শনিবার, ২৭ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বঙ্গবন্ধুকে  স্মরণ

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। একই সঙ্গে মুজিবশতবার্ষিকী উদ্যাপন করছে জাতি। সব সময়ই জাতির হৃদয়ে-মননে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মাতৃভূমি বাংলাদেশের মাটিতে মিশে আছেন জাতির জনক। বাঙালি জাতির স্বাধিকার অর্জনে তাঁর কীর্তি স্মরণ করে শেষ করা যাবে না। সবার জানা প্রয়োজন, কী সংগ্রামী ইতিহাসের পথ বেয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে জাতি পেয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশ। লাল-সবুজের পতাকা। জানা প্রয়োজন, জনকল্যাণে ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কী সংবিধান তিনি রচনা করেছিলেন। আজ এসব নিয়েই কিছু কথা বলছি।

ইতিহাস বলে বহু যুগ ধরে নানা নির্যাতন ও শোষণের মাঝেও পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, কংশ আর কুশিয়ারার যে জলস্রোত প্রবাহিত হয়েছে তার বুক চিরে এ দেশের সহস্র মাঝি-মাল্লা  যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী যে গান গেয়ে চলেছেন তার মধ্য দিয়ে বাংলার এক চিরন্তন রূপ ফুটে উঠেছে- ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী জননী।’ আর বাংলার এই রূপকে একটি সঠিক ধারায় প্রবাহিত করার জন্য সেদিন হক ভাসানী সোহরাওয়ার্দীর পাশাপাশি তরুণ অমিত তেজী নেতা শেখ মুজিবের নেতৃত্বে এই বাংলার আলপথ ধরে মানুষ স্লোগান দিয়েছে- ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা, মেঘনা, যমুনা।’ ‘তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি।’ সেই থেকে আমাদের জাতি-পরিচয় আমরা বাঙালি।

১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের জাতির জনক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর রাষ্ট্রভাষা-সংক্রান্ত ঘোষণার প্রতিবাদে বাঙালি তার মাতৃভাষার অধিকারের দাবিতে যে আন্দোলন শুরু করেছিল; সেই আন্দোলনের জের ধরেই পরবর্তীতে বায়ান্নর রক্তদান, চুয়ান্ন সালের সাধারণ নির্বাচন, বাষট্টি সালের শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন। সবশেষে ১৯৭১ সালে সংগঠিত হয় বাংলার মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের চূড়ান্ত যুদ্ধ, আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধ।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করেন। পাকিস্তানের রাজনীতির পট পরিবর্তিত হলে আইয়ুব খানের স্থলে ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান গণপরিষদ পাকিস্তানের জনগণের জন্য যে সংবিধান রচনা করেছিল ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে সেই সংবিধানের কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেন। ১৯৬২ সালে তিনি নিজেই এক শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খান বিদায় নেওয়ার প্রাক্কালে রচিত সংবিধান নিজেই বাতিল ঘোষণা করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইয়াহিয়া খান রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার বা এলএফওর অধীনে ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করেন। সেই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে নির্বাচিত হয়। পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি আসনে জয়লাভ করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।

১৯৫৪ ও ১৯৭০-এর নির্বাচনে যে সংগঠনটি বাংলার মানুষের আস্থা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছিল সেটি হলো আওয়ামী লীগ। সংগঠনটির জন্ম হয়েছিল ১৯৪৯ সালে ঢাকার ‘গোলাপবাগ’ বা ‘রোজ গার্ডেনে’। গোলাপবাগে যেদিন সংগঠনটি জন্মগ্রহণ করে সেদিনের বাগানে গোলাপের চেয়ে কাঁটার সংখ্যাই ছিল বেশি। সেদিন আওয়ামী বাগানের গোলাপ শেখ মুজিব ছিলেন কারা অন্তরালে বন্দী। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যাত্রা শুরু করে আওয়ামী-মুসলিম লীগ নামে। মাওলানা ভাসানী হলেন সভাপতি। আর টাঙ্গাইলের বিশিষ্ট নেতা জনাব সামসুল হক হলেন সাধারণ সম্পাদক। শেখ মুজিবকে দলটির এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছিল। ঢাকা বিশ¡বিদ্যালয়সহ সারা দেশের ছাত্রসমাজ ও আপামর জনসাধারণ যখন ভাষার জন্য লড়াই করছে তখন এর পেছন থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদকের মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে শেখ মুজিবকে দলটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য যে, শেখ মুজিব এ সময় একনাগারে দুই বছর তিন মাস (সেপ্টেম্বর ১৯৪৯ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২) কারাভোগ করেন। দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ১৯৫৩ সালের তিন জুলাই মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে পুরান ঢাকার মুকুল সিনেমা হলে দলের সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন। রিপোর্ট পেশকালে তিনি প্রচ্ছন্নভাবে ইঙ্গিত করেন যে, তিনি ব্যক্তিগত ভাবে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির পক্ষে, পরবর্তীতে মওলানা ভাসানীও একই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছিলেন।

১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও বাঙালি জাতীয়তাবাদী ধারার প্রচার প্রচারণা ছিল তীক্ষ। ফলশ্রুতিতে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করে। ক্রমান¡য়ে বাঙালি তার স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সংগঠিত হয় ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন ও ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান। ৭০ সালের নির্বাচনের পূর্বে ইয়াহিয়া খানের এলএফও প্রদত্ত একটি অন্যতম শর্ত ছিল নির্বাচনের পরে গণপ্রতিনিধিরা ১২০ দিনের মধ্যে পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়ন করবেন। কিন্তু যখন নির্বাচনের ফলাফল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালিদের অনুকূলে যায় তখন ইয়াহিয়া খানসহ পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দ দিশাহারা হয়ে ওঠে। কালক্ষেপণের মধ্য দিয়ে ইয়াহিয়া খান ও ভুট্টো বাঙালিদের দমনের জন্য তাদের  বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে।

এ কথা সত্য যে, ৭০-এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল পাকিস্তানভিত্তিক রাজনীতির আলোকে। বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত ছয়দফা থেকে এটি স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই বাংলার স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে আসছিলেন। কঠিন সময়েও বিচক্ষণ নেতা বঙ্গবন্ধু এমন কোনো আচরণ করেননি বা বিবৃতি দেননি যা থেকে তাঁকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে পাকিস্তানিরা বিশে¡র সামনে তুলে ধরতে পারে। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের প্রথম অংশে তিনি পাকিস্তানভিত্তিক রাজনীতির পটভূমি ব্যাখ্যা করেন এবং ভাষণের শেষাংশে তাঁর মূল বক্তব্য পেশ করেন। তিনি বলেন- ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই।’ অর্থাৎ তিনি স্পষ্ট করে দিলেন যে, পাকিস্তানের ক্ষমতার মসনদ তাঁর লক্ষ্য না। তাঁর লক্ষ্য হচ্ছে এই বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। পাকিস্তানিদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন- ‘৭ কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবাতে পারবে না।’ তারপর তিনি তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি কার সঙ্গে কেমন আচরণ করবে তার নির্দেশনা দেন। বাংলার অভ্যন্তরীণ লেনদেন ও প্রশাসন কীভাবে চলবে তার নির্দেশনা দিয়ে চূড়ান্ত কথাটি বলেন- ‘মনে রাখবা রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবো। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো, ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’ 

ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হলো। বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ ১৯৭০-এর প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। সারা বাংলায় একযোগে মহান নেতার নির্দেশে যার যা ছিল তাই নিয়ে দেশমাতৃকার মুক্তির লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশের আপামর জনতা। ১০ এপ্রিল মুজিবনগরে বাংলার নির্বাচিত প্রতিনিধিরা একত্রিত হয়ে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র তৈরি করেন। সেখানে উল্লেখ ছিল- ‘In order to ensure for the people of Bangladesh equality, human dignity and social justice, declare and constitute Bangladesh to be a sovereign people’s Republic and thereby confirm the declaration of Independence already made by Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman.’

যার বাংলা করা হয়েছে এভাবে-

বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করণার্থে, সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্ররূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করিলাম এবং তদ্বারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ইতিপূর্বে ঘোষিত স্বাধীনতা দৃৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করিলাম।

এই ঘোষণাপত্রের শেষাংশে উল্লেখ আছে-

We further resolve that this proclamation of independence shall be deemed to have come into effect from 26th day of March 1971.

যার বাংলা করা হয়েছে এভাবে-

আমরা আরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছি যে, স্বাধীনতার এই ঘোষণাপত্র ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে কার্যকর হইয়াছে বলিয়া গণ্য হবে।

বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুজিবনগর সরকার সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে। লাখ লাখ মানুষের আত্মদান, দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম এবং সর্বোপরি কোটি কোটি মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালিরা লাভ করে এক স্বাধীন সার্বভৌম ভূখন্ড -বাংলাদেশ। পৃথিবীর ইতিহাসে এত আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতার ইতিহাস সম্ভবত বাঙালিদেরই রয়েছে। তিতুমীর, হাজী শরীয়তুল্লাহ, খুদিরাম, মাস্টারদা সূর্য সেন, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ভাবধারায় যে মানুষটি নিজেকে তিল তিল করে গড়ে তুলেছিলেন তিনি বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করা একজন সাধারণ বাঙালি শেখ মুজিব। তাঁর আজীবন সাধনার মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালি জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম দিয়েই ক্ষান্ত হননি। এই উপমহাদেশে অন্তত দুজন নেতার নাম করা যাবে যাঁরা তাঁদের দেশের স্বাধীনতার জনক ছিলেন। তাঁরা তাদের জীবদ্দশায় তাঁদের জনগণের জন্য কোনো শাসনতন্ত্র তৈরি করে যেতে পারেননি। মোহাম¥দ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮-এর শেষের দিকে মৃত্যুবরণ করেন আর ১৯৪৮-এর জানুয়ারি মাসেই ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীকে প্রতিক্রিয়াশীলরা নির্মমভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর ১১ জানুয়ারি তিনি জারি করেন Provisional Constitution of Bangladesh Order 1972.. বাংলায় যাকে বলা হয় সাময়িক সংবিধান আদেশ। ১১ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু এ এস এম সায়েমকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। তারপর বঙ্গবন্ধু ১২ জানুয়ারি অপরাহ্ণে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং সেদিনকার মন্ত্রিপরিষদ মাননীয় বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনয়ন দান করেন এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবু সাঈদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন।

বঙ্গবন্ধুর আজীবনের স্বপ্ন ছিল দেশের মানুষের অর্থনৈতিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্যে একটি শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা। তাই তিনি রাষ্ট্রপতির পদ ছেড়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গণপরিষদ বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করে। ১০ এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করণার্থে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা করা হলো। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গণপরিষদ যে সংবিধান প্রণয়ন করে সেখানে অনুচ্ছেদ নং ২৭, ২৮ ও ২৯ দ্বারা জনগণের জন্য সাম্যের নীতির প্রতিষ্ঠা করা হয়। অনুচ্ছেদ নং ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯ ও ৪১ দ্বারা দেশের প্রত্যেক নাগরিক ও সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত কোনো ব্যক্তির আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার, জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার  অধিকার রক্ষণ, গ্রেফতার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ, চলাফেরার স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা এর অধিকারসমূহ নিশ্চিতকরণের মধ্য দিয়ে প্রত্যেকটি মানুষের মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। 

১৯৭২ সালের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৮ এ জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিসমূহ রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল। অনুচ্ছেদ ৯ অনুযায়ী উল্লেখ করা হয়েছিল- ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তা-বিশিষ্ট যে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন সেই বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি। সংবিধানের ২১(১) অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা ছিল সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিক দায়িত্ব পালন করা এবং জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। ৩৮ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ ছিল- জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা অরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে। তবে শর্ত থাকে যে, কোন ব্যক্তির উক্তরূপ সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার কিংবা উহার সদস্য হইবার অধিকার থাকিবে না, যদি (ক) উহা নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়, (খ) উহা ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ, জন্মস্থান বা ভাষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়, (গ) উহা রাষ্ট্র বা নাগরিকদের বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোন দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বা জঙ্গি কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়, বা (ঘ) উহার গঠন ও উদ্দেশ্য এই সংবিধানের পরিপন্থী হয়।

এটি স্পষ্ট যে, এভাবেই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের অধিকার সংরক্ষণ করা হয়। স্বাধীন দেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক লাখ লাখ মানুষের আত্মদানের মধ্য দিয়ে রক্তের আখরে লেখা আমাদের সংবিধান প্রণয়ন করে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশ এগিয়ে চলছিল। সবই ঠিকঠাক চলছিল। শুধু পাকিস্তানপন্থি এক শ্রেণির মানুষের মনে কিছু আফসোস ছিল যে, পাকিস্তান নামক যে ইসলামিক (তথাকথিত) রাষ্ট্রটি ছিল তা থেকে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। সেজন্য ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বরের পরের দিন থেকেই পাকিস্তানি মানসিকতার সাম্প্রদায়িক চেতনায় পুষ্ট মানুষগুলো ষড়যন্ত্র করতে থাকে কীভাবে বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা যায়। তাদের অপেক্ষার পালা তখনই শেষ হয়েছে যখন বঙ্গবন্ধুর কাছের মানুষদের মধ্যে তাদের অর্থাৎ ষড়যন্ত্রকারীদের ভাবাদর্শের মানুষের সন্ধান মেলে।

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী চক্রান্তকারীদের জন্য ছিল যেন এক শুভ দিন। বাঙালি ও বাংলার ললাটে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার অমানিশা। এটি ছিল এক কালো রাত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে খন্দকার মোশতাক আহমেদ । ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের আন্তর্জাতিক মুরব্বি ও স্থানীয় কিছু বিশ্বাসঘাতক কুশীলবরা দেশের মানুষের কাছে এই ধারণা দেয়ার চেষ্টা করে যে, শেখ মুজিব একজন ভারতের ক্রীড়নক, অদক্ষ প্রশাসক, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন এবং তাঁর ক্ষমতা দীর্ঘায়িত হলে এদেশের মানুষ খুব তাড়াতাড়ি দুর্ভিক্ষপীড়িত হয়ে পড়বে। কিন্তু আসলে কি এই কারণেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল? উত্তরটি সম্ভবত হবে ‘না’। বঙ্গবন্ধু না থেকেও আছেন এবং থাকবেন অনন্তকাল। তার পরও তাঁর প্রতি নির্মমতার পেছনের সত্য বেরিয়ে আসুক।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সৈন্য সেদিন আন্তর্জাতিক মুরব্বিদের নির্দেশে, যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কর্মকান্ডকে সমর্থন জুগিয়ে আসছিল ছিল তারাই এই বর্বর ঘটনাটি ঘটায়। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলেছিলেন। কিন্তু ১৫ আগস্টের কুশীলবরা সেই মুক্তির আকাক্সক্ষাকে পদদলিত করার লক্ষ্যে প্রথমেই যে কাজটি করে সেটি হচ্ছে সংবিধান সংশোধন। তারা বাঙালি জাতীয়তাবাদ পরিবর্তন করে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রচলন করেন। সংবিধানের ৮ অনুচ্ছেদের ধর্মনিরপেক্ষতার কথাটি বাদ দিয়ে সেখানে প্রতিস্থাপিত করে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার আর তার সঙ্গে ১(ক) অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত করে সংবিধানের সেকুলার চরিত্রটিকে ধ্বংস করে। ৩৮ অনুচ্ছেদের (ক) (খ) (গ) (ঘ) উপ-অনুচ্ছেদসমূহ সম্পূর্ণরূপে বাতিল করে দিয়ে এ দেশে  ধর্মভিত্তিক রাজনীতির পথকে সুগম  করে দেয়।

বঙ্গবন্ধুর আজীবন স্বপ্ন ছিল রাষ্ট্র এবং ধর্মকে পৃথকভাবে দেখা। পৃথিবীর প্রায় বেশিরভাগ দেশেই রাষ্ট্র পরিচালনায় ধর্মের প্রভাব সব সময় খর্ব করা হয়েছে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা থেকে বঙ্গবন্ধু দেখেছেন কীভাবে ধর্মের নামে মানুষকে নির্যাতন ও শোষণ করা হয়েছে। আমরা দেখেছি, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সামরিক জান্তা ও তাদের এ দেশীয় দোসররা কীভাবে ধর্মের নামে এদেশের নিরীহ ধর্মপ্রাণ হিন্দু-মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা করেছে। যে মা-বোনদের ওপর অত্যাচার করেছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের অধিকাংশই ছিলেন মুসলিম জনগোষ্ঠীর নারী। অথচ ওই সামরিক জান্তা নিজেদের দাবি করত তারা নাকি ইসলামী প্রজাতন্ত্রের হর্তাকর্তা। ইসলাম কখনই মানুষের ওপর জুলুম সমর্থন করে না। অথচ ধর্মকে ব্যবহার করে পাক সেনা ও তাদের এ দেশীয় কুখ্যাত দোসররা যে নির্মমতা করেছে তা বর্ণনার অতীত।

ধর্মকে ব্যক্তিজীবনে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২-এর সংবিধানে ৪১ অনুচ্ছেদ সন্নিবেশিত করে ব্যক্তির ধর্মীয় স্বাধীনতাকে নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। কিন্তু মোশতাক, সায়েম, জিয়া চক্র বেআইনিভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে সংবিধানে পরিবর্তন এনেছিলেন। এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলার উন্নতি বা দুর্ভিক্ষ ঠেকানোর কোনো উদ্দেশ্য বিশ্বাসঘাতক চক্রের ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার চেতনা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও অসাম্প্রদায়িকতার চেতনা থেকে দেশকে কক্ষচ্যুত করা। তারা যখন এই কাজটি করেছে তখন তাদের সামনে সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদটি জাজ্বল্যমান ছিল। অনুচ্ছেদ ২১(১) এ উল্লেখ করা হয়েছে, সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা নাগরিক দায়িত্ব পালন করা এবং জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য।

কিন্তু সেদিনের এই অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা কেউই কি দেখেনি সংবিধানের এই ২১(১) অনুচ্ছেদ। কেউই কি এই অনুচ্ছেদটি পড়েনি? নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে রাতের আঁধারে হত্যা করে যারা ক্ষমতা দখল করে তারা অবশ্য জেগেও  ঘুমিয়েছিল।  সেজন্য পঞ্চম সংশোধনীর মামলায়, যার দ্বারা সংবিধান সংশোধন করা হয়েছিল সেই পঞ্চম সংশোধনীকে ও পঞ্চম সংশোধনীর আওতায় ঘোষিত সমস্ত সামরিক ফরমান, রেগুলেশনস বেআইনি ও অস্তিত্বহীন মর্মে ঘোষণা করা হয়েছে। অষ্টম সংশোধনীর মামলায় (আনোয়ার হোসেন গং বনাম বাংলাদেশ) বলা হয়েছে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করা যাবে না। যা পরবর্তীতে পঞ্চম সংশোধনীর মামলায়ও বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ও বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবিরের বেঞ্চ সমর্থন করে বলেছেন- সামরিক ফরমান বলে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশকে ধর্মীয় রাষ্ট্রে রূপান্তর করা হয়েছে যা ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি।

নিষ্ঠুর ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল ১৯৭৫- এর ১৫ আগস্ট। এই বর্বর ঘটনাটি নিয়ে ও এর সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তেমন কোনো গভীর অনুসন্ধানী পর্যালোচনা হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে কেবল শারীরিকভাবে হত্যা করাই যে এই হত্যাকান্ডের উদ্দেশ্যে ছিল না তা উপরের তথ্য প্রসূত আলোচনা থেকে আশা করি অনেকটা পরিষ্কার হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে শুধু কর্নেল রশিদ ফারুকরাই ষড়যন্ত্র করে হত্যা করেছে বিষয়টি তা নয়। এই নির্মম হত্যাকান্ডের পেছনে ছিল বিরাট আন্তর্জাতিক ও দেশীয় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে কারা কারা জড়িত ছিলেন সেটি জাতির জানার অধিকার আছে। দেশের সঠিক ধারার ইতিহাস রচনার স্বার্থে এটি জাতির জানা একান্ত প্রয়োজন। কেউ কেউ হয়তো বলবেন এটি করে কী লাভ, বঙ্গবন্ধু কি আর ফিরে আসবেন, আর যেসব কুশীলব এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল তারাও তো অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছে। কিন্তু বিষয়টি শুধু ব্যক্তি শেখ মুজিবের হত্যাকান্ডের কারণ অনুসন্ধানের জন্য নয়। এটি অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার ধারক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্রের অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যেই এই সত্য সামনে আসতে হবে।

যে হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে জাতিকে তার হাজার বছরের ঐতিহ্য এবং দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন থেকে দিকভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল, সরকার চাইলে নিরপেক্ষ একটি কমিশন গঠন করে এই ষড়যন্ত্রের পেছনে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে কারা জড়িত ছিল এবং এই হত্যাকান্ডটির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য (Motive)  কী ছিল তা কার্যকরভাবে প্রমাণের ব্যবস্থাও করা সম্ভব।  আর এটি করা  ইতিহাসের স্বার্থেই একান্ত প্রয়োজন।

আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হলো। আমাদের স্বাধীনতা সম্ভবত নিরর্থক হয়ে যেত যদি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে প্রত্যাবর্তন না করতেন। পৃথিবীর ইতিহাসে খুব কমই পাওয়া যাবে যে, যুদ্ধ বিজয় করে সেনাবাহিনী যে দেশ দখল করে তা তারা সহজে ছেড়ে দেয়। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব এবং তাঁর নেতৃত্বের প্রতি বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভারতের জনগণের এবং প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর শ্রদ্ধা ও সম¥ান বোধ এমন উচ্চকিত ছিল যে, বঙ্গবন্ধু চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভারত তার বিরাট সৈন্যবাহিনী এ দেশ থেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে যায়। স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তিতে ভারতের সরকার ও জনগণের প্রতি আমাদের পরম শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি।

যে স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন করে জাতির জন্য একটি সংবিধান উপহার দিয়ে গিয়েছেন আজ তাঁরই কন্যা মাননীয় প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের মানুষ তার সুফল পাচ্ছে। এই সুফলের প্রতিফলন দেখছি নানা উন্নয়নে। বিভিন্ন স্থিতি মাপে ও সূচকে বাংলাদেশ আজ পাশর্¡বর্তী রাষ্ট্রগুলোর চেয়ে অনেক এগিয়ে। পৃথিবীতে একটি সুখী সমৃদ্ধিশালী দেশের তালিকায় বাংলাদেশর অবস্থান প্রথমার্ধে। আজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এবং মুজিব শতবর্ষে বড়ই মনে পড়ছে বঙ্গবন্ধুর কথা যাঁকে কিশোর বয়সে আমার দেখার সুযোগ হয়েছিল। যাঁর কাছে আমি এবং আমরা প্রত্যেকেই ব্যক্তিগতভাবে ও জাতিগতভাবে ঋণী। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে যে ভিত রচনা করে গিয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিনীত ও পরম শ্রদ্ধা তাঁর প্রতি। জয় বাংলা।

 

লেখক : বিচারপতি, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, আপিল বিভাগ, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর