দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের নার্স ও স্টাফদের প্রতি রাতে খাবার দিচ্ছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আহসান হাবিব ভূঁইয়া। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এ তথ্য জানিয়েছেন তিনি। তিনি দেশে চলমান করোনা সংকট নিয়ে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটা সরকারের সমালোচনার সময় নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেখানে এই মহামারীকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ সঙ্কট হিসেবে উল্লেখ করেছে, সেখানে বিভিন্ন সংকটে থাকা বাংলাদেশে এসব নিয়ে না ভেবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।
ব্যারিস্টার আহসান বলেন, সরকারে যতদিন এমপি ও মন্ত্রী পর্যায়ে অযোগ্য লোক থাকবে ততদিন আমাদের এই রকম বিভিন্ন সংকটে অপ্রস্তুতই থাকতে হবে। আমরা আগেই দেখেছি দেশে খাদ্য ও স্বাস্থ্য খাতসহ বিভিন্ন সেক্টরে ঘাটতি রয়েছে। দেশে যখন আগুন লাগে, ভূমিকম্প হয় ও প্রাকৃতিক দুযোর্গ দেখা দেয় তখন আমরা আমাদের অপ্রস্তুতির বিষয়টি বার বার দেখেছি, এটা নতুন কিছু নয়। সরকারের বোঝা উচিৎ বিভিন্ন সময় এই রকম সংকট পরিস্থিতি মোকাবেলায় যোগ্য লোকদের দায়িত্ব দেওয়া। অযোগ্য লোকদের যতদিন দায়িত্বশীল পর্যায়ে দেখা যাবে ততদিন আমাদের এই দুর্দশা কাটবে না।
এই দুর্দিনে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরে নিজের মধ্যে সুখ খুঁজে পাই। এজন্য আমি বিত্তবান সকলকে যার যার সাধ্যমত সহায়তা নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ব্যারিস্টার আহসান হাবিব আরও বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে গত ২৫ মার্চ থেকে রাজধানীতে খাবার বিতরণ শুরু করি। প্রথম দিকে দিনে এগুলো বিতরণ করতাম। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব না মেনে ঝুঁকি নিয়ে দিনে শত শত মানুষ ভীড় করতে শুরু করলে, তাদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে তা রাতে দেওয়া শুরু করি। কিন্তু সরকারি ঘোষণায় সন্ধ্যা ৬টার পর বাইরে থাকা নিষেধ করায়, সেটা আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। সেসময়ে অবশ্য সরকার ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়।
সুপ্রিমকোর্টের এই আইনজীবী বলেন, এরপর করোনার সংকটে পড়া নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার, যারা লোক-লজ্জায় মানুষের কাছে যেতে পারেন না। তাদের ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দেওয়া শুরু করি। প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত পিকআপভ্যানে করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার এই রকম পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছি। ত্রাণের মধ্যে রয়েছে ৫ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি পিয়াজ, আধা কেজি লবণ, আধা লিটার তেল, আধা কেজি চিনি, ১ কেজি ছোলা, আধা কেজি সুজি, ২ প্যাকেট বিস্কুট, চকলেট, মশার কয়েল, নাপা ওষুধ, স্যালাইন ও মাস্ক।
এরমধ্যে টিভিতে খবরে দেখি কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের নার্স ও স্টাফরা খাদ্য সংকটে। তখন যোগাযোগ করি। পহেলা বৈশাখে নাস্তা পাঠাই। এর মধ্যে জানলাম তাদের দুপুরের খাবার সরকার ব্যবস্থা করছেন। এ কারণে বুধবার রাত থেকে নার্স ও স্টাফদের জন্য প্রতি রাতের খাবার পাঠানো শুরু করেছি বলেও ব্যারিস্টার আহসান হাবিব ভূঁইয়া জানান। উল্লেখ্য, করোনা প্রার্দুভাব দেখা যাওয়ার পর থেকেই রাজধানীতে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষ, দুস্থ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মাঝে খাবার বিতরণ করে আসছেন আহসান ভুঁইয়া। এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন তিনি। তিনি আসন্ন রমজান মাসে কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের নার্স ও স্টাফদের জন্য ইফতার ও সেহরীর ব্যবস্থা করবেন ।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক