পাহাড়ের পাদদেশে ঘেরা এক মনোরম বাগানে বাস করত টিকু আর গ্যাংগু। টিকু ছিল ছোট্ট টিকটিকি, আর গ্যাংগু এক গোলগাল কোলা ব্যাঙ। তাদের স্বভাবের মধ্যে ছিল আকাশপাতাল পার্থক্য। টিকু ছিল কাজপাগল, সবসময় ব্যস্ত আর সজাগ। অন্যদিকে, গ্যাংগু ছিল আরামপ্রিয়, অলস আর একটু বেশি আত্মতুষ্ট। তবুও এই বৈচিত্র্যের মধ্যেই তাদের বন্ধুত্ব ছিল মজবুত। বসন্তের এক বিকালে, বাগানে আলোছায়া খেলা করছিল। টিকু তার প্রিয় গাছের ডালে বসে ভাবছিল, কিছুদিন পর বর্ষা আসবে। পাহাড়ি নদীর জল বেড়ে যাবে, আর আশপাশের জায়গাগুলো ভেসে যাবে। গ্রীষ্মের এই সময়টা তাদের জন্য অনেক কাজের। টিকু জানত, এই সময় খাবার মজুত করতে হবে, নয়তো বর্ষার জল তাদের অনেক সমস্যা তৈরি করবে অন্যদিকে, গ্যাংগু পুকুরের ধারে একটা বড় পাথরে বসে নিজের মতো করে গা এলিয়ে রোদ পোহাচ্ছিল। তার ধারণা ছিল, প্রকৃতি সবসময় তার জন্য যথেষ্ট খাবার সরবরাহ করবে। গ্যাংগু মনে মনে ভাবল, এত কষ্ট করে খাবার জোগাড় করার কী দরকার। সময় গড়িয়ে গেল। বর্ষা এসে হাজির। প্রবল বৃষ্টি আর পাহাড়ি স্রোত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। বাগানের গাছগুলো জলের নিচে তলিয়ে যেতে লাগল। টিকু বর্ষার আগে থেকেই নিজের ছোট্ট গুহায় পোকামাকড় জোগাড় করে রেখেছিল। এখন তার দিন বেশ ভালোই কাটছিল। গ্যাংগু ভীষণ বিপদে পড়ল। পুকুরের পাথর তলিয়ে গেছে। জলের স্রোতে পোকামাকড়গুলোও পালিয়েছে। ক্ষুধার্ত গ্যাংগু পাহাড়ের ওপরে আশ্রয় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। একদিন গ্যাংগু পাহাড়ের নিচে টিকুর গুহার কাছে এসে উপস্থিত হলো। টিকু তখন তার খাবার সাজাচ্ছিল। গ্যাংগু দূর থেকে দেখল, টিকু আরামে বসে খাচ্ছে। এত খাবার দেখে গ্যাংগুর চোখ চকচক করে উঠল। গ্যাংগু পাহাড় চড়তে শুরু করল। ভেজা পাথরে লাফাতে লাফাতে সে বেশ কষ্টে ওপরে উঠল। শেষে সে টিকুর গুহার কাছে পৌঁছল। টিকু জানত, গ্যাংগু এতদিন তার উপদেশ শুনে কিছুই করেনি। তবু বন্ধুর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে সে তাকে খাবার দিল। গ্যাংগু খেয়ে প্রাণ ফিরে পেল। সে ভীষণ লজ্জিত হলো। সে বুঝল, টিকু যা করেছিল, সেটাই সঠিক ছিল। বর্ষার আগে পরিশ্রম না করার মাশুল তাকে দিতে হয়েছে। বর্ষা শেষে তারা আবার বাগানে ফিরে এল। এবার গ্যাংগু সিদ্ধান্ত নিল, আর কখনো অলস থাকবে না। বর্ষার আগেই সে খাবার সংগ্রহ করবে। টিকু তাকে একদিন পাহাড়ের ওপরে নিয়ে গেল। পাহাড়ের চূড়া থেকে নিচের বাগানকে অন্যরকম লাগছিল। টিকু তাকে শিখাল, প্রকৃতি কখনো অলসদের জন্য অপেক্ষা করে না। সময়ের কাজ সময়ে না করলে, তার ফল ভুগতে হয়। গ্যাংগু বুঝল, প্রকৃতি তাদের শেখাতে চায় কেবল পরিশ্রম আর সতর্কতাই জীবনের কঠিন পরীক্ষাগুলোকে সহজ করতে পারে। তাদের পাহাড়ের এই অভিযানে গ্যাংগু নতুন জীবনদর্শন পেল। বর্ষার পরের বসন্তে, গ্যাংগু আর টিকু একসঙ্গে বাগানের অন্য প্রাণীদেরও শিখিয়ে দিল, কীভাবে সময়মতো কাজ করে বর্ষার জন্য প্রস্তুত হতে হয়। তাদের এই অভিযানের গল্প বাগানের প্রাণীদের মধ্যে রূপকথার মতো ছড়িয়ে পড়ল। পাহাড়, বৃষ্টি আর বন্ধুত্বের এই গল্প প্রমাণ করল, ভিন্ন স্বভাবের হলেও প্রকৃত বন্ধুরা একে অপরকে শেখাতে পারে জীবনের সেরা পাঠ।