আব্রাহাম লিংকন। আমেরিকার সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বিশ্বের সেরা রাজনীতিবিদদের একজন। তাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও শ্রদ্ধা করা হয়। তার শৈশব ও কৈশর কিন্তু প্রাচুর্যে ভরপুর ছিল না। দরিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত ছিল তার পরিবার। বাবা মুচি ছিলেন। তবু সংসার ঠিকমতো চলত না। তাই নিজেও মুচির কাজ করেন। বাবার কাছ থেকে জুতা সেলাইয়ের কাজ ভালোভাবেই রপ্ত করেছিলেন। তার বাবা ছিলেন দক্ষ মুচি। জুতা তৈরিতে তার খ্যাতি ছিল। মুচির ছেলে বলে তাকে খেপাত সবাই। নিচু দৃষ্টিতে দেখত তাকে। উপহাসের পাত্র ছিলেন বন্ধুদের কাছে। কেউ খুব একটা মিশতে চাইত না। তাই বলে দমে যাওয়ার পাত্র ছিলেন না। নিজের স্বপ্নকে বুকে ধারণ করে জীবনে এগিয়ে চলেন। মুচির ছেলে ছিলেন বলে তাকে সবসময়ই অপমান সহ্য করতে হয়েছিল। তখন তিনি রাজনীতিবিদ হিসেবে মাত্র পরিচিতি লাভ করছেন। একবার বক্তৃতা দিতে শুরু করলে তাকে ধনী এক ব্যক্তি থামিয়ে দেন। লোকটি তাকে বলেন, লিংকন আপনি মনে হয় ভুলে যাচ্ছেন আপনি একজন মুচির ছেলে। আপনার বাবা লোকের জুতা সেলাই করে। এমনকি তিনি আমাদের পরিবারের জন্য জুতা তৈরি করে দেন। এ নিয়ে তখন হাস্যরসের সূচনা হয়। কিন্তু লিংকন দৃঢ়ভাবে এর জবাব দেন। তিনি উত্তর দেন, হ্যাঁ, আমার বাবা জুতা তৈরি করেন। তিনি খুবই দক্ষ একজন মুচি। কেউ কখনো আমার বাবার তৈরি জুতা নিয়ে অভিযোগ করেননি। আপনিও মনে হয় আমার বাবার তৈরি জুতা নিয়ে কোনো অভিযোগ রাখছেন না। যদি তার জুতা নিয়ে কোনো অভিযোগ না থাকে তাহলে মানতেই হবে তার কাছে সেরা। আমি আমার বাবাকে নিয়ে গর্ববোধ করি এবং আমি নিজেও জুতা সেলাই করি।
তার এই উত্তরে উপস্থিত সবাই মুগ্ধ হয়। লিংকন নিজ স্বপ্নে বিশ্বাসী ও পরিশ্রমী ছিলেন। তিনি একজন বক্তা, লেখক, বিতার্কিক, রসিক ও আলোচক হিসেবে তার কথাগুলো আজও আমাদের কাছে সমাদৃত। আব্রাহাম লিংকন একজন সাধারণ রাজনীতিবিদ থেকে কীভাবে আমেরিকার একজন সেরা রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন- তার সেই যাত্রা থেকে আমাদের শেখার অনেক কিছু রয়েছে। তিনি তার মূল শক্তি ভাষার প্রয়োগকে নিজ অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজের স্বার্থ নয়, বরং আমেরিকান মানুষের স্বার্থে ব্যবহার করতে পেরেছিলেন বলেই তিনি মহান হয়েছিলেন।