যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশ। দুশমনদের বোমারু বিমানের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আছে তার সবুজ জমিন। কখনো নিজেদের মধ্যেই শুরু হয় যুদ্ধ। হাজার বছরের আফগান ইতিহাস এমনই। এর মধ্যেও পাহাড়ের রুক্ষ্ম আবহাওয়ায় বেড়ে উঠা আফগানদের অর্জনও কম নয়। বোমারু বিমানের শব্দে যাদের ঘুম ভাঙ্গে তারাই কিছুদিন আগে জয় করেছিল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। এখানেই থেমে যায়নি আফগানদের সাফল্যগাঁথা। তীব্র গতিতে পৌঁছে গেল সুদূর বরফাচ্ছাদিত জুরিখে, ফিফার সদর দফতরে। গত সোমবার ফিফা ব্যালন ডি'অর গালায় এশিয়ার বিস্ময় ছিল আফগানরা। পৃথিবী বিখ্যাত দলগুলোকে পিছনে ফেলে ফিফা ফেয়ার প্লে-ট্রফি জিতে নিল আফগানিস্তান!
দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দল হিসেবে ফিফার কাছ থেকে সর্বোচ্চ সম্মান পেল আফগান ফুটবল ফেডারেশন। এর আগে এশিয়ান দল হিসেবে এই পুরস্কার জয় করেছিল ইরান (১৯৯৮) এবং জাপান (২০১১)। আফগানিস্তানের জন্য তো বটেই, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্যই একটা মাইলফলক স্থাপিত হলো গত সোমবার। আফগানিস্তানের জাতীয় দলের কোচ হুমায়ুন কারগার বলছেন, 'এই অর্জন একটা মাইলফলক স্থাপন করল। যুদ্ধের উন্মাদনার মধ্যেই একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে পুরস্কার জয়ের গৌরব অর্জন করল আফগানিস্তান। এমনকি আমরা যা অর্জন করেছি তা দীর্ঘদিন ধরে ফিফার সদস্য হিসেবে টিকে থাকা সেরা দেশগুলোও অর্জন করতে পারেনি।' হুমায়ুন ঠিকই বলছেন। ১৯৮৭ সাল থেকে শুরু হওয়ার এই পুরস্কার এখনো ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার মতো অনেক বিখ্যাত দেশই জয় করতে পারেনি। সেদিক থেকে আফগানরা কি ফুটবল পরাশক্তিদের চেয়েও এগিয়ে গেল না!
আফগানরা অবশ্য এসব বিষয় নিয়ে ভাবছে না। তারা একটা মাইলফলক অর্জন করেছে। এই অর্জন তরুণদের ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে দিবে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ হওয়ার পরও টানা দুটি ফাইনাল খেলে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে একটা শিরোপা জয় করেছে তারা। ফুটবলের মতো ক্রিকেটেও এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। একদিন হয়ত পুরো আফগানিস্তানকে ঐক্যবদ্ধ করবে খেলাধূলাই! জাতীয় দলের কোচ হুমায়ুন বলছেন, 'খুব অল্প সময়ের মধ্যে আফগানিস্তানের ফুটবল তরুণদের জন্য একটা ইতিবাচক পথের সন্ধান দিতে পেরেছে। আফগান ফুটবল শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং জাতীয় ঐক্যের দিকেই আহ্বান করছে।' ফুটবলের মাধ্যমেই একটা সামাজিক পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে চলেছে আফগানিস্তান! ফিফা ফেয়ার প্লে কমিটির সদস্য টোকিও সেঙ্ওয়েল বলছেন, 'আফগানিস্তান কঠোর পরিশ্রমেরই স্বীকৃতি পেয়েছে। তারা রুট লেভেলেও ফুটবলকে ছড়িয়ে দিয়েছে। যুদ্ধের মধ্যেও তারা অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছে নিয়মিতভাবেই।'