সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

পদ্মার পানি সংকট

সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নিন

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আমাদের ছোট নদী কবিতার অমর পঙিক্ত অনেকেরই মনে থাকার কথা— ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে।’ দেশের বৃহত্তম নদী পদ্মার কাছে সেই ছোট্ট নদীও এখন ঈর্ষার পাত্র। যে নদীকে বলা হতো ‘কূল নাই কিনারা নাই’— রাজশাহীতে সেই পদ্মার বুকজুড়ে এখন ধু-ধু বালুচর। বাংলাদেশ প্রতিদিনের এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে রাজশাহীতে পদ্মা নদীতে কোথাও কোথাও হাঁটুজলও নেই। বালুর স্তরে স্তরে আটকে আছে মাঝিদের নৌকা। বিশাল বালুরাশির ওপর দিয়ে চলছে গরু-মহিষের গাড়ি। পদ্মার এ দুরবস্থার জন্য দায়ী উজানে পানি প্রত্যাহার। ফারাক্কা বাঁধ ভারতীয় জনপদের কি কল্যাণ নিশ্চিত করেছে, সে বিষয়ে সংশয় থাকলেও এ বাঁধের কারণে পদ্মা নদীর অস্তিত্ব যে সংকটের সম্মুখীন তা নিয়ে মতদ্বৈধতার সুযোগ নেই। পদ্মায় পানি না থাকায় বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির জন্য হাহাকার সৃষ্টি হচ্ছে। খাল বিল নদী-নালা শুকিয়ে যাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ভূগর্ভের পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যাচ্ছে। গভীর নলকূপেও ঠিকমতো পানি পাওয়া দায় হয়ে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই পদ্মায় পানিশূন্যতা দেখা দেওয়ায় এ অঞ্চলে প্রকৃতির জন্য অভিশাপ বয়ে আনছে। রাজশাহী এলাকার জনস্বাস্থ্যেও তার অশুভ প্রতিক্রিয়া লক্ষিত হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর গড়ে ১১০ ফুট নিচে অবস্থান করায় এ অঞ্চলে বোরো চাষ অনিশ্চিত হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যে হাজার হাজার গভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ায় কৃষকরা সমূহ সর্বনাশের আশঙ্কায় ভুগছেন। রাজশাহীসহ সারা দেশের পদ্মা প্রবাহে যে পানি সংকট দেখা দিয়েছে তার পেছনে উজানে পানি প্রত্যাহার যেমন দায়ী, তেমন নদ-নদীর পানি ধারণক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার বিষয়টিও সমভাবে দায়ী। দেশের বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি সংকট মেটাতে উজানে পানি প্রত্যাহার কীভাবে ঠেকানো যায় সে বিষয়ে ভারতের সঙ্গে যেমন দেনদরবার চালাতে হবে তেমন নদ-নদীতে পানি ধরে রাখার বিষয়টিকেও অগ্রাধিকার দিতে হবে। পানির অপর নাম জীবন। পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সরকারসহ সব মহলকেই যত্নবান হতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর