সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্ল্যাক হোল সংঘর্ষ শনাক্ত করেছেন। এই বিরল ঘটনা ঘটেছে ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর। ঘটনাটির নাম দেওয়া হয়েছে GW231123। এটি যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি ও জাপানে অবস্থিত তিনটি মহাকর্ষীয় তরঙ্গ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র—লিগো-ভার্জো-কাগরা (LVK)—এর যৌথ প্রচেষ্টায় ধরা পড়ে।
এ সংঘর্ষে দুটি বিশাল ব্ল্যাক হোল যুক্ত হয়। একটি ছিল সূর্যের চেয়ে প্রায় ১০০ গুণ ভারী, আরেকটি ১৪০ গুণ ভারী। এদের একীভূত হয়ে তৈরি হয় নতুন একটি ব্ল্যাক হোল, যার ভর সূর্যের চেয়ে প্রায় ২২৫ গুণ বেশি।
বিজ্ঞানীদের মতে, সাধারণ নিয়মে এমন ব্ল্যাক হোল গঠনের কথা নয়। কারণ, ৬০ থেকে ১৩০ গুণ সূর্যমাত্রার ভরের মধ্যে থাকা নক্ষত্রগুলো সাধারণত সুপারনোভা বিস্ফোরণে ভেঙে পড়ে। তাই এত বড় ব্ল্যাক হোল কিভাবে তৈরি হলো, তা নিয়ে গবেষকরা বিস্মিত।
কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির গবেষক ও লিগো টিমের সদস্য অধ্যাপক মার্ক হ্যানাম বলেন, এটি এখন পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া সবচেয়ে বড় ও ভারী ব্ল্যাক হোল জোড়া। এটি ব্ল্যাক হোল গঠনের বিদ্যমান ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানায়।
এ ঘটনার আরেকটি অপ্রত্যাশিত দিক হলো, সংঘর্ষে থাকা ব্ল্যাক হোল দুটি ঘুরছিল প্রায় সর্বোচ্চ গতিতে, যা আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুযায়ী অনুমোদিত।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এই স্পিন (ঘূর্ণন) ছিল এতটাই বেশি যে তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট তথ্য বের করতে বেশ বেগ পাচ্ছেন। কারণ, এতে তরঙ্গের ধরন বিশ্লেষণ করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে।
পোর্টসমাউথ ইউনিভার্সিটির ড. চার্লি হয়ের মতে, এই সংঘর্ষ ব্ল্যাক হোল তৈরির বিষয়টি নিয়ে আমাদের জ্ঞানের ভিত্তিকে নড়িয়ে দিয়েছে।
অস্ট্রিয়ার ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক জোলতান হেইম্যান বলেন, এই দুটি ব্ল্যাক হোল সম্ভবত আগের এক বা একাধিক সংঘর্ষ থেকে তৈরি হয়েছিল।
এই ঘটনাটি ধরা পড়ে যখন লিগো গবেষণা কেন্দ্র মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্ত করে। এসব তরঙ্গ হচ্ছে সময়-স্থান বেয়ে ছড়িয়ে পড়া সামান্য কম্পন, যা দুটি বিশাল বস্তু—যেমন ব্ল্যাক হোল—সংঘর্ষে উৎপন্ন হয়।
এর আগে সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ হিসেবে ধরা হয়েছিল GW190521, যা এই নতুন ঘটনার চেয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ ছোট ছিল। বিজ্ঞানীদের আশা, ভবিষ্যতে এর চেয়েও বড় সংঘর্ষ শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল