২১ অক্টোবর, ২০১৯ ১৭:১৪

যুদ্ধাপরাধ মামলায় ঝিনাইদহে আওয়ামী লীগ নেতাসহ গ্রেফতার ২

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

যুদ্ধাপরাধ মামলায় ঝিনাইদহে আওয়ামী লীগ নেতাসহ গ্রেফতার ২

আব্দুর রশিদ মিয়া

যুদ্ধাপরাধ মামলায় ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রশিদ মিয়া ও তার আত্মীয় শাহেব আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে সদরের নারায়নপুর ত্রীমোহনী থেকে ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করে। আওয়ামী লীগ নেতা মিয়া আব্দুর রশিদ এ সময় ডাকবাংলা চালকল মালিক সমিতির নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছিলেন।

ঘটনাস্থলে থাকা হলিধানী ইউনিয়নের মেম্বার মতিয়ার রহমান ও সাগান্না ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক জানান, দুপুরের দিকে সাদা পোশাকের একদল লোক আব্দুর রশিদকে তুলে নিয়ে যায়। আমরা তাদের চিনতে পারিনি।

ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানান, মানবতাবিরোধী মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা অনুয়ায়ী আব্দুর রশিদ ও শাহেব আলী নামে দুইজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। অনুসন্ধান করে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ সদর উপজেলার কোলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ও সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য আশির উদ্দীন তার এলাকার ৬ রাজাকারের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। যার নং ঝি/সি ৭৯/০৯। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি প্রাথমিক অনুসন্ধান করে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসিকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপে সে সময় মামলাটি আপোষ রফা করতে বাধ্য হন মুক্তিযোদ্ধা আশির উদ্দীন।

অভিযোগপত্রে আশির উদ্দীন উল্লেখ করেন, ৭১ সালে পাকিস্তানি পক্ষ ত্যাগ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি দেশ স্বাধীনের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগ দেন। এ খবর জানতে পেরে রাজাকার মসলেম উদ্দীন, আব্দুর রশিদ, আলাউদ্দীন, হাকিম আলী খোন্দকার, শাহজাহান, আসমত ও শাহেব আলীসহ ৫০ জন রাজাকার কোলা গ্রামে তার বাড়ি ঘেরাও করে। আশির উদ্দীন ও তার আরেক ভাই মহিরুদ্দীন এ সময় কাশিপুর গ্রামের দিকে পালিয়ে যায়। রাজাকাররা তাদের দুই ভাইকে না পেয়ে বড় ভাই আজিবর মন্ডল, হবিবার মন্ডল ও আনসার মন্ডলকে ধরে নিয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ঘোড়ামারা গ্রামের ব্রিজের নিচে হত্যার পর লাশ গুম করে। আসামিরা এ সময় তাদের ৫টি ও পাশ্ববর্তী গ্রামের আরো ২৫টি বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেন। রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়ে আহত করে বৃদ্ধ পিতা দুখি মাহমুদ ও মা কামিনী খাতুনকে। মুক্তিযোদ্ধা আশির উদ্দীনের মৃত্যুর পর তার ভাতিজা আনোয়ার হোসেন দেশে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালে আরেক দফা অভিযোগ করেন বলে তাদের পারিবারিক সূত্রে বলা হয়েছে।

গত ৯/১০ মাস আগে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনাল থেকে তদন্তে মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া ও স্বজনদের হত্যার প্রমাণ সংগ্রহ করে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, দেশ স্বাধীনের পর আইডিএল, জামায়াত, চরমপন্থি সংগঠন হক গ্রুপ, সর্বহারা ও সর্বশেষ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন রাজাকার আব্দুর রশিদ।

ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের আশ্রয় প্রশ্রয়ে রাজাকার থেকে রাতারাতি আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে নৌকা প্রতীকে ইউপি নির্বাচন করেন এবং বিপুল ভোটে জয় লাভ করেন। তার দুই ছেলে হারুন ও বজলুর রশিদও যুবলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। চাঁদাবাজি, ইয়াবা, অস্ত্র ব্যবসা ও শালিস বিচারের নামে কোটি কোটি সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন এই রাজাকার পরিবার। তাদের অত্যাচারে হলিধানী ইউনিয়নের মানুষ এক রকম অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। গুজব আছে আওয়ামী লীগকে সিঁড়ি বানিয়ে ঝিনাইদহ, ঢাকা ও ভারতেও বাড়ি তৈরি করেছে রাজাকার আব্দুর রশিদ।

এ বিষয়ে আব্দুর রশিদের বড় ছেলে হারুন অর রশিদ জানান, কে বা করা আমার পিতাকে ধরে নিয়ে গেছে তা আমি বলতে পারি না। তবে ঝিনাইদহের কোন জায়গায় খুঁজে আমি আমার পিতার সন্ধান পাইনি। 

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর