রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা

মো. খসরু চৌধুরী

বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা

দারিদ্র্য দূরীকরণ, স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন, মাতৃমৃত্যু-শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ নানা আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ বেশ উন্নতি করেছে। নানামুখী কর্মসংস্থানমূলক ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণের ফলে দেশে ক্রমেই কমছে দারিদ্র্যের হার। নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তার মধ্যে ভিজিএফ, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, ওএমএস, জিআর (খাদ্য), কাবিটা, কাবিখা এবং ভিডব্লিউবি কার্যক্রমের মাধ্যমে বর্তমানে মানুষ খাদ্যসুবিধা পাচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা, শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও সম্মানী ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক ভাতা, স্বামী নিগৃহীত ও বিধবা ভাতা, মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি, হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ভাতা হিসেবে দেওয়া হচ্ছে নগদ অর্থ। সামাজিক সূচকে ভারত বা পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। কয়েক বছর ধরেই দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি দেশের সীমা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও আলোচিত। গত ১৪ বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা সামাজিক উন্নয়ন যা-ই বলি না কেন সব সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি অভূতপূর্ব। সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য হ্রাস, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি- সব ক্ষেত্রেই বিশ্বে বাংলাদেশ এখন এক বিস্ময়ের নাম। স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে দেশের জিডিপির আকার ছিল ৬৪ দশমিক ০৯ বিলিয়ন টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে সেটি বেড়ে হয়েছে ৩৯ হাজার ৭৬৪ দশমিক ৬২ বিলিয়ন টাকা। তুলনামূলক হিসাবে ৬২০ গুণ বেশি হয়। ২০২০ সালের শুরু থেকে বিশ্বজুড়ে লেগে আছে করোনা মহামারি। বছরখানেক ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। নতুন বছরে মন্দার আশঙ্কা করছে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফসহ অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশ্ব অর্থনীতির এতসব কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশের জিডিপির আকার অনেক বেড়েছে। ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার জিডিপি নিয়ে ২০২২ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫তম। এর আগের বছরে এ অবস্থান ছিল ৪১, সে সময় বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল ৩৯৭ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তৈরি এ তালিকায় বিশ্বের ৫০টি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে শুধু ভারত ও বাংলাদেশ। 

বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা যেভাবে ঘুুরছে, সেভাবে ঘুরতে থাকলে আমাদের আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। বাংলাদেশ আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। সব রকমের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে বাংলাদেশ তার উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে এটা প্রত্যাশা।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শপথ নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এরপর থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সর্বোচ্চ আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি সেক্টরেই লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া ও খুলে গেছে অযুত সম্ভাবনার দ্বার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর অবস্থা, দারিদ্র্য দূরীকরণ ইত্যাদি সামাজিক খাতে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। এ অগ্রগতিকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা ‘ঈর্ষণীয়’ বলে বর্ণনা করেন। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে।

সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা অনেক আগেই পূরণ করেছে। ইতোমধ্যেই জনগণের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি কিছু করতে পেরেছে। গুণগত ও সংখ্যাগত দুই দিক থেকেই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা প্রশংসার দাবি রাখে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে, আমরা বাইরে রপ্তানিও করতে পারি। দেশে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হয়েছে। আইটি সেক্টর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এ ইতিবাচক পরিবর্তনগুলোকে অব্যাহত রাখতে পারলে অচিরেই দেশ সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। শিক্ষায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। বছরের প্রথম দিনেই বিনামূল্যে সব পাঠ্যবই পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আগে মেয়েরা পড়াশোনায় অনগ্রসর ছিল, এখন উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন প্রণোদনার ফলে মেয়েদের শিক্ষিত করার ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতনতা বেড়েছে এবং মেয়েরাও শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হয়েছে।

দেশপ্রেমী প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের কষ্টার্জিত উপার্জন দেশে পাঠাচ্ছে। বাড়ছে রেমিট্যান্স, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ হচ্ছে সুনিশ্চিত। মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে। এক সময় বাংলাদেশ এলডিসিভুক্ত ছিল। বলা হতো অনুন্নত দেশ, তারপর বলা হতো উন্নয়নকামী দেশ। নিম্ন বা গরিব দেশ থেকে এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের বড় অবদান রয়েছে। আমরা যদি দক্ষ শ্রমিক বিদেশে পাঠাতে পারি তাহলে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে। গ্যাস-বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে পারলে শিল্প-কারখানা আরও গড়ে ওঠবে, বিদেশি বিনিয়োগও বাড়বে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ দৃশ্যমান। এক সময় বাংলাদেশকে যারা তলাবিহীন ঝুড়ি বলত, আজ তারাই দেশের উন্নয়ন নিয়ে প্রশংসা করেন। এটাই আওয়ামী লীগের অর্জন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নারী নেত্রীদের মধ্যে আইকন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীনসহ সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে যে স্বপ্ন দেশের মানুষকে দেখিয়েছিলেন, আজকে সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ লাভ করেছে।

                লেখক : পরিচালক, বিজিএমইএ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর