আমলের প্রতি আগ্রহের অন্যতম কারণ হচ্ছে লাভের আশা-ভরসা। মানুষ যখন আমলের বিনিময়ে লাভ ও কল্যাণ উপলব্ধি করে তখন তার জন্য সেই আমল করা সহজ হয়। যদি সেই আমলের জন্য তার বাদশাহিও পরিত্যাগ করতে হয়, তাতেও কোনো চিন্তা বোধ করে না।
ইবরাহিম ইবনে আদহাম যিনি বলখের সর্বজনপ্রিয় বাদশাহ ছিলেন। দেশবাসী ও মন্ত্রীরা তাকে আজীবন বাদশাহ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এ সময় তিনি শাহি শান-শওকত, তখত ও তাজ পরিত্যাগ করে ফকিরির লেবাস গ্রহণ করেন এবং গভীর জঙ্গলে আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন হন। এদিকে দেশবাসী তার অনুপস্থিতিতে অস্থির ও কাতর হয়ে পড়ে। দেশবাসীর অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী ও বুদ্ধিজীবীরা জঙ্গলে গিয়ে ইবরাহিম ইবনে আদহামের কাছে হাজির হয়ে পুনরায় রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব গ্রহণ এবং শাহি তখতে সমাসীন হওয়ার জন্য আকুল আবেদন জানান। তখন ইবরাহিম ইবনে আদহাম তার ছেঁড়া কাপড় সেলাই করার সুচটি সমুদ্রে নিক্ষেপ করে উপস্থিত মন্ত্রীদের বললেন, আপনারা আমার সুচটি সমুদ্র থেকে এনে দিন। তারা তত্ক্ষণাৎ ডুবুরির সাহায্যে আপ্রাণ চেষ্টা করেন কিন্তু সমুদ্র থেকে একটি সুই বের করা কি সহজ ব্যাপার! বহু খোঁজাখুঁজি ও চেষ্টা করেও তারা ব্যর্থ হলেন। তখন তিনি সমুদ্রের মাছকে সম্বোধন করেন বললেন, তোমরা আমাকে সুই এনে দাও। এই নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য মাছ একটি করে সোনার সুই নিয়ে হাজির হলো। তিনি বললেন, সোনার সুই নয়, আমার হাত থেকে পড়ে যাওয়া সেই লোহার সুইটি এনে দাও। মুহূর্তের মধ্যে অন্য একটি মাছ লোহার সেই সুইটি নিয়ে হাজির হলো। এবার তিনি উপস্থিত মন্ত্রীদের লক্ষ্য করে বললেন, আপনারা বলুন, এখন আমি যে বাদশাহির মসনদে সমাসীন এটা উত্তম না আপনারা যে বাদশাহির কথা বলছেন, সেটা উত্তম? আপনারা কি চান আমি স্থায়ী জগতের বাদশাহি বর্জন করে অস্থায়ী জগতের বাদশাহি গ্রহণ করি? তিনি তাদের ফিরিয়ে দিয়ে বস্তুজগতের বাদশাহি পরিত্যাগ করে আখিরাতের বাদশাহির আসনে সমাসীন হয়ে রইলেন। কারণ তার সামনে বস্তুজগতের বাদশাহির তুলনায় আখিরাতের বাদশাহি অধিক লাভজনক বলে মনে হয়েছে, তাই তার জন্য বস্তুজগতের বাদশাহি ছেড়ে দেওয়া ও আখিরাতের বাদশাহি লাভের আমল করা সহজ হয়েছে। আমলের প্রতি আগ্রহের আরেকটি কারণ হচ্ছে স্বাদ ও মজা পাওয়া। স্বাদ ও মজা পাওয়া গেলে মানুষ আমলে আগ্রহী হয়। প্রসিদ্ধ আছে যে, ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ইশার অজুতে চল্লিশ বছর পর্যন্ত ফজরের নামাজ আদায় করেন। তিনি সর্বদা রোজা রাখতেন এবং চল্লিশ হাজার বার পবিত্র কোরআন খতম করেছেন। এক সাহাবির শরীরে নামাজরত অবস্থায় তীর বিদ্ধ হয় তবুও তিনি নামাজ ও তিলাওয়াতে মগ্ন থাকেন। সাহাবিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, নামাজে একটি লম্বা সূরা তিলাওয়াত করছিলাম এবং তিলাওয়াতের স্বাদ উপভোগ করছিলাম। এরূপ অসংখ্য ঘটনা বিদ্যমান রয়েছে।
লেখক : খতিব, গুলশান সেন্ট্রাল জামে মসজিদ, ঢাকা।