মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

বেহাল পার্কিং প্রাইভেট হাসপাতালে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

বেহাল পার্কিং প্রাইভেট হাসপাতালে

রাজধানীর অধিকাংশ প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিকের নিজস্ব পার্কিং নেই। ডাক্তার ও রোগীদের গাড়ি রাখতে হয় রাস্তায়। নগরীর পান্থপথ ও ধানমন্ডি থেকে তোলা ছবি : রোহেত রাজীব

রাজধানীর পান্থপথের গ্রিন লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলে রোগী ও তার স্বজনদের পার্কিংয়ের জন্য গুনতে হয় ৪০ টাকা। তাই খরচ বাঁচাতে হাসপাতালের সামনে রোগী নামিয়ে এর উল্টোপাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার্ক করে রাখা হয় প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, অ্যাম্বুলেন্স।

অনেক হাসপাতাল, ক্লিনিকে নেই পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। তাই রাস্তায় পার্কিং শেষ ভরসা হয়ে দাঁড়ায় রোগী ও তার স্বজনদের। হাসপাতালের পার্কিং না থাকায় চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত গাড়ি, স্টাফবাস, অ্যাম্বুলেন্স পার্ক করে রাখা হয় রাস্তায়। পান্থপথ, গ্রিনরোডে রাজধানীর অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতাল। মিরপুর-শ্যামলীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সামনেও একই অবস্থা। রাস্তার এক লেন দখল হয়ে যায় পার্কিংয়ে। অন্যতম ব্যস্ত এসব সড়কে দিনের অধিকাংশ সময় লেগে থাকে তীব্র যানজট। পান্থপথের নিউ লাইফ হাসপাতালের সামনে রোগী নামানোর পর প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল পার্ক করতে দেন না দায়িত্বরত প্রহরীরা। গত রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত দেখা যায়, তিনটি প্রাইভেট কারে রোগী নিয়ে আসেন স্বজনরা। রোগী নিয়ে তারা হাসপাতালের ভিতরে গেলে হাসপাতালের ফুটপাথ ঘেঁষে গাড়ি পার্ক করেন ড্রাইভার। এ সময় হাসপাতালের গেটে দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মী এসে সেখান থেকে গাড়ি সরিয়ে অন্য কোথাও রাখতে বলেন। হাসপাতালের পার্কিং নেই গাড়ি কোথায় রাখবেন জিজ্ঞেস করলে ওই নিরাপত্তা কর্মী বলেন, হাসপাতালের সামনে বাদে অন্য যে কোনো জায়গায় রাখেন। ওই চালক তখন ইউটার্ন করে রাস্তা পার হয়ে গাড়ি পার্ক করেন। একইভাবে ৩০ মিনিটের মধ্যে সেখানে তিনটি প্রাইভেট কার, একটি অ্যাম্বুলেন্স ও দুটি মোটরসাইকেল পার্ক করা হয়। একই অবস্থা ধানমন্ডি ক্লিনিকে। পার্কিং ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে গাড়ি রাখতে পারেন চিকিৎসা নিতে আসা মানুষ। কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পার্কিংয়ে মাত্র দুটি গাড়ি রাখার জায়গা রয়েছে। স্কয়ার হাসপাতালের রয়েছে বেশ বড়সড় পার্কিং। কিন্তু হাসপাতালের সামনে পার্ক করে রাখা ১৫টি মোটরসাইকেল। ফুটওভার ব্রিজের নিচে দীর্ঘসময় পার্ক করে রাখা স্টাফ বাস। রাস্তার ঠিক উল্টোপাশে সারিসারি আটটি অ্যাম্বুলেন্স রাখা। রোগী নামিয়ে ভাড়ার আশায় রাস্তায় পার্ক করে রাখেন চালকরা। কেউ কিছু না বলায় নিশ্চিন্তে রাস্তাকে পার্কিং এরিয়া বানিয়ে চলছে চা, নাস্তা আর খোশগল্প। রাস্তা দখল করে অ্যাম্বুলেন্স রাখার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে অ্যাম্বুলেন্স চালক মহিউদ্দিন মিয়া বলেন, হাসপাতাল থেকে বের হয়েই রোগীর স্বজনরা অ্যাম্বুলেন্স খোঁজেন। এখানে না দাঁড়ালে ভাড়া পাই না। ভাড়ার আশায় রাস্তায় যানজট তৈরি করছেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, ঢাকা শহরে সব জায়গায় যানজট। অলিগলি রাজপথ কোন রাস্তা আছে যেখানে যানজট লাগে না। আমরা তো ভাড়া পেলে সরে যাই।

শমরিতা হাসপাতালের পার্কিংয়ে বিনামূল্যে গাড়ি পার্ক করতে পারেন রোগীর স্বজনরা। এজন্য সেখানে রাস্তার বাইরে কোনো পার্কিং চোখে পড়েনি। ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে দেখা যায়, সারিসারি গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, সিএনজি পার্ক করে রাখা। ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘিরে গাড়ির জটলা। রোগী নামিয়ে দিয়ে রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করছেন চালকরা। বেলা বাড়তেই বাড়ছে ভিড়। রাজধানীর শ্যামলী-মিরপুর এলাকায় হাসপাতাল-ক্লিনিকের সংখ্যা অনেক বেশি। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক। সরকারি হাসপাতালগুলোর বড়সড় পার্কিং থাকলেও বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের নিজেদের প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকদের গাড়ি রাখার জায়গাটুকুও নেই। হাসপাতাল বানানো হয়েছে পার্কিং না রেখে। হাসপাতাল-ক্লিনিকের পার্কিং এরিয়াকে বানানো হয়েছে প্যাথলজি। রাস্তা দখল করে বানানো হয়েছে পার্কিং এরিয়া। রাস্তা দখল করে নিজেদের গাড়ি রেখে টানিয়ে দেওয়া হচ্ছে নো পার্কিং। শ্যামলীর পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে গ্রিল লাগানো জায়গা পার্কিং এরিয়া। সেখানে সর্বসাকুল্যে দুটি প্রাইভেট কার পার্কিং করা যায়। সেখানে তাদের চিকিৎসকদের গাড়ি পার্ক করারও পর্যাপ্ত জায়গা নেই। তাই রোগীরা চিকিৎসক দেখাতে আসলে কিংবা টেস্ট করাতে আসলে পড়েন বিড়ম্বনায়। হাত ভেঙে যাওয়ায় এক্সরে করাতে এসেছিলেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পার্কিং না থাকায় পাশের গলিতে গাড়ি রেখেছে ড্রাইভার। রাস্তায় গাড়ি রেখে আমরাও স্বস্তিতে থাকি না। অনেক সময় রিকশা কিংবা অন্য কিছুর সঙ্গে লেগে গ্লাস ভেঙে যায়, রং উঠে যায়। অনেক সময় চুরি হয় গাড়ি। আর মানুষের ভোগান্তি তো হয়ই। হাসপাতালের পার্কিং থাকলে সব সমস্যার সমাধান হতো।

সর্বশেষ খবর