স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে একের পর এক ক্রীড়া ফেডারেশন গঠিত হতে থাকে। ৫২ বছরে এর প্রকৃত সংখ্যা যে কত বলা মুশকিল। নিত্যনতুন ফেডারেশনের দেখা মিলছে। ডেকোরেটরের দোকানে যে লোক চেয়ার-টেবিল সরবরাহ করতেন তার নেতৃত্বেও ফেডারেশন গঠিত হয়েছে। যে খেলা কেউ চেনে বা জানেও না সে খেলার ফেডারেশন গঠন করে ক্রীড়া পরিষদের অনুমতিতে অফিস পাচ্ছে এমনকি অনুদানও মিলছে। অপ্রয়োজনীয় ফেডারেশন বা সংস্থা অনুদান পাওয়ায় যেসব খেলার উন্নতি বা সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, পর্যাপ্ত ফান্ডের অভাবে সে খেলা পিছিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যাওয়ার বদলে ক্রীড়াঙ্গনে হযবরল অবস্থা।
১৯৭২ সাল থেকে অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে ফেডারেশন ও অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন পরিচালিত হচ্ছিল। কিন্তু যে দল যখন ক্ষমতায় থাকে তাদের সমর্থিত সংগঠকরা ফেডারেশনের দায়িত্ব পাচ্ছিলেন। এ অবস্থার পরিবর্তনের লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে ক্রীড়াঙ্গনে নির্বাচন দেওয়া হয়। মূলত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আনতেই এ ব্যবস্থা। সত্যি বলতে কি, এমন উদ্যোগ সে সময়ে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিল। সচেতন ক্রীড়ামোদীরা ভেবেছিলেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফেডারেশন গঠন হলে যোগ্য লোকেরাই ফেডারেশন পরিচালিত করবেন। এতে খেলাধুলায় প্রাণ ফিরে আসবে।
সেই থেকে ক্রীড়াঙ্গনে নির্বাচন হচ্ছে। এর পরও কি জবাবদিহি বা স্বচ্ছতা ফিরে এসেছে? একটা ফেডারেশনের উদাহরণ দেওয়া যাবে কি স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হচ্ছে? ঘুরেফিরে শুধু একই অবস্থা বললে ভুল হবে। বরং আগের চেয়ে আরও বারোটা বেজে গেছে। আগের চেয়ে দলীয়করণের মাত্রা ভয়াবহ বৃদ্ধি পেয়েছে। যোগ্যতার চেয়ে রাজনৈতিক পরিচয়ে দলীয় ও সুবিধাবাদী সংগঠকরাই বড় বড় চেয়ারে বসে আছেন বছরের পর বছর। নির্বাচনের মাধ্যমে চেয়ারে বসলেও তাকে কি নির্বাচন বলা যায়?
এমনও ব্যক্তি আছেন যখন যে দল সরকারে আসে তাদের চাটুকারিতা করে প্রায় ৪০ বছর ধরে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। জেলা ক্রীড়া সংস্থার এমনও সংগঠক রয়েছেন যেন ক্রীড়াঙ্গন লিজ নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত হওয়ায় আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটেছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত। সামনে নির্বাচনের মাধ্যমে যে কোনো দল সরকার গঠন করবে। প্রশ্ন হচ্ছে-নতুন সরকার আসার পর ক্রীড়াঙ্গনের চেনা কালচার কি পরিবর্তন হবে? নাকি ঘুরেফিরে দলীয় লোক বা সুবিধাবাদীরা প্রাধান্য পাবেন। কেননা এখনই দেখা যাচ্ছে ১৫ বছর ধরে ক্রীড়াঙ্গনে বড় ধরনের সুবিধা পাওয়ার পরও সুর পাল্টাতে শুরু করেছেন।