রবিবার, ২০ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

রাজকীয় বিয়ে...

তানিয়া তুষ্টি

রাজকীয় বিয়ে...

রাজ পরিবারের রাজকীয় কারবার। সেখানে বিয়ে যেন ঘটা করে রাজকীয় বিধি প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম। বহু কাঠখড়ি পুড়িয়ে, বহু পরীক্ষা অতিক্রম করে রাজকীয় বিয়ের আয়োজন করতে হয়। আর তাইতো কতো শত রীতি নীতি মানার পর অপেক্ষার পালা শেষ হল ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের নাতি প্রিন্স হ্যারি ও মার্কিন টিভি সিরিয়াল ‘স্যুইটস’ এর অভিনেত্রী মেগান মার্কলের। তারা প্রেমের শুভ পরিণতি ঘটিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন শনিবার।

প্রেয়সি ৩ বছর বড়, তাতেও বাধা হয়নি প্রিন্স হ্যারির প্রেমে। বিয়ের ব্যাপারে পারিবারিক নানা রকম চাপও হাসিমুখে সহ্য করেছেন প্রিন্স। অপরদিকে প্রিয় মানুষটিকে চিরদিনের জন্য কাছে পেতে মেগান মার্কলকে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে অনেক কিছু। হ্যারি এবং মেগানের বিয়ের আয়োজন হয় উইন্ডসর ক্যাসেলের সেন্ট জর্জেস চ্যাপেলে। সেন্ট্রাল লন্ডন থেকে ২০ মাইল দূরে অবস্থিত সবচেয়ে পুরোনো ও বড় এই দুর্গ। সেখানেই খ্রিষ্টীয় রীতিতে বিয়ে হয় মেগান ও হ্যারির। উইন্ডসর হ্যারির দাদি ও রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বাসস্থান। বেশির ভাগ সময় তিনি এখানেই থাকেন। প্রিন্স হ্যারি ও মার্কল স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় বিয়ের শপথ নেন। উইন্ডসর ক্যাসেলের মাঠ থেকে প্রায় হাজারের উপরে সাধারণ মানুষ এই রাজকীয় বিয়ের সাক্ষী হন। লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল নয়টার মধ্যে তাদের উপস্থিত হতে বলা হয়েছিল। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটায় হ্যারি ও মেগানের রিসেপশন অনুষ্ঠিত হয়। হ্যারি-মেগানের রাজকীয় বিয়ের ভেন্যু পুরোটায় ফুল দিয়ে সাজানো হয়। ব্যবহৃত হয় সাদা গোলাপ, পিওনি ও ফক্সগ্লোভস। ফুলের সঙ্গে ব্যবহার হয় কয়েক ধরনের সুন্দর পাতা। আর বিয়ের পর সেই ফুলগুলো সব দান করে দেওয়া হয় স্থানীয় দাতব্য প্রতিষ্ঠানে। এই ফুল আর পাতা সংগ্রহ করা হয় রাজপরিবারের নিজস্ব ক্রাউন এস্টেট আর উইন্ডসর গ্রেট পার্কের বাগান থেকে।

রাজপরিবারের সদস্য হওয়ায় প্রিন্স হ্যারি আর মেগান মার্কলের বিয়ের  প্রতি সবারই অনেক বেশি কৌতুহল। সেজন্য বিয়ের অনুষ্ঠান বিশ্বের অনেক দেশ থেকেই সরাসরি দেখানো হয়। বিয়ে দেখার জন্য উইন্ডসর ও শহরটির বিভিন্ন জায়গায় বড় স্ক্রিন লাগানো হয়। এ ছাড়া গির্জা ও বিভিন্ন গোষ্ঠী, বিভিন্ন শহর ও গ্রামে বড় স্ক্রিনে বিয়ের অনুষ্ঠান দেখানো হয়। পুরো বিয়ের অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেন বিশ্বখ্যাত টিভি পারসোনালিটি অপেরা ইউনফ্রে। এছাড়াও দেশ বিদেশের বিভিন্ন পত্রিকাও বিয়ের প্রতি মুহূর্তের আপডেট জানিয়ে খবর প্রকাশ করেছে। অনলাইন পত্রিকাগুলোতেও বিয়ের অনুষ্ঠান, অতিথি আগমনসহ বিয়ের পুরো আনুষ্ঠানিকতা লাইভ দেখানো হয়েছে।

মেগান মার্কল বিয়েতে পরেন বিখ্যাত ব্রিটিশ ডিজাইনার ক্লেয়ার ওয়াইট কেলারের ডিজাইন করা পোশাক। পোশাকের পর্দায় একটি অবিশ্বাষ্য লুকোচুরির খেলা ছিল। গতবছর এই ডিজাইনার ঐতিহাসিক ফ্রেঞ্চ ফ্যাশন হাউজ গিভেঞ্চির প্রথম নারী আর্টিস্টিক ডিরেক্টর হন।

বিয়ের অনুষ্ঠানে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ, যুবরাজ চার্লস এবং ডাচেস অব কর্নওয়েল ক্যামেলা, প্রিন্স হ্যারির বড় ভাই উইলিয়াম এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ হওয়ারও কথা ছিল মার্কলের বাবা টমাস মার্কলের। সম্প্রতি তার হৃদপিন্ডে অস্ত্রপচার হওয়ায় তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি। কিন্তু মেগানের মা ডোরিয়া রাগল্যান্ড হাঁটেন মেয়ের সঙ্গে। তিনি শুক্রবার রানি এলিজাবেথের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। পরে মেয়েকে নিয়ে ক্লিভডেন হোটেলে যান। হ্যারির বাবা প্রিন্স চার্লসও হেঁটেছেন তাদের সঙ্গে। এছাড়াও বিয়েতে ৬০০ জন অতিথি যোগদান করেছেন এই বিয়েতে। আরও ২০০ অতিথি বেশি উপস্থিত ছিলেন রিসেপশন অনুষ্ঠানে। এছাড়াও ১২০০ সাধারণ অতিথি ছিলেন উইন্ডসর কাসেলের মাঠে। তাদের বিয়ে উপলক্ষে এমন রাজকীয় ঘটনার সাক্ষী হতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন এসব সাধারন মানুষ। পত্রিকা সূত্রে জানা গেছে, শহরে হঠাৎ করে এতো বেশি অতিথি আগমন ছিল যে আশপাশের হোটেলে রুম খালি পাননি অনেকে।

বিয়েতে প্রিন্স হ্যারি এবং মেগানের ঘনিষ্ট হিসেবেই উপস্থিত ছিলেন প্রায় দুইশজন। এমন একটি রাজকীয় বিয়েতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এর আগে প্রিন্স উইলিয়ামের বিয়েতেও তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আমন্ত্রণ পাননি। তবে হ্যরির সঙ্গে ঘনিষ্টতা থাকায় এবার ওবামার উপস্থিতির কথা শোনা যাচ্ছিল। পরে অবশ্য জানানো হয় ওবামা বিয়েতে অংশ নিচ্ছেন না। কিন্তু এই বিয়েতে মিডিয়া ও স্পোর্টসের বাঘা বাঘা তারকারা উপস্থিত ছিলেন। এমনকি বলিউড ও হলিউডের প্রিয় তারকা প্রিয়াঙ্কা চোপড়াও হ্যারি-মেগানের বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন। 

এতো এতো অতিথির আপ্যায়নে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে বড় পরিসরে। তাছাড়া নিরাপত্তার বিষয়টি আছেই। এই রাজকীয় বিয়েকে কেন্দ্র করে বেশ আগে থেকেই উইন্ডসর ক্যাসেল এলাকায় সাজসাজ রব উঠেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উইন্ডসর ক্যাসেল ও এর আশপাশের এলাকাকে একপ্রকার দুর্গেই পরিণত করেছে। নবদম্পতিসহ রাজপরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাছাড়া নবদম্পতিকে স্বাগত জানাতে হাজারো মানুষের ঢল নামে উইন্ডসর ক্যাসেল এলাকায়। বিয়েতে মোট খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৩ শত ২৫ কোটি পাউন্ডের মতো। প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কলের বিয়েতে তৈরি কেকের জন্য খরচ পড়ে ৫০ হাজার পাউন্ড, ফুলের জন্য ১ লাখ ১০ হাজার পাউন্ড, খাওয়া-দাওয়া বাবদ প্রায় তিন লাখ পাউন্ড খরচ হয়। বিয়ের হল ভাড়া বাবদ সাড়ে তিন লাখ পাউন্ড, পানীয় বাবদ দুই লাখ পাউন্ড,  পোশাকে তিন লাখ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য খরচ হয় তিন লাখ। এদিকে কণের চুল সাজানো ও মেকাপ বাবদ খরচ হয় ১০ হাজার পাউন্ড এবং বিয়ের আংটিতে খরচ হয় ৬ হাজার পাউন্ড। উইন্ডসর ক্যাসেলে যাওয়ার পথে শোভা বর্ধনে রাখা হয় হ্যারি-মেগানের মোমের দুটি মূর্তি যা একদম বাস্তবের মতো দেখতে। এমন মূর্তি তৈরি হয়েছে মাদাম তুসোর তত্ত্ববধানে। এর বাইরেও অন্যান্য খরচ তো রয়েছেই। রাজকীয় রীতি অনুযায়ী বিয়ের মঞ্চে উপস্থিত হন ঘোড়ার গাড়িতে চেপে।

নিজেদের বন্ধুদের মাধ্যমে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে মার্কিন অভিনেত্রী মার্কলের সঙ্গে ব্রিটিশ প্রিন্স হ্যারির পরিচয় হয়। মার্কিন টিভি সিরিজ ফ্রিঞ্জ' ও 'স্যুইটস' অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান মেগান। ২০১৭ সালের নভেম্বরের শুরুতেই তাদের মধ্যে বাগদান সম্পন্ন হয়। পরে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর কেনসিংটন প্যালেসের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ২০১৮ সালের ১৯ মে প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কলের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে। সেই বিবৃতি অনুযায়ী বিয়ের অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হল।

 

ভানিশা মিত্তাল-অমিত ভাটিয়া

[৬৬ মিলিয়ন ডলার]

উৎসব আয়োজনের পেছনে ভারতীয়দের খরচে স্বভাব সম্পর্কে বিশ্ববাসীর জানা। তাও যদি হয় নিজের সন্তানের বিয়ে উপলক্ষে খরচ, তবে তো কথায় নেই। খরচে বিশ্ব রেকর্ডও গড়ায় যায়। ঠিক তেমনি এক বিয়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ভানিশা মিত্তাল ও অমিত ভাটিয়া। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ খরচের দিক থেকে বিশ্বে তাদের বিয়ে রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। এই বিয়েতে খরচ হয়েছিল ৬৬ মিলিয়ন ডলার। ভানিশা মিত্তাল বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি লক্ষ্মী মিত্তালের মেয়ে। অবাক করার মতো বিষয় হলেও এটি সত্য যে, ভারতীয় একটি বিয়েতে এত বেশি খরচ হয়েছে। বাগদান থেকে শুরু করে বিয়ে পর্যন্ত যাবতীয় খরচটি রয়েছে এই হিসাবের মধ্যে। বিয়েতে রেকর্ডসংখ্যক আন্তর্জাতিক মানের তারকা উপস্থিত ছিল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয় জমপেশ। এই অনুষ্ঠানে কেলি মিনোগুরকে মাত্র আধা ঘণ্টা পারফর্ম করার জন্য পরিশোধ করা হয় ৩ লাখ ৩৩ হাজার ডলার। এরপর ফায়ারওয়ার্ক ডিসপ্লে হয় আইফেল টাওয়ারের ওপর। দুঃখের বিষয় হল, এত ব্যয় করে যে বিয়ে সম্পন্ন হয় তা খুব বেশি দিন টেকেনি। ২০১৩ সালে তা ভেঙে যায়।

 

প্রিন্স উইলিয়াম-কেট

[৩৪ মিলিয়ন ডলার]

ব্রিটিশ রাজপরিবারের আরেকটি ব্যয়বহুল বিয়ের পাত্র-পাত্রী হলেন প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট মিডলটন। বিয়েটি ছিল ইংল্যান্ডের ভবিষ্যৎ রাজা-রানীর। ২০১১ সালের বিয়েটি হয় অতিমাত্রায় রাজকীয় স্টাইলে। রাজকীয় সব রীতিনীতি অনুসরণ ও অতিথি আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে এই বিয়ে সম্পন্ন হয়। উইলিয়াম ও কেট দম্পতির এই বিয়েতে সমুদয় খরচ হয় ৩৪ মিলিয়ন ডলার। বিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ওয়েস্ট মিনস্টার অ্যাবেতে। নতুন এই কাপলদের বহন করার জন্য ঐহিত্যবাহী রীতি ঘোড়ায় টানা গাড়ির ব্যবহারও করা হয়। ব্যক্তিজীবনে উচ্চশিক্ষিত, আর্মি অফিসার, ফ্লাইট লে., এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাইলটসহ রাজকীয় অনেক দায়িত্ব পালনে প্রিন্স উইলিয়াম তার যোগ্যতা প্রদর্শন করেছেন। দাম্পত্য জীবনেও দেখিয়েছেন সমান যোগ্যতা। হাসিখুশি এই দম্পতি এখন পর্যন্ত সুখের সঙ্গে সংসার করছে। কোনো ঝামেলা ছাড়া সংসার টিকেও আছে। ২০১২ সালে তাদের ঘর আলোকিত করে প্রথম সন্তান আসে। নাম রাখা হয় প্রিন্স জর্জ। এরপর মিডলটন ২০১৫ সালে আবার একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন। তার নাম রাখা হয় প্রিন্সেস সার্লট।

 

বিক্রম ছাত্তাল-প্রিভা সাদকে

[২০ মিলিয়ন ডলার]

ভারতীয় আরেকটি ব্যয়বহুল বিয়ে হয় বিক্রম ছাত্তাল ও প্রিভা সাদকের। বিয়ে বাবদ খরচ হয় ২০ মিলিয়ন ডলার। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হয় এই খরচ। বিয়ের পাত্র বিক্রম ছাত্তালের বাবা নিউইয়র্কের হোটেল ব্যবসায়ী ও জেট সেটিংস-এর হোটেলিয়ার। অন্যদিকে পাত্রী প্রিভা সাদকে হলেন মডেল, অভিনেত্রী ও ব্যাংকের বিনিয়োগকারী। বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ২০০৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের তিনটি শহর মুম্বাই, উদয়পুর এবং দিল্লিতে। ইন্ডিয়ার ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যয়বহুল বিয়ে হিসেবে ধরা হয় এই বিয়েকে। বিক্রম-প্রিভার বিয়েতে অন্যতম অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিল ক্লিনটন। এ ছাড়াও অনেক নামিদামি লোকজন অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিয়ের অনুষ্ঠানকে আলোকিত করেন। বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হতে সময় লাগে মোট ১০ দিন। দেশের মধ্যকার অতিথি ছাড়াও বিশ্বের ২৬টি দেশ থেকে মোট ৬০০ অতিথি অংশগ্রহণ করেন এই বিয়েতে। তাদের আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয় প্রাইভেট জেট বিমান। আর তাই হয় তো খরচের অঙ্কটাও বেশি হয়।

 

ডায়ানা-প্রিন্স চার্লস

[১১০ মিলিয়ন ডলার]

প্রিন্সেস ডায়ানা। নামটি এখনো সমানভাবে দোলায়িত করে ভক্তহৃদয়কে। তার সৌন্দর্য, মানবহিতৈষী কাজ আর অবহেলিত শ্রেণিকে খুব সহজে আপন করে নেওয়ার গুণটি মানুষকে আকৃষ্ট করেছে খুব সহজে। ব্রিটিশ রাজ পরিবারের বধূ হলেও চিরাচরিত নিয়মের বাইরে গিয়েই তাকে এসব কাজ করতে হয়েছে। গুণী এই নারীকে প্রিন্সেস হিসেবে বরণ করেন প্রিন্স চার্লস। তাদের বিয়েতে আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন দেখে পুরো বিশ্ব হতবাক। রাজকীয় এই বিয়েটি সম্পন্ন হয়েছিল ১৯৮১ সালে। বিয়ে উপলক্ষে রাজপরিবারের খরচের খাতা গিয়ে ঠেকে ১১০ মিলিয়ন ডলারে। বিয়েতে প্রত্যক্ষভাবে সাক্ষী ছিলেন ৩৫০০ মানুষ এবং বিশ্বের ৭৫০ মিলিয়ন মানুষ টেলিভিশনে সম্প্রচারের মাধ্যমে। এই প্রিন্সেস ডায়ানার বিয়ের গাউনটি আচ্ছাদিত ছিল ১০ হাজার মুক্তা দিয়ে। যাই হোক, বিয়েটি প্রিন্স চার্লস ও প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে অন্যান্য মানুষও উপভোগ করেছিল। এই রাজকীয় দম্পতির বিচ্ছেদ ঘটে ১৯৯৬ সালে। এর এক বছর পর ডায়ানা তার ছেলেবন্ধুর সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান।

 

ওয়েন রুনি-কলিন ম্যাক লগলিন

[৮ মিলিয়ন ডলার]

ইংলিশ প্রফেশনাল ফুটবলার ওয়েন রুনি। তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং ইংল্যান্ড ন্যাশনাল টিমের অধিনায়ক হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন। তিনি খেলা দিয়ে যেমন রেকর্ডধারী তেমনি বিয়ে করেও গড়েছেন বিশাল এক রেকর্ড। ওয়েন রুনি এবং কলিন ম্যাক লগলিন দম্পতি বিয়েতে খরচ করে বসে মোট ৮ মিলিয়ন ডলার। ২০০৮ সালে ইতালিতে আয়োজিত এই বিয়েতে শুধু অতিথিদের পেছনে খরচ হয় ৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার। রুনি নিজে তাদের যাতায়াতের জন্য ৫টি জেট ব্যবহার করেন। মূলত ৬৪ জন ভিআইপি গেস্টকে আনার জন্য ছিল এই মহাআয়োজন। বিয়েতে অঢেল খরচ করার জন্য সবটায় যে নিজের পকেট থেকে খরচ করতে হয়েছে তা নয়, আর্থিক সহায়তা হিসেবে বেছে নেয় বিয়ের ছবি বিক্রির পন্থা। একটি ম্যাগাজিন তাদের বিয়ের ছবি কিনে নেয় উচ্চমূল্য দিয়ে। বর্তমানে ওয়েন রুনি এবং কলিন ম্যাক লগলিন দুই বাচ্চা নিয়ে সুখে-শান্তিতে সংসার করছেন।

 

চেলসি ক্লিনটন-মার্ক মেজভিনস্কি

[৫ মিলিয়ন ডলার]

ধনকুবের বাবার মেয়ে হলে জন্ম থেকে বিয়ে অবধি একটু খরচের আবহ থাকতেই পারে। সেখানে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের মেয়ে হলে তো কথায় নেই। তার বিয়ে ব্যয়বহুল হবে এটা আর ভিন্ন কী? সেই বিয়েতে বিশ্বের প্রথম শ্রেণির অতিথিরা উপস্থিতি থাকবেন, খাবার-দাবার হবে সবচেয়ে ভালো মানের, অনুষ্ঠানে থাকবে সাংস্কৃতিক আয়োজন, উপহারসামগ্রীও হবে এলিট স্টাইলের। আর সে কারণেই হয় তো আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন-এর মেয়ে চেলসি ক্লিনটনের বিয়ে হয় একটু অন্যভাবেই। চেলসি পাত্র হিসেবে বেছে নেন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার মার্ক মেজভিনস্কিকে। তাদের বিয়েটি সম্পন্ন হয় ২০১০ সালে। প্রেসিডেন্ট নিজের মেয়ের বিয়েতে খরচ করেন ৫ মিলিয়ন ডলার। হার্ডসন রিভাবের পাশে একটি রোমান্টিক আবহে বিয়ের সব কাজ সম্পন্ন হয়। অতিথিরাও খুব আনন্দের সঙ্গে বিয়ে উপভোগ করেন। বর্তমানে এই দম্পতি সন্তানসহ সুখেই দিন কাটাচ্ছে।

 

লিজা মিনালি-ডেভিড গেস্ট

[৪.২ মিলিয়ন ডলার]

গায়কী সেনসেশন লিজা মিনালি বিয়ে করেন ডেভিড গেস্টকে। ডেভিড গেস্টও ছিলেন আমেরিকান এন্টারটেইনার, কমেডিয়ান, প্রডিউসার এবং টেলিভিশন পারসোনালিটি। ২০০২ সালে লিজা ডেভিড দম্পতির বিয়েতে খরচ হয় ৪.২ মিলিয়ন ডলার। এই বিয়েতে মাইকেল জ্যাকসনসহ ভাইবোন মোট পাঁচ জ্যাকসনই উপস্থিত ছিলেন। গিটারের কুইন ব্রেন মে, লিয়াম নিসন, জন কলিন্স, গ্লোরিয়া গেইনর, এন্টনি হককিন্স, মিয়া ফ্যারোও ছিলেন অন্যান্য অতিথির মধ্যে। এত জাঁকজমক ও সাড়া ফেলে দেওয়া বিয়ের যবনিকা ঘটতে সময় লাগে মাত্র এক বছর। তবে বিচ্ছেদের কাজ সম্পন্ন হতে সময় লাগে পরবর্তী ৫ বছর। তাদের এই বিবাহবিচ্ছেদ হলিউডের সবচেয়ে বেশি ঘৃণ্যতম বলে পরিচিতি পায়। গেস্ট অভিযোগ আনেন লিজা তাকে অতিরিক্ত মদ্যপান করে মারধর করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর