১৩ জুলাই, ২০২০ ১৩:২১

প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর বাংলার মানুষ

গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর বাংলার মানুষ

ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছাসের সাথে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে টিকে আছে  চর বাংলার মানুষ। এটি পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার উপকূলীয় এলাকা চরবিশ্বাস ইউনিয়নের্র বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ। 

দ্বীপটির চতুর্পাশ নদী দ্বারা বেষ্টিত। নয়নাভিরাম সবুজ বনভূমিতে ঘেরা প্রায় সাড়ে পাঁচশত একর ভূমি অধ্যুষিত এলাকার নামই হল চর বাংলা। এখানে প্রায় তিন হাজার লোকের বসবাস। শিশুদের লেখাপড়ার জন্য শুধু মাত্র ৩ জন শিক্ষক মন্ডলীর মাধ্যমে একতলা ভবনে পরিচালিত একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। 

প্রাথমিক বিদ্যালয় পাঠ শেষ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য তেঁতুলিয়া নদী পার হয়ে আসতে হয় চরবিশ্বাস ও চরকাজলে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ বন্যা বা আমাবস্যা-পূর্নিমার জোয়ারের সময় অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত হয়ে তলিয়ে যায় বসবাসরত সকল ঘরবাড়ি। প্রতি মূহুর্তে গুনতে হয় মৃত্যুর প্রহর। 

অতিরিক্ত পানি থেকে রক্ষার জন্য নেই কোন বেড়ি বাঁধ। বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শুধুমাত্র তাদের ভরসাস্থল হল পুরনো ফাটল ধরা মেরামত করা একতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি। সেখানে বন্যার সময় এতলোক আশ্রয় নেয়ার মত নেই পর্যাপ্ত জায়গা। এখানে সর্বোচ্চ আশ্রয় নিতে পারে দুই থেকে তিনশত মানুষ। 

সরকারিভাবে গরীবদের বসবাসের জন্য তৈরি আশ্রয়ণ কেন্দ্র ছাড়া সমস্ত ঘরগুলো মাটির তৈরি ভিটের উপরে টিনশেট। এছাড়া শিয়ালের আর্ত চিৎকার রাতের নিরবতাকে ভেঙ্গে দেয়। প্রকৃতির কোলে রাতে যখন ঘুমিয়ে থাকে এ দ্বীপের মানুষজন তখন তাণ্ডব চালায় শিয়াল। 

পাশের বনভূমি থেকে আসা শিয়ালের ভয়ে রাতে ঘুমানোর সময় শিশুদের রাখতে হয় নিরাপত্তার স্বার্থে খাঁচার ভিতরে। তার কারণ শিয়াল মাটি খুড়িয়ে শিশুদের ঘুমন্ত অবস্থায় ধরে নিয়ে গিয়ে খেয়ে ফেলে। অনেক সময় বয়স্ক ব্যক্তিদেরও আক্রমণ করে থাকে। এদের আক্রমন থেকে রক্ষা পায়না হাঁস-মুরগীসহ গবাদিপশু। এছাড়া আরও আছে বৃহৎ প্রকৃতির অজগরসহ বিশাক্ত সাপের আস্তানা। এলাকার মানুষজন জীবীকা নির্বাহ করে থাকে কৃষি ও মৎস আহরোন-বিক্রয় করে।        

এ বিষয়ে চর বাংলা মসজিদের ঈমাম মো. আ. রব, মো. সোহরাব আকন ও রফিক সরদার  জানান, এই এলাকায় বেড়ি বাঁধ না থাকায় স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় গোটা এলাকার ঘরবাড়ি। তাই আমাদের চারপাশ দিয়ে বেড়ি বাঁধ অতি দ্রুত দরকার। বন্যার সময় আশ্রয় নেয়ার জন্য নেই কোন বড় ভবন। বাচ্চাদের লেখাপড়ার জন্য শুধু মাত্র একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া নেই কোন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। 

তারা আরও জানান, এ বিষয়ে  প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, তিনি যেন মানবিকভাবে অতি দ্রুত আমাদের সমস্ত সমস্যার সমাধান করে দেন। 

এ বিষয়ে চরবিশ্বাস ইউপি চেয়ারম্যান মো. বাবুল মুন্সী জানান, চর বাংলার মানুষজন ও ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য বেড়ি বাঁধ এবং ঘূর্ণিঝড় আশ্রায়ণ কেন্দ্রের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি, হয়ত পাশ হয়ে আসলে সমস্যার সমাধান করা হবে।  

এ ব্যাপারে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ্ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।                                                                  

 

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ তাফসীর

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর