সোমবার, ১৯ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

বিবেকের বন্ধ দরজা উন্মুক্ত করতে হবে

নূরে আলম সিদ্দিকী

বিবেকের বন্ধ দরজা উন্মুক্ত করতে হবে

ভীষণভাবে অসুস্থ হয়ে ব্যাংককের মেডপার্ক হসপিটালে দুই মাস ২০ দিন তাদের চিকিৎসা নিয়ে আল্লাহর অশেষ রহমতে গত ২৮ জুন দেশে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ হয়েছে। একটা অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। বিশেষ বিমান এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আমার কনিষ্ঠ পুত্র তানজির আলম সিদ্দিকী ও ভাগ্নে আলী আকবর খান আমাকে ব্যাংককে নিয়ে সরাসরি ওই মেডপার্ক হসপিটালে ভর্তি করে। ওখানে প্রথম ১০ দিন আমি অচেতন ছিলাম। নিখুঁত চিকিৎসা ও পরিচর্যার মাধ্যমে তারা আমাকে ধীরে ধীরে সুস্থ করে তোলেন। চিকিৎসা শাস্ত্রে আমার একদমই অভিজ্ঞতা নেই। তবুও একটা অসুস্থ মানুষ হিসেবে অনুভূতির উত্তাপে যতটুকু বোধগম্য হয়েছে তা থেকে একটি ধারণা আমার হৃদয়ে প্রতিস্থাপিত হয়েছে যে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে থাইল্যান্ডের বিশেষজ্ঞদের একটা আশ্চর্যরকম দূরদর্শিতা আছে। যখন পূর্ণ সম্বিত ফিরে পেলাম তখন চিকিৎসক এবং নার্সদের কাছ থেকে অবহিত হলাম, আমাকে রিং পরানোর সময় ডাক্তারদের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল- আমার শরীরের অন্য কোনোকিছুতে (লিভার, কিডনি ইত্যাদি) যেন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা বিরূপ প্রভাব না পড়ে। থাইল্যান্ডের লাং বিশেষজ্ঞ ডা. ওরাকান আমার পরিচিত এবং ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সেই যোগসূত্রকে অবলম্বন করে আমার জ্যেষ্ঠ পুত্র তাহজিব আলম সিদ্দিকী (সংসদ সদস্য) ও কনিষ্ঠ পুত্র তানজির আলম সিদ্দিকী এবং আমার ভাগ্নে আলী আকবর খান মেডপার্ক হসপিটালে আমার ভর্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পেরেছিলেন। আমার যাত্রার আগে টেলিফোনে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে মেডপার্ক হসপিটালে আমার ভর্তিসহ সব বন্দোবস্ত তিনি সুচারুরূপে সম্পন্ন করে রাখেন। মেডপার্ক হসপিটালের সঙ্গে ডা. ওরাকানের সম্পর্ক সুনিবিড়। ওই হাসপাতালটিতে মালিকানার অংশীদারিত্বও তাঁর আছে। তাছাড়া জগৎসেরা লাং বিশেষজ্ঞদের মধ্যে তাঁর সুদৃঢ় অবস্থান শুধু মেডপার্ক হসপিটালেই নয়, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশে তাঁর সুনাম, খ্যাতি ও যশ দিগন্তবিস্তৃত।

আস্তে আস্তে যখন অবচেতন অবস্থা থেকে সচেতনতার বেলাভূমিতে প্রত্যাবর্তন করলাম, তখন স্ত্রী-পুত্র-কন্যাসহ আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব অনেকের বিচিত্র স্মৃতিগুলো আমার হৃদয়ের মানসপটে দূর আকাশের অগণিত নক্ষত্রের মতো ক্রমান্বয়ে ফুটে উঠতে লাগল। কখনো দুই চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরত পত্রপল্লবে মুক্তোর মতো ঝলঝল করা শিশিরকণার মতো। মুক্তিযুদ্ধের সোনাঝরা দিনগুলো আমার মানসপটে ভেসে উঠলে সমস্ত হৃদয় আন্দোলিত ও আপ্লুত হতো। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের স্মৃতিগুলো আমার হৃদয়কে এতটাই উদ্বেলিত ও উচ্ছ্বসিত করত যে, আমি বিমুগ্ধচিত্তে ভাবতাম, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারাটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় গৌরব ও প্রচন্ড অহংকার। জীবন-মৃত্যুর দোলনায় যখন দোল খাচ্ছিলাম তখনো ভাবতাম, বাংলার মাটি আমার কাছে কতটুকু প্রিয়, আমার সমগ্র সত্তার কত অমূল্য রতন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সেই সূর্য¯œাত দিনগুলো স্মৃতির আকাশে জ্বলজ্বল করে জ্বলে ওঠত। মৃত্যুর ভয়, অসুস্থতার যন্ত্রণা ক্ষণিকের জন্য হলেও অবলুপ্ত হয়ে যেত। আশা-নিরাশার দোলনায় সুড়ঙ্গ কক্ষে ঝকঝকে তকতকে রোগশয্যায় এ নির্লিপ্ততার মাঝে লাং বিশেষজ্ঞ ডা. ওরাকান ও হার্ট বিশেষজ্ঞ ডা. চাদ একসঙ্গে এসে আমাকে শোনালেন, লাং এবং হার্টের চিকিৎসা শেষ হয়েছে এবং এখন আমি সম্পূর্ণ নিরাপদ। তাঁদের সফলতার পেছনে যারা সাহায্য করেছিলেন (অন্যান্য ডাক্তার, নার্স থেকে শুরু করে ওয়ার্ডবয় পর্যন্ত) সবার প্রতি তাঁরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। আমি বিদগ্ধচিত্তে উপলব্ধি করলাম, তারা শুধু পৃথিবীর অন্যতম সেরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই নন, দিগন্তবিস্তৃত নীল আকাশের মতো তাঁদের চিত্ত কতখানি নির্মল, কতখানি উদার। আজ আমার মনে হয়, হৃদয়ের ঔদার্যে সফলতার কৃতিত্ব সহকর্মীদের বণ্টন করে দিলে তাতে গৌরব কেবলই বাড়ে, তাদের ব্যক্তিসত্তাকে মহিমান্বিত করে। যদিও চরিত্রের এ গুণটি অত্যন্ত বিরল।

এসব সত্ত্বেও তাঁদের হৃদয় আবেগবিবর্জিত ভাবলেশ-বিমুক্ত। শুধু কর্তব্যনিষ্ঠাই আছে। সেখানে কোনো হৃদয়ের উত্তাপ অনুভূতির বিষয় নেই। তাঁরা যেন একটি নির্দিষ্ট কর্মপদ্ধতির (সিস্টেম) নির্ধারিত কর্তব্য ও দায়িত্বের মধ্যে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা। আবেগ, উচ্ছ্বাস ও অনুভূতির কোনো বালাই নেই। আমি ওদের কর্তব্যনিষ্ঠায় মুগ্ধ হয়েছি কিন্তু প্রতিনিয়তই আমার মনে হয়েছে, এ কর্তব্যনিষ্ঠা ভাবলেশহীন। সেটি সম্পূর্ণই আবেগ-উচ্ছ্বাস বিবর্জিত তো বটেই, স্নেহ-মায়া-মমতার বন্ধনেরও কোনো বালাই নেই। তাঁরা যেটুকু করে সেটি সম্পূর্ণই দায়িত্ববোধের আঙ্গিকে।

২৮ জুন দেশে ফেরার পর কেবলই মনে হচ্ছে- উড়ন্ত বাতাসে সমুদ্র যেমন গর্জে ওঠে, উচ্ছ্বসিত ঢেউ যেমন সৈকতে আছড়ে পড়ে, সমুদ্র সৈকতে ফেনিল উর্মিমালায় টালমাটাল করে, তেমনি আমার কৃতজ্ঞতাভরা মনকে উদ্দীপ্ত করেছে, আপ্লুত করেছে, উচ্ছ্বসিত করেছে।

ব্যাংকক থেকে আসা অবধি আমার মনকে একটা প্রশ্ন বারবার বিভিন্ন অবয়বে নাড়া দিচ্ছে। আমাদের দেশে চিকিৎসার মান কেন এমন হলো না? আমি কোনোরকমে চড়া মূল্যের চিকিৎসা নিয়ে ফিরেছি। যদি আমাদের দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা ওইরকম উন্নত ও আধুনিক হতো, যদি চিকিৎসকদের মানসিকতায় একটা ব্যাপক পরিবর্তন আসত, রোগের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণার অমোঘ মানসিকতা যদি আমাদের চিকিৎসা অঙ্গনে গড়ে উঠত! অর্থের প্রয়োজন থাকলেও একজন প্রকৌশলীর সঙ্গে একজন ডাক্তারের পার্থক্য হলো- একজন ডাক্তার সব ধরনের অসুখ ও অসুস্থতার বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক যোদ্ধা, আর একজন প্রকৌশলী ১০টা-৫টা নিয়মে বাঁধা একজন কর্মকর্তা। ক্ষেত্রবিশেষে প্রকৌশলীদেরও অফিস সময়ের বাইরেও অনেক সময় দায়িত্ব পালন করতে হয়। আর ডাক্তারদের ক্ষেত্রে এটি নৈমিত্তিক ব্যাপার। ঘড়ির কাঁটা ধরে তাঁরা চিকিৎসাকার্য পরিচালনা করতে পারেন না। প্রয়োজনে শুধু অক্লান্ত পরিশ্রমই নয়, মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। করোনার ব্যাপক প্রভাব থাইল্যান্ডের মেডপার্ক হসপিটালেও দেখেছি। কিন্তু সেখানে কর্তব্যরত কেউ বিমর্ষ বা মলিন চিত্তে কাজ করছে- এমন দৃশ্য দেখা যায় না।

উন্নয়ন কর্মকান্ড, রাস্তাঘাট বিনির্মাণে আমাদের দেশে কম অর্থ তো ব্যয় হয় না। কিন্তু প্রতি বর্ষাতেই খসে পড়ে রাস্তাগুলোর কঙ্কালসার চেহারা ভেসে ওঠে। এ বিনির্মাণেও রাস্তার সংস্কারে যত অর্থই ব্যয় হোক না কেন তার আয়ুষ্কাল এক বছরের বেশি থাকে না। বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরও স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পর এসেও এর কোনো ব্যত্যয় ও ব্যতিক্রম দেখতে পেলাম না। এর কারণ একান্তই সদিচ্ছার অভাব। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো গ্যাসলাইন, স্যুয়ারেজ, পানির লাইন ও বৈদ্যুতিক তারের ব্যবহারে এক বিভাগের সঙ্গে আরেক বিভাগের কোনো সংযোগ ও সমন্বয় থাকে না বলেই প্রতীয়মান হয়। আমরা সবাই নিদারুণ ব্যথিতচিত্তে অবলোকন করি, একটি জায়গার রাস্তা-কালভার্টের নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই আরেকটি বিভাগের খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু হয়ে যায়। রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে এ যেন অপচয়ের একটি চরম বিভীষিকাময় চিত্র।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার দেশপ্রেমিক ও নীতিবান মানুষ। যারা সামনের দিনগুলোতে দেশটাকে সঠিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেই মানুষ হয়তো আমরা তৈরি করতে পারছি না। অথবা এর প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করছি না। যোগ্য মানুষ তৈরির জন্য প্রয়োজন যুগোপযোগী ও জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের শিক্ষা পরিকল্পনা মোটেও যুগোপযোগী নয়, সে লক্ষ্যে কোনো প্রচেষ্টা বা উদ্যোগও নেই। একটি জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় লক্ষ্য নির্ধারণ ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে না পারলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় আমরা নিদারুণভাবে পিছিয়ে পড়ব।

রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সর্বস্তরে মূল্যবোধের অবক্ষয়, আশঙ্কাজনক দুর্নীতির বিস্তার, শিক্ষাক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং এমসিকিউ পদ্ধতির পরীক্ষায় জ্ঞানশূন্য প্রজন্মের বিস্তৃতি শিক্ষাব্যবস্থাকে দেউলিয়ায় পরিণত করেছে। আজকাল স্নাতকোত্তর একটি ছেলে বা মেয়ে শুদ্ধ করে একটি ইংরেজি বা বাংলা বাক্য লিখতে পারে না, সঠিকভাবে একটি চাকরির দরখাস্ত লিখতে পারে না। গোটা জাতিটা সবদিক থেকেই যেন একটি ভয়ংকর বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে।

আজকে যারা রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন স্তরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের বিবেকের দর্পণের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। আজকের সমাজে যে যেভাবে পারেন, নানাবিধ উপায়ে মানুষের অর্থ সংগ্রহের যে নির্লজ্জ লিপ্সা, এর প্রভাব থেকে তরুণ সমাজকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় রক্ষা করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ডিগ্রি দেওয়ার কারখানা নয়। বরং আদর্শ-আপ্লুত জ্ঞান অর্জনের প্রসূতিকাগার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অবশ্যই ডিগ্রি নেওয়া হবে, তবে সেই ডিগ্রিটি কেবল একটি সাদা কাগজে লেখা ছাড়পত্র বা সনদ হবে না। বরং যে মূল্যবোধের তৃষিত আকাক্সক্ষায় প্রাইমারি স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত তারা অধ্যয়নরত ছিল, ডিগ্রি অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে সেই মূল্যবোধটুকু তাদের অর্জন করতে হবে। ডিগ্রি শুধু একটি সনদমাত্র নয় বা চাকরি লাভের জন্য ছাড়পত্র নয়। একটি শিক্ষিত মানুষ বিবেকের প্রজ্বলিত অগ্নিশিখায় স্নাত এবং পূতপবিত্র। সেখানে সে শুধু অর্থ উপার্জনের নিমিত্ত নয়। এটি তো আমাদের পূর্বসূরিরা প্রতিস্থাপিত করে গেছেন। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই বহু প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব বেরিয়েছেন, যারা আজ শুধু বাঙালির নয়, সারা বিশ্বের গৌরবের ধন। তাঁদের অনেকেই আমাদের কাছে প্রাতঃস্মরণীয়। কিন্তু বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন কেমন ম্রিয়মাণ। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জ্ঞানের প্রতি স্পৃহার অভাব লক্ষ্য করা যায়। আমাদের মেধার সংকট নেই, কিন্তু সেই মেধার যথাযথ লালন ও পরিশীলনের ক্ষেত্রটি তৈরি করতে হবে। কেবল বৈষয়িক ভাবনায় আচ্ছন্ন একটি বিশাল জনগোষ্ঠী নিয়ে কতদূর অগ্রসর হতে পারব আমরা- সেটি এখনই ভাবতে হবে।

এই তো সেদিনের কথা। মোনায়েম খানের দৌরাত্ম্যে এবং তার লাঠিয়াল বাহিনীর দুঃসহ প্রভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যখন কম্পমান হয়ে ওঠে, তখনই তার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা সচেতনতায় শুধু আসুরিক শক্তিকে প্রতিরোধই করেনি, সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মননকে এতখানি প্রোজ্জ্বল ও উদ্ভাসিত করেছিল যে, তার বিকীর্ণ অগ্নিকণায় আমরা মুক্তিযুদ্ধের পথ চিনে নিতে পেরেছিলাম।

ষাটের দশকের পুরো সময়টাজুড়েই তরুণদের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক আবেগ ও অনুভূতির একটা ঝড় উঠেছিল। আমার আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের জায়গা এখানেই যে, তাদের মধ্যে অনেক চিহ্নিত ও গৌরবান্বিত ছাত্রনেতা যারা আজও জীবিত আছেন, তাঁরা প্রায়শই আমার কাছে বলেন, তৎকালীন ওই বৈপ্লবিক চেতনা নিতান্তই কাল্পনিক ও আবেগাশ্রিত ছিল। নির্বাচনকেন্দ্রিক আমাদের গণতান্ত্রিক চেতনাই আমাদের সঠিক পথে প্রবর্তিত করেছে। এ কথাটুকুই আমাকে উচ্ছ্বসিত, অনুপ্রাণিত ও আবেগাপ্লুত করে। ভাবতে ভালো লাগে যে, ষাটের দশকে পুরো সময়টুকু আমার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও চেতনা শানিত ছিল, আমার মধ্যে কোনো বিভ্রান্তি ছিল না। বিষয়টি উল্লেখ করে আমি এটিই বলতে চাচ্ছি যে, যে কোনো ক্ষেত্রে অগ্রগতি ও সফলতার পূর্ব শর্ত হচ্ছে- সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যথাযথ পথ অনুসরণ করে আন্তরিক প্রচেষ্টা।

আমি সচেতনভাবেই বিশ্বাস করি, আজকের সব অনিয়ম, দুর্নীতি, দুরাচার ও অপশক্তির বিরুদ্ধে বিবেকের জাগ্রত দূত নতুন প্রজন্ম তথা ছাত্রসমাজকে উজ্জীবিত করতে পারলেই তারা যে কোনো রেনেসাঁর জন্ম দিতে পারবে। তারাই একটি জ্ঞানপ্রদীপ্ত ও গৌরবদীপ্ত জাতি গড়ে তুলবে।

লেখক : স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা।

সর্বশেষ খবর