যে কোন ছেলে-মেয়ের জন্যই তের থেকে ষোল বছর পর্যন্ত বয়সটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় শারীরিকভাবে অনেকটাই পরিণত হয়ে উঠে তারা। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই নানান সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে একজন তরুণ কিংবা তরুণী পূর্ণতা পায় না। নিয়মিত ব্যায়াম করলে তারুণ্য অর্জন যেমন সহজ হয় তেমনি তারুণ্য ধরেও রাখা যায়। যোগশাস্ত্রে তের থেকে ষোল বছর বয়সীদের জন্য নানান ব্যায়ামের কথা উল্লেখ করা আছে। এর মধ্যে শলভাসন অন্যতম। 'শলভ্?' শব্দের অর্থ পতঙ্গ। আসন অবস্থায় দেহটিকে অনেকটা পতঙ্গের মতো দেখায় বলে আসনটির নাম শলভাসন।
এ আসন করার জন্য হাত দু'টো দেহের দু'পাশে লম্বাভাবে রেখে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাতের চেটো মেঝের দিকে এবং আঙুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ হয়ে থাকবে। চিবুক মেঝেতে বা একপাশে বাঁকিয়ে রাখতে পারেন। পায়ের গোড়ালি উপর দিকে সোজা হয়ে থাকবে। এবার দম নিয়ে প্রথমে দম বন্ধ করে পা দু'টো জোড়া ও সোজা রেখে নাভি থেকে পা পর্যন্ত দেহ শক্ত করে মেঝে থেকে আনুমানিক দেড় হাত থেকে দু'হাত উপরে তুলুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে পাঁচ সেকেন্ড থেকে দশ সেকেন্ড এই অবস্থায় থাকুন এবং দম ছাড়তে ছাড়তে দেহ শিথিল করে পা মেঝেতে নামিয়ে আনুন। এভাবে আসনটি ৩/৪ বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন। প্রথম অভ্যাসের সময় যদি দু'পা একসঙ্গে তোলা সম্ভব না হয়, তবে এক পা তুলে অর্ধ-শলভাসন অভ্যাস করুন। দু'চার দিন অভ্যাসের পর দু'পা একসঙ্গে তুলতে অসুবিধা হবে না।
আসনটিতে কোমর থেকে শরীরের নিম্নাংশের খুব ভালো ব্যায়াম হয়। ফলে কটিবাত, মাজা ব্যথা, মেয়েদের ঋতুকালীন তলপেটে ব্যথা কোনোদিন হয় না। বাত বা সায়টিকার জন্য আসনটি আশ্চর্য এক প্রতিষেধক। তলপেটে খাদ্যগ্রহণী নাড়ি, মূলনাড়ি প্রভৃতি কতকগুলো যন্ত্র প্রয়োজনমতো অভ্যন্তরীণ চাপ সৃষ্টি করতে না পারলে অন্ত্রে অর্ধজীর্ণ খাবার এবং মল-নাড়িতে মল জমতে শুরু করে। ওই অর্ধজীর্ণ খাবার ও মল পচে দেহে যে বিষ সৃষ্টি করে তা রক্তের সঙ্গে মিশে দেহের সমস্ত দেহযন্ত্রকেই বিকল করে দিতে পারে। অজীর্ণ, কোষ্ঠবদ্ধতা, অম্ল বা এসিডিটি প্রভৃতি রোগ একের পর এক অতি সহজেই দেহে বাসা বাঁধতে পারে। শলভাসনে তলপেটে প্রচণ্ড চাপ পড়ায় ওই অঞ্চলের দেহযন্ত্রগুলোর খুব ভালো ব্যায়াম হয়। ফলে তাদের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। আসনটি দেহের প্রসারক পেশিগুলোকে সঙ্কুচিত ও রক্তে প্লাবিত করে এবং সঙ্কোচক পেশিগুলোকে পরিপূর্ণ বিশ্রাম দেয় বলে উভয় পেশির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কোমর থেকে দেহের নিম্নাংশের সমস্ত পেশি ও স্নায়ুজাল সতেজ ও সক্রিয় থাকে। আসনটি তলপেট ও কোমরের অপ্রয়োজনীয় মেদ কমিয়ে দেহকে সুগঠিত করে। ফুসফুস-সংলগ্ন স্নায়ুজাল ও ফুসফুসের বায়ুকোষ পুষ্ট ও সবল হয়। ফলে তাদের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। হৃৎপিণ্ডের পেশিও সতেজ ও সক্রিয় থাকে। আসনটির সঙ্গে পদহস্তাসন, শশাঙ্গাসন বা মেরুদণ্ড সামনের দিকে বাঁকানো যায় এই জাতীয় কোনো আসন অভ্যাস রাখলে সেকরালাইজেন লাম্বাগো, লাম্বার স্পণ্ডিলোসিস, স্লিপড ডিস্ক জাতীয় রোগ কোনোদিন হতে পারে না।
তবে এ আসন করার ক্ষেত্রে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এ আসন অবস্থায় হৃৎপিণ্ডে ও ফুসফুসে প্রচণ্ড চাপ পড়ে বলে যাদের কোনোরকম হৃদরোগ আছে, রোগ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এ আসন করা উচিত নয়। এ আসন চর্চায় আরও কিছু বৈচিত্র্যময় আসন রয়েছে। যেমন : পূর্ণ শলভাসন, অর্ধ শলভাসন, উত্থান শলভাসন ও বিপরীত শলভাসন।