বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র প্রভাবে পটুয়াখালীর উপকূলে বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা ও উপজেলায় মোট ৯টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। দুর্যোগকালীন সময় মানুষের যান-মালেরর নিরাপত্তার জন্য আশ্রয়স্থল ৩৩১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সাইক্লোন শ্লোল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
আজ সকাল থেকে গোটা উপকূলে থেমে থেমে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আবার কখনও কখনও হালকা ও মাঝারী বৃষ্টিপাতের সাথে দমকা বাতাস বইছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৫ নম্বর সংকেত দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর কৃর্তক স্থানীয়ভাবে ২ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলায় ঢাকাগামী ডবল ডেকারের লঞ্চ ও অভ্যন্তরীণ রুটের ৬৫ ফুটের নিচের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ।
ঘর্ণিঝড়ের প্রভাবে কুয়াকাটা-সোনারচর সংলগ্ন দক্ষিন বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে অর্ধশতাধিক চরসহ নিম্মাঞ্চল। মাছ ধরার ট্রলারগুলো উপকূলের দিকে ফিরে আসতে শুরু করেছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ছোট ছোট নৌযানসহ মাছ ধরার ট্রলারগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পটুয়াখালী নৌ-বন্দর সহকারী উপ-পরিচালক মাহতাব উদ্দিন শেখ জানান, পটুয়াখালী নদী বন্দরকে ২ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলায় ঢাকাগামী ডবল ডেকারের লঞ্চ এম ভি সুন্দরবন-৯, এম ভি কুয়াকাটা-১, এম ভি মাহিন-রিফাত-১, পূবালী-৭ দোতলা লঞ্চ পটুয়াখালী বন্দর ছেড়ে গেলেও পরে আবার তাদের ফেরত নিয়ে আসা হয়েছে। অভ্যন্তরীন ১২টি নৌ রুটে একতলা লঞ্চ (৬৫ ফুটের নীচের লঞ্চ) চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। যা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
পটুয়াখালী ত্রান ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নেজারত ডেপুট কালেক্টরেট (এনডিসি) আলমগীর হোসেন জানান, দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি ও প্রতিটি উপজেলায় মোট ৯টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। প্রয়োজনীয় মেডিকেল টিমসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সাইক্লোন শেল্টারসহ মোট ৩৩১টি আশ্রয় কেন্দ্র, ২১২ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ৮০ হাজার নগদ টাকাসহ শুকনো খাবার মজুত রাখা হয়েছে। এছাড়া দুর্যোগকালীন সময়ে আরও বরাদ্দ চেয়ে পত্র লেখা হয়েছে।
ক্রমেই 'রোয়ানু' এগিয়ে আসার খবরে পটুয়াখালীতে মানুষের মধ্যে অজানা আতংক বিরাজ করছে। ফলে ব্যবসা বানিজ্যসহ সাধারন মানুষের জীবন যাত্রা ব্যহত হয়ে পড়েছে। সাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২-৩ ফুট নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আতংক ছড়িয়ে পরছে অর্ধশত চরের মানুষের মাঝে। মৎস্য বন্দর আলীপুর, মহিপুর, ঢোস, রাঙ্গাবালী, মৌডুবিসহ বিভিন্ন স্থানে নোঙ্গর করছে ট্রলারসহ জেলেরা।
রাঙ্গাঁবালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষ জানান, জেলার মূল ভূখন্ড থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাঙ্গাঁবালী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুযোগকালীন যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন চরের জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
পটুয়াখালী ও কলাপাড়া আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, পায়রা বন্দরসহ পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায় ৫ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/ ২০ মে ২০১৬/ হিমেল-১৫