গার্মেন্ট কর্মীদের গায়ে অভিন্ন পোশাক। নারী কর্মীরা হলুদ রঙে বর্ণিল। মাথার খোপায় শোভা পাচ্ছে ফুল। পুরুষ কর্মীদের গায়েও অভিন্ন রঙের পোশাক। হাতেগোনা কিছু কর্মীর নয়। বরং একটি পোশাক কারখানার প্রায় দেড় হাজার শ্রমিকের অভিন্ন পোশাক। এটি কোনো পারিবারিক প্রোগ্রাম নয়, একটি গার্মেন্টের মালিকের কন্যার বিয়ের গায়েহলুদের এমন আয়োজন। গায়েহলুদে শ্রমিকদের দেওয়া স্বর্ণের গহনা পরানো হয়েছে মালিকের কন্যার গলায়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ শিল্প এলাকার ইন্ডিপেন্ডেন্ট গার্মেন্টে এ গায়েহলুদের আয়োজন করা হয়।
মালিকের মেয়ের গায়েহলুদ অনুষ্ঠানে নেচে গেয়ে উৎসবে মেতেছেন শ্রমিকরা। গায়েহলুদ অনুষ্ঠানে শুধু পোশাকে নয়, খাবারেও ছিল আভিজাত্য। মোরগ পোলাও, ডিম কারি, কোপ্তা, বোরহানি, জর্দা বাদ যায়নি কিছু। এদিন, মালিক-শ্রমিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ইন্ডিপেনডেন্ট গার্মেন্ট।
গায়েহলুদ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চারদিকে যেন ছড়িয়ে পড়েছিল উচ্ছ্বাস। গার্মেন্ট কন্যারা সবাই ‘হলুদ বাটো, মেন্দি বাটো’, ‘লীলাবালি লীলাবালি…সাজাইবো তোরে’ গানের তালে তালে যেভাবে সুন্দর করে নাচছিলেন, যে কেউ হয়তো বলবে তাদের কোনো সখী অথবা বোনের বিয়ে হচ্ছে।
জানা যায়, নাসিরাবাদ শিল্প এলাকার ইন্ডিপেন্ডেন্ট গার্মেন্টের মালিক, ব্যবসায়ী নেতা, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি এস এম আবু তৈয়বের একমাত্র কন্যা সাইকা তাফাননুম প্রীতির গায়েহলুদের আয়োজন করা হয় গার্মেন্টের দেড় হাজার শ্রমিকের সঙ্গে। প্রীতির বিয়ে হচ্ছে ঢাকার বারিধারার আসলাম মোল্লা ও রুবিনা মোল্লার পুত্র শফিউল ইসলাম মোল্লা (নিলয়) এর সঙ্গে।
আগামী ৫ জানুয়ারি নগরীর নেভি কনভেনশন সেন্টারে এই বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। গায়ে হলুদ উপলক্ষে কারখানার সব নারী শ্রমিককেই দেওয়া হয়েছে হলুদ শাড়ি। আবার একই ডিজাইনের শাড়ি নেওয়া হয়েছে নিজের স্ত্রী উলফাতুন্নেছা পুতুলের জন্য। ছেলের জন্য যে পাঞ্জাবি কিনেছেন, কারখানার পুরুষকর্মীদেরও দেওয়া হয়েছে একই পাঞ্জাবি। গায়েহলুদের খাবার রান্না করা হয়েছে চট্টগ্রাম ক্লাবের বাবুর্চি দিয়ে। খাবারের ম্যানু থাকবে চট্টগ্রাম ক্লাবের। একই খাবার খেয়েছেন গার্মেন্ট শ্রমিক-কর্মচারিরা।
বৃহস্পতিবার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল ইন্ডিপেন্ডেন্ট গার্মেন্ট কারখানার সব শাখার। ছাদের উপর মঞ্চ করে আয়োজন করা হয় মালিককন্যার গায়েহলুদের অনুষ্ঠান। পুরো ছাদ জুড়ে ছিলে শত শত নারী। সবাই গার্মেন্ট কন্যা। সবার পরনে একই শাড়ি। ব্যবসায়ী আবু তৈয়বের স্ত্রীও পরেছেন একই শাড়ি। গায়ে হলুদে সবার ভালোবাসায় সিক্ত হলেন নববধূ। গার্মেন্ট কন্যাদের পঞ্চাশ, বিশ ও একশ টাকা চাঁদা দিয়ে নিজেদের মতো করে উপহার দেওয়া হয়েছে এক সেট স্বর্ণের গহনা। প্রায় দেড় লাখ টাকা দিয়ে কেনা সেই গহনা গার্মেন্ট কন্যারাই পরিয়ে দিয়েছেন মালিককন্যার গায়ে।
এসএম আবু তৈয়ব বলেন, ‘গার্মেন্টকর্মীদের ঘাম ও পরিশ্রমের ফলেই আমরা আজ এমন অবস্থানে এসেছি। গার্মেন্ট কারখানার এই খেটে খাওয়া শ্রমিকদের যথেষ্ট ভূমিকা আছে আমার জন্য, আমার কন্যার জন্য এবং পুরো পরিবারের জন্য। এরাইতো আমার সন্তানকে একটি মর্যাদার আসন দিয়েছেন। আমি মনে করি, এরা আমার পরিবারের অংশ। তাই মেয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানটি আমি তাদের সঙ্গে করেছি।’
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন