সোমবার, ১৫ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

বিদেশের মাটিতে রঙিন স্বপ্ন

মেজবাহ্-উল-হক

ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্যের যে ফানুস উড়ছে বলতে গেলে তার পুরোটাই ওয়ানডে ঘিরে। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের ক্রিকেটের সাফল্যের গ্রাফটা ধীরে ধীরে ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে। এরপরও অনেক চড়াই-উতরাই পেরোতে হয়েছে। তবে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নতি হয়েছে মাশরাফি

বিন মর্তুজা অধিনায়কের দায়িত্ব নেওয়ার পর।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২০১৫ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। এর ঠিক দুই বছর পরেই ইংল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেলার টিকিট পায় টাইগাররা।

ওয়ানডেতে দেশে-বিদেশে সব মিলে এখন পর্যন্ত ৩৭৯টি আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে জয় ১৩১টি। সাফল্যের শতকরা হার ৩৪.৫৬ ভাগ।

রঙিন পোশাকে অর্থাৎ আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে টাইগারদের যাত্রা শুরু ১৯৮৬ সালে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে। তবে প্রথম জয়ের দেখা পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১২ বছর।

১৯৯৮ সালে কেনিয়ার বিরুদ্ধে নিজেদের ২৩তম ম্যাচে প্রথম জয় পায় টাইগাররা। বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলেও ওই আসরের (আইসিসি ট্রফি) ওয়ানডে ম্যাচগুলো আন্তর্জাতিক স্বীকৃত নয়। তবে

জোয়ার তৈরি হয় ’৯৭-এর আইসিসি ট্রফির পরই।

ক্রিকেটে বহুল ব্যবহৃত শব্দ হচ্ছে- ‘হোম অ্যাডভান্টেজ’। প্রতিটি দল ঘরের মাঠে বেশি সুবিধা পায়। এর বড় কারণ, চেনা মাঠ-দর্শক-পরিবেশ। বড় ফ্যাক্টর অবশ্যই উইকেট। বিশেষ করে দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোতে প্রতিপক্ষকে বোকা বানাতে নিজেদের পছন্দমতো ‘পিচ’ তৈরি করে স্বাগতিক দল। সে কারণে সাফল্যেও থাকে হোম অ্যাডভান্টেজের ক্যারিশমা!

ওয়ানডেতে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ দল ১৭৫টি ম্যাচ খেলে জিতেছে ৭৮টিতে। শতকরা হার ৪৪.৫৭ ভাগ। এরপরও টাইগাররা বেশি জয় পেয়েছে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে। ৮০ ম্যাচে ২৫ জয়।

তবে প্রতিপক্ষের মাঠে টাইগারদের পারফরম্যান্স খুবই হতাশাজনক। ১২৪ ম্যাচ খেলে জয় মাত্র ২৮টি। শতকরা ২২.৫৮।

বাংলাদেশের জন্য দুর্ভেদ্য ভেন্যু হচ্ছে নিউজিল্যান্ড। ওয়ানডে, টেস্ট কিংবা টি-২০ তিন ফরম্যাট মিলে ব্ল্যাক ক্যাপসদের মাটিতে এখনো কোনো জয়ের দেখা পায়নি টাইগাররা। এবার সেই অধরা জয়ের স্বপ্ন নিয়েই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে পা রেখেছে তামিম বাহিনী। ক্রিকেটাররা বেশ আত্মবিশ্বাসীও। সিরিজ শুরু হবে ২০ মার্চ থেকে।

সবেমাত্র ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষ করেছেন ক্রিকেটাররা। এখন মুক্ত হয়ে ঘুরছেন। অনুশীলনের পাশাপাশি কন্ডিশনের সঙ্গে দ্রুত নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশের জন্য বড় অস্বস্তি হচ্ছে, এই সিরিজে নেই দেশের সেরা তারকা সাকিব আল হাসান। তারপরও দেশ ছাড়ার আগে ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেছেন, জয়ের

জন্য তার ‘ব্রিগেড’ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। জয় চাই-ই চাই!

এবারের নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশের জন্য প্লাস পয়েন্ট হচ্ছেন ড্যানিয়েল ভেট্টরি। কিউইদের সাবেক অধিনায়ক টাইগারদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় তামিমদের সম্ভাবনা বেড়ে গেছে। কারণ, ভেট্টরি খুব ভালো করেই জানেন নিউজিল্যান্ডের মাটিতে জয়ের ‘দাওয়াই’ কী! স্পিন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও সিরিজে মেন্টরের দায়িত্ব যে তার ওপরই থাকবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তা ছাড়া এটিই বাংলাদেশের সঙ্গে ব্ল্যাক ক্যাপসের সাবেক অধিনায়কের শেষ অ্যাসাইনমেন্ট। আর শেষটা রাঙিয়ে দিতে কে না চায়!

তাছাড়া ওয়ানডে হচ্ছে টাইগারদের পছন্দের ফরম্যাট। খেলাও পছন্দের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। একাধিকবার কিউইদের হোয়াইটওয়াশ করার অভিজ্ঞতাও আছে। তাই হোক না তাদের মাটিতে খেলা, স্বপ্ন দেখতে দোষ কোথায়! বিদেশের মাটিতে এবার রঙিন স্বপ্ন দেখতেই পারেন টাইগাররা!

ওয়ানডেতে বাংলাদেশ

ভেন্যু    ম্যাচ     জয়      পরাজয়            পরিত্যক্ত          সাফল্যের হার  

সর্বমোট            ৩৭৯    ১৩১     ২৪১     ৭          ৩৪.৫৬%         

ঘরের মাঠ        ১৭৫     ৭৮       ৯৫       ২          ৪৪.৫৭%          

প্রতিপক্ষের মাঠ           ১২৪     ২৮       ৯৩       ৩         ২২.৫৮%         

নিরপেক্ষ ভেন্যু ৮০       ২৫       ৫৩       ২          ৩১.২৫%

 

সর্বশেষ খবর