষক। আল-কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগার। এখানে আছে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামী শিল্পকলা, ইতিহাস-ভূগোল, জ্যোতির্বিদ্যায় অগ্রগামী দেশ মরক্কোর অতীত সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য। ইসলামের প্রথম যুগের নানা পান্ডুলিপি পাওয়া যায় এ পাঠাগারে। এর মধ্যে আছে, নবম শতকের একটি আল-কোরআন এবং দশম শতকে লিখিত মুহাম্মদ (স.)-এর জীবনীর বিভিন্ন অংশ। এ ছাড়া চিকিৎসা বিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিজ্ঞানের ওপর বই আছে এখানে।

৮৫৯ সালে আরবের ধনী নারী ফাতেমা আল ফিহরির ব্যক্তিগত উদ্যোগে ফেজ নগরীর কারাউইন নামে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। সে বছরই মসজিদের আঙিনায় তিনি গড়ে তোলেন আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে আল-কারউইন বিশ্ববিদ্যালয় ও পাঠাগার। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৩৫৯ সাল পর্যন্ত একটানা চালু ছিল পাঠাগারটি। তবে বিভিন্ন সময়ের যুদ্ধে উপনিবেশবাদীদের দখল-বেদখলের ঘটনায় ফেজ শহর আঘাতপ্রাপ্ত হলেও আল-কারাউইন মোটামুটি অক্ষতই ছিল। কখনো কখনো বন্ধ থেকেছে বিশাল এ জ্ঞানের ভান্ডার। কয়েক প্রজন্ম ধরে পাঠাগারের রক্ষীরা এসব মূল্যবান তথ্য-উপাত্ত রেখেছেন তালাবদ্ধ। কিন্তু পাঠাগারের অবকাঠামোগত সমস্যা তৈরি হয়েছে প্রাকৃতিকভাবে। বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পাঠাগারে প্রবেশ করে নানা রকম ক্ষতি সাধিত হয়েছে। হঠাৎ করে আল-কারাউইনের পাটাতনের নিচ দিয়ে ধীরে ধীরে পানির স্রোত বইতে শুরু করে।

১৯১৩-৫৬ সাল পর্যন্ত ঔপনিবেশিক আমলে ফ্রান্স পৃথিবীর প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আরেকবার ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ও সনদ বিতরণ বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সব রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে। ১৯৫৬ সালে মরক্কো স্বাধীনতা লাভ করার পর কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়কে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেন বাদশা মুহাম্মদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত, পদার্থ, রসায়নসহ বিভিন্ন বিজ্ঞান বিভাগ ও আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট গড়ে তোলেন। ১৯৫৭ সালে খোলা হয় নারীশিক্ষার্থী বিভাগ। ১৯৬৩ সালে কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়কে মরক্কোর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সম্প্রতি আল-কারাউইন পাঠাগারকে বাঁচাতে নতুন পদক্ষেপ নেয় মরক্কোর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। পাঠাগারটিকে পুনরায় চালু করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে তারা নিয়োগ দেয় আজিজা চাউনি এবং তার স্থাপত্যদলকে। প্রকৌশলীরা ভবনের ভিত্তি পুনরায় স্থাপন করেছেন, সেখানে নতুন করে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা চালু করেছেন এবং ভবনের সবুজ রঙের ছাদের প্রতিটি টাইলস আগের মতো দৃষ্টিনন্দন রূপে তৈরি করেছেন।

সর্বশেষ খবর