দেশের মানুষের আয় বাড়ছে। চরম নিন্দুক ছাড়া কেউ এ সত্যটি অস্বীকার করবেন না। তবে জীবনযাত্রার ব্যয় যে হারে বাড়ছে তাতে হিসাব মেলাতে গিয়ে অসহায় হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। তাদের আয় গত এক বছরে যতটুকু বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে তার চেয়ে বেশি। সোজা কথায় লাভের গুড় পিঁপড়ায় তো খেয়ে যাচ্ছেই, উপরন্তু সঞ্চিত অর্থেও টান পড়ছে। বাংলাদেশ কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশনের (ক্যাব) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাথাপিছু আয় বাড়লেও তার সুফল পাচ্ছে না নিম্ন ও মধ্য আয়ের ১২ কোটি মানুষ। যার অর্থ দাঁড়ায় দেশের ৭৫ ভাগ মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির নির্মম শিকারে পরিণত হচ্ছে। ক্যাবের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৮.৪৪ শতাংশ। তাদের এ হিসাব শিক্ষা, চিকিৎসা ও যাতায়াত ব্যয়ের বাইরে। ক্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি পরিবারে প্রতিদিন দরকার হয় এমন সব পণ্যের দামই আগের বছরের চেয়ে গত বছর ৫ থেকে ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। চাল, তেল, লবণ, পিয়াজ, শাক-সবজি, মাছ-মাংসের নাম রয়েছে মূল্যবৃদ্ধির তালিকায়। চালের দাম ২০ শতাংশেরও বেশি বাড়ায় স্বল্প ও মধ্য আয়ের সব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব ধরনের সবজির দরও বেড়েছে ২৪ শতাংশের বেশি। পিয়াজের দর বেড়েছে আরও বেশি ৫৭.৫৭ শতাংশ পর্যন্ত। এ ছাড়া লবণ ও ভোজ্যতেলের মতো অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের দরও বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি। কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে আগের বছরের চেয়ে ৪৪ শতাংশ। বাসা ভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে প্রতি মাসেই বাড়তি খরচ যোগ হয়েছে সব পরিবারে। নিত্যপণ্যের মধ্যে শুধু আলু, মসুর ডাল, ফার্মের মুরগির ডিম ও রসুনের দাম আগের বছরের তুলনায় কমেছে। সন্দেহ নেই, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছে। বার্ষিক জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের বেশি, যা দুনিয়ার প্রায় সব দেশের জন্য ঈর্ষণীয়। কিন্তু আয়ের তুলনায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হার বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষের ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। সমাজের এক ক্ষুদ্র অংশের সম্পদ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেলেও অন্যদের প্রতিকূল অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। এ অবস্থায় জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্যোগ নিতে হবে। জনগণের কাছে সরকারের গ্রহণযোগ্যতার স্বার্থে বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের দাবিদার।