শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভাগ্যবদলের লড়াইয়ে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

ভাগ্যবদলের লড়াইয়ে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ

গাজীপুরে তৃতীয় লিঙ্গের একদল মানুষ বেছে নিয়েছেন কৃষি ফসলের আবাদ। তাদের দাবি, মানুষ সুযোগ দিলে তারাও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে।

‘হিজড়া’ আমাদের সমাজে একটি পরিচিত শব্দ। ২০১৪ সালে সরকার বাংলাদেশের হিজড়া জনগোষ্ঠীকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে  স্বীকৃতি দিয়েছে। আর ২০১৯ সালে হিজড়ারা স্বতন্ত্র লিঙ্গীয় পরিচয়ে ভোটাধিকার লাভ করে। হিজড়ারা সাধারণত রাস্তাঘাটে, গণপরিবহনে, বাজার কিংবা বাসায় ঘুরে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নগদ অর্থ-সাহায্য প্রার্থনা করে। কোনো বাড়িতে নতুন শিশু জন্ম নিলে অভিভাবকদের কাছে তারা উপহার হিসেবে অর্থ-সামগ্রী দাবি করে। হিজড়াদের কিছু দল রয়েছে যারা গ্রামগঞ্জে পালাগানের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে। মূলত এরকম কিছু নির্দিষ্ট উপায়ে তারা জীবিকানির্বাহ করে, যা ঝুঁকিপূর্ণ এবং অনিশ্চয়তায় ঘেরা। রাস্তাঘাটে, বাজারে কিংবা বাসাবাড়িতে চাঁদা উত্তোলনকে অনেকেই অনৈতিক, বেআইনি কিংবা সন্ত্রাসমূলক কার্যক্রম হিসেবে দেখে। অনেক সময় এ নিয়ে ব্যবসায়ী বা গৃহস্থের সঙ্গে তাদের ঝগড়াও হয়। এ পেশা থেকে একদল হিজড়া মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তারা আর মানুষের কাছে চেয়ে ও জবরদস্তি করে টাকা নিতে চায় না। তারা পরিশ্রম করে সৎ পথে আয় করতে চায়। তাই গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী থানাধীন বাইমাইল এলাকার একদল হিজড়া বেছে নিয়েছে ভিন্ন পেশা। তারা এখন অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষসহ কৃষি ফসলের আবাদ করছে।

হিজড়ারা ও এলাকাবাসী জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী থানাধীন বাইমাইল বাঁশতলা এলাকায় ৩২ জনের একদল হিজড়া বসবাস করে। তারা ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছে। সমাজের বিত্তবান মানুষের কৃষিজমি বর্গা নিয়ে সেখানে নতুন করে তারা ফসলের আবাদ করছে। হিজড়ারা জানায়, ফয়সাল আহম্মেদ ও রমিজ উদ্দিন নামের দুই ব্যক্তি তাদের পরিত্যক্ত ১৩ বিঘা জমি হিজড়াদের কাছে বর্গা দিয়েছেন চাষবাদ করতে। এ জন্য তাদের কোনো টাকা-পয়সা দিতে হয়নি। সেখানে ১১ বিঘা জমিতে ধান চাষ এবং দুই বিঘা জমিতে সাথী ফসল পিঁয়াজ, রসুন, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, পুঁইশাক, ধনিয়াসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করেছে। এতে তাদের প্রথম বছর অনেক টাকা খরচ হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় আরও অনেক জমি পরিত্যক্ত রয়েছে। ওইসব জমির মালিকরা তাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে তারা আগামীতে আরও বড় আকারে ধানসহ কৃষি আবাদ করতে পারবে।

হিজড়াদের দাবি, বিত্তবানরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে তারা সমাজের অন্য মানুষের মতোই স্বাভাবিকভাবে চলতে পারবে।

সর্বশেষ খবর