বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাইপাস ব্রিজের ঢালে স্ত্রী রাশিদা বেগমকে (৩২) হাতিুরীপেটা এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর ১০ মাসের শিশু পুত্রকে রাস্তায় ফেলে পালিয়েছে স্বামী তামিম শেখ। এ ঘটনার পর গোপলগঞ্জ সদর থেকে ঘাতক তামিমকে (৪০) গ্রেফতার করে আগৈলঝাড়া থানা পুলিশ। বুধবার গভীর রাতে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। পুলিশ ওই রাতেই শিশুটিকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে তার মামার জিন্মায় দিয়েছে।
নিহত রাশিদা বেগম আগৈলঝাড়া উপজেরার নগরবাড়ি এলাকার মৃত মো. করিমের মেয়ে। গ্রেফতারকৃত তামিম শেখ গোপালগঞ্জ সদরের বেতগ্রাম এলাকার মৃত আনোয়ার শেখের ছেলে।
গত ৩ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। এটি তাদের উভয়ের দ্বিতীয় বিয়ে। এর আগে তামিমের প্রথম স্ত্রীর ঘরে স্ত্রী ও দুই সন্তান এবং রাশিদার প্রথম স্বামীর ঘরে ২টি সন্তান রয়েছে। প্রথম স্বামীকে তালাক দেয়ার পর তামিমকে দ্বিতীয় বিয়ে করে আগৈলঝাড়া সদরের এক নম্বর ব্রীজ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন তারা। তাদের ঔরসে ১০ মাস বয়সের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।
আগৈলঝাড়া থানার ওসি গোলাম সরোয়ার জানান, বুধবার রাত দেড়টার দিকে স্থানীয়দের দেয়া সংবাদের ভিত্তিতে বাইপাস ব্রীজের ঢাল থেকে রাশিদা বেগমের রক্তাত্ব রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে। হাতুরী পেটার পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। ঘটনাস্থলের আশপাশে নবজাতকের কান্নার শব্দ শুনে ৫শ জন দূর থেকে তার ১০ মাস বয়সের শিশুপুত্র তানিমকে উদ্ধার করে পুলিশ। ওই রাতেই রাশিদাকে শনাক্ত করে তার ভাই আমিনুল ইসলাম। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে তামিমকে গোপালগঞ্জের বেত গ্রাম থেকে রক্তমাখা জুতা ও জামা-কাপড়সহ গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তামিম পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রী রাশিদা বেগমকে হাতুরী পেটা করে কুপিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে। এই হত্যাকান্ডে তামিমের আরেক বন্ধু অংশ নেয় বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
ওসি আরও জানান, পারিবারিক নানা কলহের জের ধরে স্ত্রী রাশিদাকে হত্যার পরিকল্পনা করে তামিম। এর অংশ হিসেবে খবর দিয়ে রাশিদাকে বুধবার আগৈলঝাগা থেকে গোপালগঞ্জ সদরে নিয়ে গিনি আবাসিক হোটেলে রাখা হয়। দিনভর সেখানে থাকার পর ওইদিন রাত সাড়ে ৮টায় একটি মাহেন্দ্রযোগে আগৈলঝাড়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন তারা। সাথে ছিলো তামিমের আরেক বন্ধু। পথিমধ্যে আগৈলঝাড়া বাইবাস ব্রিজ এলাকায় মাহেন্দ্রটি ছেড়ে দেয় তারা। পরে পূর্ব পরিকলপনা অনুযায়ী ব্রিজের ঢালে নামিয়ে রাশিদাকে উপর্যপুরি হাতুরীপেটা করে তারা। এক পর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে রাশিদার মৃত্যু নিশ্চিত করার পর তীব্র শীতের মধ্যে ১০ মাস বয়সের শিশুকে অদূরে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় তারা।
আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, রাশিদার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল মর্গে প্রেরন করা হয়েছে। অপর ঘাতককে গ্রেফতারের জন্য গোপালগঞ্জসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে। উদ্ধারকৃত শিশুটিকে তার মামার জিন্মায় দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন পুলিশ পরিদর্শক মাজহারুল ইসলাম।
বিডি প্রতিদিন/এএ