চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের উপ-নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান।
গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭টি অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের প্রতিকার নেই। এসব অভিযোগ সুরাহা না হওয়া এবং কোনো ধরনের প্রতিকার না দেখায় শঙ্কার মধ্যেই রয়েছেন বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ানসহ সমর্থিতরা।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অন্য কোনো প্রার্থী বা কোনো অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে আসেনি বলে সূত্রে জানা গেছে।
অন্যদিকে, নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। এসময় বিএনপির পক্ষে প্রচারণায় অংশগ্রহণকারীদের নানাভাবে ভয়-ভীতি-হুমকি-দমকি দেয়ার বিষয়টিও অব্যাহত রয়েছে বলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ।
চট্টগ্রাম নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ৩১ ডিসেম্বর ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টা ছেঁড়া, পোস্টার-ব্যানার পুড়িয়ে ফেলা, ২৯ ডিসেম্বর পোস্টার ছেঁড়া, গাড়ি ভাংচুর ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করা, ২৬ ডিসেম্বর সাতকানিয়ার সংসদ সদস্য আবু রেজা মো. নেজামুদ্দিন নদভী নৌকার পক্ষে ভোট কেন্দ্র দখলের যড়যন্ত্রমূলক বক্তব্য, ২৫ ডিসেম্বর নৌকার প্রতীকের তোরণ নির্মাণে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও সিটি মেয়র আজম নাছির উদ্দিন নির্বাচনী ক্যাম্প উদ্বোধন করে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেন বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ান। তিনি এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ হাসানুজ্জামন বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন পৃথকভাবে।
তবে এ অভিযোগের প্রেক্ষিতেই রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান পৃথকভাবে এক-পাঁচদিন পরেই নির্বাচনী তদন্ত কমিটির বরাবরে সরেজমিন তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন জরুরি ভিত্তিতে প্রেরণের জন্য চিঠি দিয়েই নিজেদের দায় ছেড়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উপ-নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ প্রার্থী বা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে সরকারের দায়িত্বশীল লোকজন নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেছেন। তাছাড়া আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থিতরা আমার নেতা-কর্মীর ওপর হামলা, ভয়-ভীতি, হুমকি-দমকি এবং পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা ও পুড়িয়ে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দেয়া সত্ত্বেও কোনো ধরনের প্রতিকার বা অ্যাকশন নেই বললেই চলে। এতে বুঝা যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন কতটুকু নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারে তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তাছাড়া এই তদন্ত জুটিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও শুনেছি।
নির্বাচনী তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য ও চট্টগ্রাম জেলার যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে চিঠি পেয়েছি। প্রাথমিক কাজও শুরু করেছি। বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে সরেজমিন তদন্তের প্রয়োজন। সেই বিষয়ে বহুল তথ্যের প্রয়োজনে ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে চিঠিও দেয়া হয়েছে। তবে দ্রুত তদন্তকাজ শেষ করেই রিপোর্ট দেয়ার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
চট্টগ্রাম-৮ উপ-নির্বাচনে বিএনপির নানাবিধ অভিযোগ প্রশ্নে কোন ধরনের সহিংসতা এবং ইভিএমে ভোট কারচুপির কোন ধরনের আশঙ্কা নেই জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। তিনি চট্টগ্রামে গত বুধবার আরও বলেছেন, ইভিএম বিষয়ে কোন ধরনের পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই। ইতোপূর্বে ইভিএম’র মাধ্যমে যেসব নির্বাচন করা হয়েছে তাতে ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে। এ নির্বাচনে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৭ নভেম্বর ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম-৮ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একাংশের নেতা মঈনউদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়েছিল। আগামী ১৩ জানুয়ারি এই আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন