৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১১:৩৬

'বিচারপতিদের সম্মান রক্ষায় বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের শাস্তি হওয়া উচিত'

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

'বিচারপতিদের সম্মান রক্ষায় বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের শাস্তি হওয়া উচিত'

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, দেশের ও আইনের স্বার্থে এবং বিচারপতিদের সম্মান রক্ষার্থে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের আদালতে নজিরবিহীন হট্টগোলের মাধ্যমে সর্বোচ্চ আদালত অবমাননার অভিযোগে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।

শুক্রবার রাত ৯টায় চট্টগ্রাম মহানগরীর জিইসি মোড়ে কে-স্কোয়ার মিলনায়তনে টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন চট্টগ্রামের যুগপূর্তি অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমকর্মী আইনের মাধ্যমে সরকার সাংবাদিকদের চাকরির নিশ্চয়তাসহ আইনী সুরক্ষা দেবে। মন্ত্রী বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে সম্প্রচার, বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন বিদেশে নিয়ে যাওয়া রোধ, ক্যাবল অপারেটরদেরকে দেশীয় টিভি চ্যানেল গুলোর সিরিয়াল নিশ্চিত করাসহ একযুগেও সমাধান না হওয়া বেশ কিছু কাজ তার সময়কালের ৬ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা হয় বলে জানান।

তিনি বলেন, এতবছরেও ভারতে বাংলাদেশি চ্যানেল সম্প্রচার সম্ভব না হলেও সম্প্রতি তার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায়  সেটা সম্ভব হচ্ছে।

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাস্তবতার নিরিখে সাংবাদিকদের জন্য যা যা করা দরকার সব করবে সরকার। চলতি ডিসেম্বর মাস থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ১২ ঘন্টা সম্প্রচার ও আগামী তিন মাসের মধ্যে টেরিস্ট্রিয়াল সম্প্রচার হবে বলেও ঘোষণা দেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি টেলিভিশন ক্যামেরাপার্সনদের সংগঠনটির কল্যাণে এক লক্ষ টাকা সহায়তার ঘোষণা দেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যম সমাজের দর্পণ ও রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। তিনি চট্টগ্রামের টেলিভিশন সাংবাদিকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ঘোষণাও দেন।  

তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রধান বিচারপতির উপস্থিতিতে বিএনপির আইনজীবীরা যে ধরনের হট্টগোল করেছে, গণ্ডগোল করেছে দেশের ইতিহাসে এটি একটি কলংকজনক ঘটনা ও দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি এক সপ্তাহ পেছানোতেই বিএনপি'র আইনজীবীদের হট্টগোলের কারণে দেশের প্রধান বিচারপতি এবং বিচারপতিবৃন্দকে এজলাস ছাড়তে হয়েছে। নজীরবিহীন এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা শুধু নিন্দনীয়ই নয়, দেশের সামগ্রিক আইন-আদালতের প্রতি হুমকি ও সর্বোচ্চ আদালতকে অবজ্ঞা-অসম্মানের শামিল। দেশে আইনের শাসন বজায় রাখার স্বার্থে এঘটনার জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক, বলেন তথ্যমন্ত্রী।

ড. হাছান মাহমুদ আরো বলেন, বেগম জিয়ার জামিন হবে কি হবে না, সেবিষয়ে শুনানি পেছানোতেই যদি সর্বোচ্চ আদালতে হট্টগোল হয়, জামিন হলে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে কতটা অরাজকতা করবে, সেটি গভীর উদ্বেগের বিষয়। বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা যে এই প্রথম এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তা নয়। অতীতে যারা প্রধান বিচারপতির দরজায় লাথি মেরেছিল, বৃহস্পতিবারের ঘটনায় তাদের যে উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, এটি আদালতের প্রতি হুমকিস্বরূপ।

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি শফিক আহমেদ সাজিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত যুগপূর্তি অনুষ্ঠানটিতে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দিন। এছাড়াও অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএফইউজে-ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি নাজিমুদ্দিন শ্যামল, সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক ইকবাল, টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি নাসিরুদ্দিন তোতা, সাধারন সম্পাদক লতিফা আনসারি রুনা। অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেয়া হয় সাংবাদিক এজাজ মাহমুদ ও সৌমেন গুহকে।

সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের অব্যাহত সহযোগিতা প্রদানের ঘোষণা দিয়ে বলেন, বর্তমান সরকার পেশাজীবী বান্ধব সরকার। সাংবাদিকদের সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের কথাও স্বীকার করে উন্নয়নে সাংবাদিকদের আরও ভূমিকা রাখতে তিনি অনুরোধ জানান। 
বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে গণমাধ্যম কর্মীদের সহায়তার ক্ষেত্রেও আঞ্চলিক বৈষম্য মুক্তি প্রয়োজন। এজন্য তথ্যমন্ত্রীসহ সরকারের কাছে তিনি দাবি জানান।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক শামসুল ইসলাম বাবু ও সাবেক সভাপতি এনামুল হক। সাংবাদিক অনুপম পার্থের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটিতে তিনজন সেরা রিপোর্টার ও ক্যামেরাপার্সনকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। রিপোর্টার হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন প্রথম- চ্যানেল-২৪-এর আকরাম হোসেন, দ্বিতীয় যৌথভাবে- দুইজন ফখরুল ইসলাম চ্যানেল-২৪ এবং মো. শোয়েব উদ্দিন-যমুনা টিভি, তৃতীয় - প্রণবেশ চক্রবর্তী-৭১ টিভি। ক্যামেরাপার্সনদের মধ্যে পুরস্কার পেয়েছেন সেলিম, আবু জাহিদ, দিপংকর দাশ ও বাবুন পাল। ডকুমেন্টারিতে পুরস্কার পেয়েছেন এনামুল হক, সেলিম উল্লাহ, অমিত দাশ ও সঞ্জিব দেব বাবু।

রাত প্রায় ১২টায় অনুষ্ঠানের শেষ অংশে ছিল গ্রহণকারী সদস্য ও পরিবার বর্গের মধ্যে লাকী কুপন ড্র'র পুরস্কার বিতরণ পর্ব। এতে অতিথি হিসেবে পুরস্কার বিতরণ করেন বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার  চৌধুরী, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের রিজিওনাল এডিটর কামাল পারভেজ, তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন উৎসব আহ্বায়ক রনী দাশ। অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্য রাখেন এসোসিয়েশনের সভাপতি শফিক আহমেদ সাজিব। 

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

সর্বশেষ খবর