রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসক ও ইন্টার্ন চিকিত্সককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরে বিক্ষুদ্ধ ইন্টার্ন চিকিৎসকরা জরুরি বিভাগে ভাঙচুর চালায়। আজ শুক্রবার দুপুর একটার দিকে হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। মোশাররফ হোসেন খান (৬০) নামের এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। তার বাড়ি নগরীর বোয়ালিয়া থানার টিকাপাড়া এলাকায়।
মৃত মোশাররফ হোসেন খানের স্বজনরা জানান, মোশারারফ হোসেনকে নগরীর জমজম ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় তিনি চিকিত্সক খালেকুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। সেখানে চিকিৎসকরা জানান, তার খাদ্যনালিতে পাথর ধরা পড়েছে। সেজন্য অপারেশন করতে হবে। সেখানে অপারেশন হয়। কিন্তু রোগীর অবস্থার অবনতি হলে ৯ এপ্রিল তাকে রামেক হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানেও আশানারূপ ফল না পাওয়ায় চিকিত্সকরা মোশাররফ হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। আজ শুক্রবার রামেক হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে রোগীকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে উঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ওই সময় রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে আসে। রোগীর স্বজনরা দ্রুত হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সুব্রত রোগীকে 'কর্ষণ' নামে একটি ইনজেকশন দেন। এরপরই রোগীটির মৃত্যু হয়।
রামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, রোগীর মৃত্যুর পরে স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। ওই সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক সুব্রত ও ইন্টার্ন চিকিৎসক আরিফকে লাঞ্ছিত করে রোগীর স্বজনরা। মৃত রোগীর ছেলে বুলু ২ নম্বর ওয়ার্ডের জানালা ভাঙচুর করতে গেলে কাঁচে হাত কেটে যায়।
এদিকে চিকিৎসক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের একটি দল এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে জরুরি বিভাগের সামনে বিক্ষোভ করতে শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়। সেখানে পুলিশের সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিত্সকরা বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশ সেখানে থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের তাড়িয়ে দেয়।
ঘটনার কিছুক্ষণ পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আবার সেখানে ফিরে এসে পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে ও জর'রি বিভাগের জানালা ও যন্ত্রপাতি ভাঙচুর করে। উপস্থিত পুলিশ দ্রুত ওই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
ইন্টার্ন চিকিৎসক হৃদয় অভিযোগ করেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা শান্তিপূর্ণভাবে বিষয়টির প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। ওই সময় পুলিশ তাদের এক ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারপিট করেছে। এ ঘটনায় ওই পুলিশের শাস্তি দাবি করেছেন তারা। ইন্টার্নি চিকিৎসকরা দাবি করেন, পুলিশ ও রোগীর স্বজনরা ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন।
রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহমুদুর রহমান জানান, পুলিশের সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসকের কোনো হাতাহাতির ঘটনা ঘটেনি। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা উদ্যতপূর্ণ আচরণ করেছেন। পুলিশ সেটি ধৈর্য্যের সঙ্গে মোকাবেল করেছে। ঘটনার পর নগর আওয়ামী লীগ নেতাদেও মধ্যস্থতায় চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক চলছে। ঘটনাটি সমাধান করে দ্রুত চিকিৎসকদের তাদের কাজে ফিরিয়ে নিতে বৈঠক চলছে বলে জানিয়েছেন নগর অাওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার।
বিডি-প্রতিদিন/১৫ এপ্রিল ২০১৬/শরীফ