বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরেই নাজুক। সংবিধানে মৌলিক মানবিক অধিকারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবেও মানবাধিকার রক্ষার জন্য জোর তাগিদ দিয়ে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তারপরও স্বাধীনতার ৫৪ বছরে বারবার মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, রক্তার্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে। সর্বশেষ গত দেড় দশকের কঠিন স্বৈরশাসনে গুম-খুন-নির্যাতন, স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধা মানবাধিকার হরণের নিকৃষ্ট নজির সৃষ্টি করেছিল। সংশ্লিষ্ট সব আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে ওই পরিস্থিতি। ‘জাতিসংঘে মানবাধিকার পর্যালোচনা, বাংলাদেশের জন্য ৩০১টি সুপারিশ’, ‘মানবাধিকার নিয়ে বাংলাদেশকে ১১০ দেশের সুপারিশ’, ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি’-এমন অসংখ্য অসম্মানজনক সংবাদ শিরোনাম ছাপা হয়েছে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে। এ অবস্থা থেকে এখনো প্রত্যাশিত উন্নতি হয়েছে তা বলা যাবে না। জুলাই বিপ্লব-উত্তর নতুন বাংলাদেশে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসেও দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। এই প্রেক্ষাপটে ঢাকায় চালু হচ্ছে জাতিসংঘ মানবাধিকার মিশন। তিন বছর মেয়াদি মিশন চালুর জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে দুপক্ষ। মূলত গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের যুক্ততা বেড়েছে। মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সংস্কার এবং গণ অভ্যুত্থানের নৃশংসতার বিরুদ্ধে সমন্বিত তথ্যানুসন্ধান পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন কাজ করছে। চলমান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে মানবাধিকারকে মূল ভিত্তি হিসেবে নিয়েছে, সমঝোতা স্মারক তারই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিচ্ছে। এ সমঝোতা বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকার, নাগরিক সমাজ এবং অন্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে জাতিসংঘ মিশনের অভিজ্ঞতা ও সহায়তা বিনিময়ে সহায়ক হবে। এ মিশন মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষ্যে নানা ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে প্রশিক্ষণ ও প্রযুুক্তিগত সহায়তা দেবে। পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সমাজের কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে। সবটাই স্পষ্ট ইতিবাচক। এখন সার্বিক বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনার মাধ্যমে, সমন্বিত প্রচেষ্টা ও পদক্ষেপে দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি স্থায়ীভাবে সমুন্নত রাখার পন্থা উদ্ভাবিত হোক, মানবাধিকর লঙ্ঘনের পথ চিরতরে বন্ধ হোক-এ প্রত্যাশা সবার।
সরকার সে লক্ষ্যেই এ মিশনকে কাজে লাগাবে আশা করি।