ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যাপারে সম্প্রতি সরকার কড়াকড়ি আরোপের পর মানুষ বিআরটিএ অফিসে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে লাইসেন্স নিতে। কিন্তু ঘুষ বাণিজ্য আর দালালচক্রের উৎপাতে তারা বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। বিআরটিএ অফিসে প্রতি পদে পদে হয়রাণির শিকার হতে হচ্ছে লাইসেন্স নিতে আসা মানুষগুলোকে। সরেজমিন ঠাকুরগাঁও বিআরটিএ অফিস ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
ঠাকুরগাঁও বিআরটিএ অফিসে ঘুষ বাণিজ্য যেন নিয়মে পরিনত হয়েছে। ফলে বিআরটিএ অফিসে এসে হয়রানির শিকার হয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেকেই। এমনকি যে ফরমে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয় সেটাও পাওয়া যাচ্ছে না টাকা ছাড়া। টাকা না দিলে শুধু ফরম সংগ্রহ করতেই ঘুরতে হচ্ছে এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে। তবে বিআরটিএ অফিসের জেলা শীর্ষ কর্মকর্তা বলছেন, ঘুষ বাণিজ্য যেন না হয় সে বিষয়ে তাদের বিভিন্নভাবে বুঝানো হচ্ছে। কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে।
তবে তার এ বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবের কোন মিল পাওয়া যায়নি বিআরটিএ অফিস ঘুরে।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ভবনে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় জেলার সার্কেল অফিস হিসেবে অবস্থিত বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) অফিস। এ অফিস সপ্তাহের রবি, সোম ও বৃহস্পতিবারসহ মাত্র তিন দিন খোলা রাখা হয়। এই তিন দিন জেলার পাঁচ উপজেলা থেকে লাইসেন্স গ্রহণে আগ্রহী শত শত মানুষ আসে এ অফিসে। কিন্তু কাজের বিপরীতে হয়রানির শিকার হওয়া যেনো স্বাভাবিক বিষয়। সঙ্গে যোগ করতে হয় ঘুষ, নইলে কোন কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। বাধ্য হয়ে অনেকেই লাইসেন্স না নিয়ে ফিরে যান। যারা এতকিছুর পরও লাইসেন্স নিতে যান, তাদেরকে গুণতে হয় নির্ধারিত ফি'র চেয়ে দুই-তিন গুণ বেশি টাকা।
সদর উপজেলার বাজারপাড়া, হাজীপাড়া, জমিদারপাড়াসহ কয়েকটি উপজেলার সবুজ, রহিম, রফিকুল, রতনসহ অনেকে জানান, বিআরটিএ লাইসেন্স প্রদানের জন্য চলতি এপ্রিল মাসের ৩ তারিখে লাইসেন্স গ্রহণে আগ্রহীদের লিখিত, ভাইবাসহ বিভিন্ন পরীক্ষা নেয়। এতে অংশ নেয় প্রায় ১৫০ জন পরিক্ষার্থী। কিন্তু লিখিত পরীক্ষার ফলাফলের পর ডাকা হয় মাত্র কয়েকজনকে। বাকিরা নাকি সবাই ফেল করেছেন। এতে বেশিরভাগ পরিক্ষার্থী হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। পরে বিআরটিএ ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় সার্কেল অফিসের মটরযান পরিদর্শক জয়নাল আবেদিনের যোগসাজশে লাইসেন্স গ্রহণে আগ্রহীদের কাছ ২ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করা হয়। তারা আরো জানান, টাকা দিলে কোন পরীক্ষাতেই পাশ করতে হয় না, শুধু উপস্থিত থাকলেই হয়। এতে প্রকৃত লাইসেন্স গ্রহণে আগ্রহীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আর ড্রাইভিং না জেনেও অনেকে লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে বিআরটিএ ঠাকুরগাঁও- পঞ্চগড় সার্কেল অফিসের মটরযান পরিদর্শক জয়নাল আবেদিন ঘুষ বাণিজ্যের কথা অস্বীকার করে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
আর বিআরটিএ ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় সার্কেল অফিসের সহকারি পরিচালক ফারুক আলম জানান, আমি চেষ্টা করছি আমার কর্মকর্তাদের বুঝাতে যেন প্রকৃত লাইসেন্স আগ্রহীরা সঠিকভাবে লাইসেন্স পায়।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ