পরমতসহিষ্ণুতার আদর্শ ইসলাম সর্ব ঊর্ধ্বে তুলে ধরে বিশ্বমানবতার প্রতি যে শ্রদ্ধা ও অকৃত্রিম ভালোবাসা প্রদর্শন করেছে তা এক অতুলনীয় বিষয়। ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) এই আদর্শিক চেতনা থেকে কখনো এতটুকু বিচ্যুত হননি। একবার জনৈক বেদুইন নিজের প্রয়োজন পূরণের বিষয়ে মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ করলে তিনি বললেন— ‘তুমি আমার সঙ্গে যে ব্যবহার করেছ তার বদলা নেওয়া হবে।’ বেদুইন বলল ‘না’। তিনি বললেন— ‘কেন? বেদুইন বলল : কারণ আপনি মন্দের বদলা মন্দ দিয়ে নেন না। এ কথা শুনে রসুল (সা.) হেসে ফেললেন এবং তার প্রয়োজন পূরণ করে দিলেন।’ (ইবনে হিশাম)
ইসলাম যে একটি অসাম্প্রদায়িক দীন তা পৃথিবীবাসী বারবার প্রত্যক্ষ করেছে। ইসলামের নবী (সা.) তার নবুয়তি জীবনের পুরোটা সময় অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যয় করেছেন। তিনি বলেছেন, আরব-অনারব, কালোর ওপর সাদার কিংবা সাদার ওপর কালোর কোনোই প্রাধান্য বা শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘জাহেলি যুগের আত্মম্ভরিতা ও জাত্যাভিমান এবং বাপ-দাদাদের নিয়ে একে অন্যের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শনের রীতি আল্লাহতায়ালা অবশ্যই অপসৃত করেছেন।’ (ইবনে হিশাম) সমাজে বর্ণ, শ্রেণি, ধর্ম, পেশা, আঞ্চলিকতাসহ সব ধরনের সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ইসলাম ঘোষণা দিয়েছে এভাবে— ‘ইসলামে সাম্প্রদায়িকতা ও জাত্যাভিমানের কোনো স্থান নেই।’ (মিশকাত) অন্যত্র বলা হয়েছে— ‘যে ব্যক্তি সাম্প্রদায়িকতার আহ্বান জানার বা সাম্প্রদায়িকতার বশবর্তী হয় তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু। একবার সাহাবি বললেন, হে আল্লাহর রসুল স্বীয় সম্প্রদায়ের প্রতি ভালোবাসা পোষণও কি সাম্প্রদায়িকতার অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেন— ‘না সাম্প্রদায়িকতা হলো অন্যায় ও জুলুমের ক্ষেত্রেও স্বীয় সম্প্রদায়কে সহযোগিতা দান করা তাদের পক্ষ অবলম্বন করা। পারস্পরিক বিদ্বেষপরায়ণতা শত্রুতা, প্রতিহিংসা ইত্যাদি যেসব বিষয়ে ন্যায় ও সুবিচার বাধা হয়ে দাঁড়ায় সে সমস্ত দুষ্ট আবেগকে পর্যন্ত ইসলামে পদদলিত করা হয়েছে।’ ইরশাদ হয়েছে— কোনো সম্প্রদায়ের প্রতিহিংসা বিদ্বেষ যেন সুবিচার প্রতিষ্ঠা না করতে তোমাদের উত্সাহিত না করে সর্বাবস্থায় তোমরা সুবিচার প্রতিষ্ঠা করবে। এটাই তাকওয়ার অধিক নিকটবর্তী।’ (সূরা মাদিদা-৫:৮)
ইসলাম পরমতসহিষ্ণুতায় কতটা আন্তরিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চয় সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ইসলামে পরমত ও পরধর্ম সহিষ্ণুতার এই আদর্শ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শিক্ষা যদি বর্তমান বিশ্ব সমাজ ব্যবস্থায় অনুসৃত হতো, তবে সর্বত্র এত হানাহানি, রক্তপাত, উগ্রপন্থা ও দাম্ভিকতার অবসান ঘটত নিঃসন্দেহে।
ইসলামের দিকনির্দেশনা ও শিক্ষা বর্তমান মুসলিম সমাজের কতিপয় উগ্রপন্থির বিকৃত আবেগের কারণে বিতর্কিত। শান্তির ইসলাম অমুসলিম সমাজের কাছে ভীতিকর বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহ আজ মহাসংকটের সম্মুখীন। আমরা ইসলামের উদার শিক্ষার আলোকে একটি শান্তিময় সমাজে বসবাস করতে চাই। এই শান্তিময় উদার ও অসাম্প্রদায়িক একটি আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার মহত্ কাজে চলুন আমরা সবাই সচেষ্ট হই। এ কাজে ইসলাম ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ নেই। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন। আমিন।