ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে গোটা সাতক্ষীরা। গাছ চাপা পড়ে করিমন নেছা নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। গাছ পড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে সাতক্ষীরার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার কমপক্ষে ২০ টিরও বেশী পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে উপকূলীয় দুটি উপজেলার পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, গাবুরা, রমজান নগর ও প্রতাপনগর ইউনিয়নের অনন্ত ১৫টি গ্রাম।
জোয়ারের প্রবল স্রোতে পানিতে ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ছোট-বড় পুকুর। বিধ্বস্ত হয়েছে সহস্রাধিক কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি। আহত হয়েছে কয়েক হাজার গবাদিপশু। সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ সড়কসহ অসংখ্য গাছপালা উপড়ে জেলার বিভিন্ন রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সাতক্ষীরার সুস্বাধু আম,কাঁঠাল,কলাসহ অসংখ্য ফলজ বৃক্ষের।
সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মাপুকুর, গবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, রমজান নগর ও আশাশুনির কুল্যা, শ্রীউলা ও প্রতাপনগর ইউনিয়নের পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২০টির বেশি পয়েন্টে কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চাউলখোলা এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২০০ ফুটের মতো এলাকা ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এছাড়া বন্যতলা,কামালকাটি ও চন্ডিপুর এলাকায় পানি ওভার ফ্লো হয়ে ভেঙ্গে কামালকাটি, ঝাঁপা, চন্ডিপুর, খুঁটিখাটা, চাউল খোলা, পদ্মপুকুর, দক্ষিন ঝাপা, সোনাকালীসহ আশে পাশের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়। ভেসে যায় হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের। তবে জোয়ারের পানি কমে নদীতে ভাটার সময় এলাকা থেকে পানি নেমে যায়।
কামালকাটি ৫টি ক্লোজারের মধ্যে তিন ক্লোজার চেয়ারম্যান মেম্বরদের নেতৃত্বে মেরামত করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া গাবুরা ইউনিয়নের জেলেখানি ও নাপিতখালী এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে।
আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলিফ রেজা জানান, সুপার সাইক্লোন আম্ফানের কারণে উপজেলার ২৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধগুলি মেরামতের চেষ্টা চলছে। ৮ হাজার ৬শ’ ৯৮ হেক্টর মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়েছে। কৃষি ৩শ’২৯ হেক্টর জমির ক্ষতি হয়েছে। সম্পূর্ণ ঘরবাড়ি বিনষ্ট হয়েছে ৭ হাজার ৮শ’৫০টি ও আংশিক ক্ষতি হয়েছে ১৫ হাজার ৬শ’ ঘরবাড়ী। এছাড়া এলজিইডির ৩০ কি. মিটার রাস্তার আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, সুন্দরবন জীবন রক্ষা তাবিজ হিসাবে প্রাণহানির হাত থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষা করেছে। ঘণ্টায় ১০০-১২০ কিলোমিটার গতিবেগে বিকেল ৪টার পর থেকে সুন্দরবন উপকূলে আম্ফাান আছড়ে পড়ে। এরপর সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত ১৪৮ কিলোমিটার গতিবেগে পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে ঝড়ো হাওয়াটি প্রবল বেগে প্রবাহিত হয়। সুপার সাইক্লোনটি সুন্দবনের উপরে আছড়ে পড়ার কারণে বাতাসের গতি অনেক উপরের দিকে উঠে যায়। যার কারণে ক্ষয়-ক্ষতি অনেক অংশ কম হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল