শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ঔষধি গ্রামের গল্প

নাসিম উদ্দীন নাসিম

ঔষধি গ্রামের গল্প

নাটোরের খোলাবাড়িয়া গ্রামের কৃষক হাসান আলী ভূঁইয়া। তিনি তার আড়াই বিঘা জমিতে আট বছর ধরে অ্যালোভেরা চাষ করছেন। প্রতি বছর তার আড়াই বিঘা জমি থেকে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার অ্যালোভেরা পাতা বিক্রি হয়।

প্রতি মাসেই ২০ থেকে ২২ দিন পরপর গাছ থেকে কেটে অ্যালোভেরার পাতা বাজারে বিক্রি করা যায়। কিন্তু গত বছর করোনার কারণে তিনি কোনো পাতা বিক্রি করতে পারেননি। অ্যালোভেরার গাছ টিকিয়ে রাখতে প্রতি মাসেই পাতা কেটে গর্তে পুঁতে ফেলতে হয়েছে তাকে। সম্প্রতি জমিতে অ্যালোভেরার পরিচর্যার সময় তিনি বলেন, পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে অ্যালোভেরা গাছে স্প্রের মাধ্যমে চুন প্রয়োগ করছিলেন। তিনি জানান, প্রতি মাসেই ২০ থেকে ২২ দিন পর পর গাছ থেকে ২২ গাড়ি অ্যালোভেরার পাতা পাওয়া যায়। এক গাড়িতে সাড়ে ৭ মণ অ্যালোভেরার পাতা হয়। কিন্তু এ বছর বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় গাছে পাতা কম আসছে। এ জন্য পাতা কম উঠছে। বেশির ভাগ পাতা এখনো বড় হয়নি। এ জন্য দামও কম পাওয়া যাচ্ছে। আগে যেখানে এক গাড়ি অ্যালোভেরার পাতা ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হতো এখন সেখানে বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার থেকে ৫ হাজার ২০০ টাকায়। গত সপ্তাহে এই দামে বিক্রি করেছি। তবে দিন যত গড়াবে দাম তত বাড়বে বলে জানান তিনি। তখন পাতাও বেশি পাওয়া যাবে। এক বিঘা জমিতে বছরে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ মেট্রিক টন অ্যালোভেরার পাতা পাওয়া যায়।

ঔষধি গ্রামের এ রকম শত শত কৃষক যারা অ্যালোভেরা চাষ করেন তারা গত বছর করোনার কারণে প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে ক্ষতি কাটিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন তারা। প্রতিদিন দেশের বিভিন্নস্থানেও যাচ্ছে অ্যালোভেরাসহ বিভিন্ন ভেষজ ঔষধি পণ্য। কৃষকরা জানান, অ্যালোভেরার পাতা বর্ষাকালে বেশি পাওয়া যায়। তবে তখন পচনও ধরে বেশি। গাছ থেকে পাতা কাটার পর দুই একদিনের বেশি সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। তবে শুকনোকালে  অ্যালোভেরার পাতা এক সপ্তাহ পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রাখা যায়। পাতা সংরক্ষণের জন্য কৃষকরা সরকারের প্রতি হিমাগার স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন।

খোলাবাড়িয়া ঔষধি গ্রামের কৃষক মোস্তফা কামাল ২১ বিঘা জমিতে অ্যালোভেরার চাষাবাদ করেন। তিনি জানান, অ্যালোভেরার পাতা সংরক্ষণ করে রাখা কঠিন। সংরক্ষণের অভাবে অনেক পাতা নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু উপায় তো নেই এভাবে পাতা বিক্রি করা হয়। তবে আমার সব অ্যালোভেরার পাতা ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত তাইওয়ান ফুড কোম্পানি কিনে নেয়।

ঔষধি গ্রামে অ্যালোভেরার চাষাবাদ বেশি পরিমাণে হয়।

এ ছাড়া শিমুলমূল, অশ্বগন্ধা, তুলসীপাতা, বাসক, মিছরি দানা, কালোমেঘ, শতমূলসহ বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধি গাছের চাষাবাদ করেন কৃষকরা। খোলাবাড়িয়া গ্রামের সড়কের দুই পাশের জমিতে, বসতবাড়ির আঙিনায়, পুকুর পাড়ে প্রচুর ঔষধি গাছের চাষাবাদ হয়।

অ্যালোভেরার জন্য হিমাগার প্রয়োজন হলেও অন্যান্য ভেষজ ঔষধি গাছের জন্য হিমাগারের প্রয়োজন খুব একটা হয় না। তবে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে অভিযোগ করলেন চাষিরা।

খোলাবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আবদুল আলিম দুই বিঘা জমিতে শিমুল মূলের চাষাবাদ করেছেন। শিমুলমূল একটি জমিতে বছরে একবারই চাষাবাদ করা যায়। তিনি জানান, এক বিঘা জমিতে ৫০ থেকে ৬০ মণ শিমুলমূল উৎপাদন হয়। কাঁচা শিমুলমূল বিক্রি হয় ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা মণ আর শুকনো শিমুলমূল বিক্রি হয় ৪ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায়। এক বিঘাতে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর