১১ জুলাই, ২০২০ ১৪:১৮

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তরুণের আত্মহত্যা

লাকসাম প্রতিনিধি

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তরুণের আত্মহত্যা

কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে ফিরোজ আলম তুহিন (২৫) নামক এক তরুণ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। ওই তরুণ উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের আশিয়াদারি গ্রামের তসলিম হোসেন সেলিমের একমাত্র ছেলে। সে চাঁদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করেভছ বলে জানা যায়।

ফেসবুক স্ট্যাটাস সূত্রে জানা যায়, পরিবারের চাপ, ভবিষ্যৎ চিন্তা-ভাবনা, চাকরিসহ এসব নানা বিষয়ে তুহিন হতাশায় ভুগছিলেন। গত তিনমাস থেকে এসব নানা মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেয়। জানা যায়, ওই তরুণ নিজের ফেসবুকে শেষ স্ট্যাটাস দেয়ার কিছুক্ষণ পর বিষপান করেন। তাৎক্ষনিক তাকে স্বজনরা নোয়াখালির মাইজদি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে মৃত্যুবরণ করেন।

সেই তরুণ স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, আসলে আমি কি? জীবনে না পারলাম বাবা-মায়ের ভালো সন্তান হতে! না পারলাম বোনদের ভালো একজন ভাই হতে, না পেরেছি অনাত্মীয় স্বজনদের কাছে ভালো কেউ হতে! এমন কি কারো মনের মতোও হতে পারিনি যদিও কারো কাছে এখনো অনেক প্রিয় কিন্তুু তার ফ্যামেলির কাছে যোগ্য হতে পারিনি। বন্ধুদের কাছে ভালো বন্ধু হয়ে উঠতে পারিনি। জীবনে শুধু সমস্যা আর সমস্যা! পরিবারের চাপ, ভবিষ্যৎ চিন্তা ভাবনা, চাকরি, লাইফ পার্টনার, ডিপ্রেশন সব মিলিয়ে মনে হয় দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ ৩ মাস থেকে মানসিক সমস্যায় ভুগতে ভুগতে আজ আমি ক্লান্ত। অনেক চেষ্টা করেছি সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কিন্তু পারিনি।। হয়তো শুধু এই সময়টায় একজন মানুষের দরকার ছিলো যে টেনে তুলবে এই সমস্যা থেকে কিন্তু কাউকে পাইনি। না পরিবারের কাউকে পেয়েছি, না বন্ধুদের ,না যাকে ভালোবাসতাম তাকে পেয়েছি, কাউকে না। কিন্তু কষ্টটা সেখানেই সবাই দেখেছে আমি দিনদিন কেমন হয়ে যাচ্ছি কিন্তু কেউ পাশে থেকে বলেনি যে চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে। বিশেষ করে সেই মানুষটা যে বলার সবচাইতে বেশি দরকার ছিলো সেও কখনো বলেনি। কিন্তু সবার থেকে বেশি সেই জানতো। সবার চোখের সামনে দিয়েই আমার জীবনটা শেষ হয়ে যাচ্ছিলো কেউ পাশে এসে দাঁড়ায়নি। ডিপ্রেশন মানুষকে শেষ করে দেয় কথাটা শুনেই আসছি এতো দিন কিন্তু এখন নিজেকেই দেখছি। মাইগ্রেন এর সমস্যা যাদের আছে তাদেরকে কষ্ট কি জিনিস শিখাতে হয় না, তাদের কষ্টের দ্বারাই তাদের নিজকে শেষ হতে হয়!

কি করা উচিত এই লাইফের? আমি যে আর পারছি না। সবাইকে ছেড়ে যেতে অনেক কষ্ট হবে কিন্তু এই সব চাপ নিয়েও থাকতে পারছি না আর। পরিবারের বাবা, মা, বোন, ভাগিনা-ভাগনি, প্রিয় মানুষ, বন্ধুদের সবাইকে ছেড়ে থাকাটাও কষ্টের হবে কিন্তু সেই কষ্টটা এ দুনিয়াতে আর দেখতে হবে না। যাই হোক সবাই ভালো থাকুক এটাই চাই। বিশেষ করে তারা যারা ভালো থাকার জন্য আমায় ভালো থাকতে দেয়নি তারা সবাই ভালো থাকুক। আর কোন দিন না খেয়ে থাকলে মা তোমার বকতে হবে না। সারারাত বাইরে বাহিরে থাকলে তোমার টেনশন করতে হবে না। রাতে না ঘুমালেও তোমার বকতে হবে না। মাকে টাকার জন্য বিরক্ত করবো না। বাবার আর কোন চিন্তা থাকবে না ভবিষ্যৎতে কি করবো, না করবো নিয়ে। মাকে আর আমার জন্য বাবার বকা শুনতে হবে না। জীবনে সবচাইতে বড় উপহার পেয়েছিলাম আমার ৩ বোনকে। তাদের মতো বোন পাওয়াটা আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার। তাদের নিয়ে মজা করা হবে না, কোন দিন বলা হবে না তোরাই তো আমাদের কোন দিন আর হাসি ঠাট্টা হবে না তাদের সাথে। বড় আপুর কাছে আর কোন দিন ভাই টাকা চাইবে না। মেঝ আপুর সাথে আর কথা হবে না। ছোট বোনের বাড়িতে যাওয়া হবে না, ফোন করে খবর নেয়া হবে না। কোন বোন আর বলবে না আসফাকে বেশি আদর করি। তামিকে আর কোনদিন মারবো না। তাসিন-আবিরকে আর কোলে নিবো না। রাইসার সুন্দর সুন্দর ফটো আর ফেসবুকে ছাড়া হবে না। কাকারা মামারা ফুফুরা আর কেউ কোন দিন বলতে হবে না বয়স অনেক হইছে কোন কাজ কি আর করবি না। দাদিকে আর কোন দিন বকা দিবো না। মামার কাছে আর ফোন চাইবো না।। আর কেউ কোন দিন ক্রিকেট খেলতে ডাকবে না, ফুটবল খেলার জন্য কেউ ডাকবে না।। পাড়ায় বসে তাস খেলা হবে না।। বড় ভাই বন্ধুদের সাথে বসে আর আড্ডা দেওয়া হবে না। রাত জেগে ফুটবল খেলা দেখা হবে না। খেলা নিয়ে কারো সাথে তর্কাতর্কি হবে না।। সবই একনিমিষে শেষ হয়ে যাবে।

সব মিলিয়ে সবাই একদিন ভুলেই যাবে। প্রশ্ন শুধু একটাই কেউ কি কোন দিন আমার নিরবতা একাকীত্ব দেখেনি? হয়তো আমার রাতের অজস্র কান্না কেউ দেখেনি। কিন্তু আমার ডিপ্রেশন সবাই দেখেছে কেউ কিচ্ছু করেনি পরিবারের কেউও না এমনি যাকে সবার চাইতে আলাদা করে দেখতাম সেও দেখেও দেখে নি। যাক এটাই ছিলো আমার ভাগ্যে লিখা। সবাই পারলে ক্ষমা করে দিয়েন। জীবনে অনেকের মনে অনেক ভাবে কষ্ট দিয়েছি সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি হয়তো আর কোন দিন ক্ষমা চাইতে পারবো না এটাই শেষ সুযোগ।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর