১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৯:২৪

গতি পেয়েছে রেলওয়ের পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম:

গতি পেয়েছে রেলওয়ের পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ওয়ার্কশপে পূর্বে দৈনিক একটি করে ট্রেনের বগি বা কোচ মেরামতের কাজ করা যেত। এখন সেখানে মেরামত করা হচ্ছে দুইটি করে। একটি বগি মেরামতে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করেও সুযোগ মিলত না। কিন্তু বর্তমানে ছয় মাসে তা মেরামত করা হচ্ছে। মাত্র এক দশকের ব্যবধানে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ওয়ার্কশপের কার্যক্ষমতা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। যথা সময়ে হচ্ছে বগি মেরামত, ফলে কমছে ভোগান্তি। 

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১৯৪৭ সালে পাহাড়তলীতে প্রতিষ্ঠিত কারখানাটিতে এক সময় নতুন বগি নির্মাণ করা হতো। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অবহেলার কারণে ট্রেনের বগি মেরামত ছাড়াও নতুন বগি নির্মাণে অনাগ্রহী হয়ে ওঠে। সাম্প্রতিক সময়ে বগি মেরামতসহ ওয়ার্কশপ থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে তা সরবরাহ করা শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ থেকে বার্ষিক বগি মেরামতের হার বাড়তে থাকে। সর্বশেষ চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে বগি মেরামত হয়েছে ৫০১টি। তাছাড়া ডিসেম্বরের মধ্যে বার্ষিক বগি মেরামত ৫৭০টি ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছে ওয়ার্কশপ কর্তৃপক্ষ।

রেলের প্রকৌশল বিভাগের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১০ সালে পাহাড়তলী ওয়ার্কশপের বার্ষিক বগি আউটটার্ন ছিল ২৯৪টি। ২০১১ সালে মেরামত কার্যক্রম কিছুটা বেড়ে ৩২৭টিতে উন্নীত হয়। ২০১২ সাল থেকে ওয়ার্কশপের কর্মদক্ষতা ফের কমতে শুরু করে। ২০১২ সালে ২৯৭টি, ২০১১ সালে ২৬০টি, ২০১৪ সালে ২৭১টি কোচ মেরামত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে ২৯২টি, ২০১৬ সালে ৩৫৭টি, ২০১৭ সালে ৪৪৬টি, ২০১৮ সালে ৪৩৬টি এবং ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৫০১টি বগি মেরামত হয়েছে। ডিসেম্বর মাসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে বগি মেরামতের পরিমাণ ৫৭০টি ছাড়িয়ে যাবে।

জানা যায়, ট্রেনের বগি মেরামতের হার বাড়লেও কমছে কারখানার জনবল। পাকিস্তান আমলে প্রতিষ্ঠিত এই কারখানার তৎকালীন মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা এক হাজার ৭১১টি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে জনবল নিয়োগ বন্ধ থাকায় লোকবল অর্ধেকে নেমে এসেছে। বর্তমানে পাহাড়তলী ওয়ার্কশপে সর্বমোট ৯৮০ জন শ্রমিক কাজ করছে। যা মঞ্জুরিকৃত পদের মাত্র ৫২ শতাংশ। কারখানাটিতে ২০২০ সালে আরও ৭২ জন শ্রমিক বা দক্ষকর্মী অবসরে যাবেন। এমতাবস্থায় ওভারটাইমসহ বিভিন্ন প্রণোদনার কারণে বগি মেরামতের হার বেড়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারি বলেন, আগের তুলনায় এখন বগি মেরামতসহ নানাবিধ কাজ বাড়ছে। এখানে জনবল কম হলেও কাজের গতি কিন্তু থেমে নেই। তারপরও ওভারটাইম দিয়ে বগি সরবরাহ করার যথাযথ চেষ্টা চলছে বলে জানান তারা।

পাহাড়তলী ওয়ার্কশপের কর্মব্যবস্থাপক (ক্যারেজ এন্ড ওয়াগন) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এক সময় ওয়ার্কশপে মেরামতের অপেক্ষায় থাকা বগির জন্য পরিবহন বিভাগ থেকে তাগাদা দেয়া হতো। অনেক সময় ক্যাটারিং সার্ভিস ছাড়াও বিভিন্ন দফতর থেকে ওয়ার্কশপে পাঠানো বগি দ্রুত মেরামত করে দিতে সুপারিশও করা হতো। কিন্তু বর্তমানে পাহাড়তলী ওয়ার্কশপে বগি মেরামতের জটিলতা নেই। চলমান ওয়ার্কশপ আধুনিকায়ন উন্নয়ন প্রকল্পের কিছু অংশের কাজ চলতি ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হতে পারে। উন্নয়ন কাজ শেষ হলে এটির কার্যক্ষমতা আরও বাড়বে।’ 

তিনি বলেন, ‘ইরান থেকে ৩৯টি বগি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হিসাবে পড়ে ছিল। এসব পুরনো বগিগুলো ডাম্পিং করে স্ক্র্যাপ আকারে বিক্রির উদ্যোগও নেয়া হয়। কিন্তু পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ কর্তৃপক্ষ ৩৯টি বগির মধ্যে ২৪টি বগি মেরামত করেছে মাত্র দেড় বছরে। প্রতিটি বগি মেরামতে প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হলেও আগামী ১০ বছর রেলওয়েকে টানা সেবা দেবে বগিগুলো। প্রতিটি বগি বছরে গড়ে এক কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের সুবিধা থাকায় সেবার পাশাপাশি রেলের আয় বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।’ 

রেলের পরিবহন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এক সময় রেলওয়ে তীব্র বগি সংকটে ছিল। ফলে যাত্রী চাহিদা সত্ত্বেও বগি সরবরাহ পেত না পরিবহন বিভাগ। অনেক সময় নির্ধারিত ট্রেনের বগি সময়মত মেরামত না হওয়ায় যাত্রীদের কাছে বিক্রি করা টিকিটও ফেরত দিতে হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে  কারখানা থেকে বগি মেরামত বেড়ে যাওয়ায় রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী স্ট্যান্ডার্ড কম্পোজিশন অনুযায়ী  ট্রেন চালানোর পরও মজুদ রাখা সম্ভব হচ্ছে। এতে উৎসব কিংবা বৃহস্পতি, শুক্রবার ও শনিবার ছাড়াও জরুরী প্রয়োজনে বিভিন্ন ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজন গতি পেয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর