শিরোনাম
রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বিখ্যাত নির্মাতাদের সেরা যত ছবি

বিখ্যাত নির্মাতাদের সেরা যত ছবি

বাংলাদেশি চলচ্চিত্রশিল্প ঢালিউড  বিশ্বের ১১তম বৃহত্তম চলচ্চিত্র উৎপাদন  কেন্দ্র। ঢাকার নবাব পরিবার বাংলাদেশে (তখন পূর্ব পাকিস্তান) প্রথম চলচ্চিত্র প্রযোজনা করে। সর্বপ্রথম বাংলা চলচ্চিত্র ছিল ‘সুকুমারী’ (১৯২৮), এরপর ‘দ্য লাস্ট কিস’ (১৯৩১)। এ দুটি ছবি ছিল নির্বাক। এ দেশে সর্বপ্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সবাক চলচ্চিত্র নির্মিত হয় ১৯৫৬ সালে ‘মুখ ও মুখোশ’। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগ ছিল। এরপরও মানসম্মত ছবি নির্মাণ হয়েছে। তবে পরিমাণ খুবই কম। বিখ্যাত নির্মাতাদের সেরা কিছু ছবির বর্ণনা দিয়েছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ

১৯৫৬ সাল। চলচ্চিত্রপ্রেমী একজন অসাধারণ বোদ্ধা আবদুল জব্বার খান বহু প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও চলচ্চিত্র নির্মাণে ব্রত হলেন। নিজের রচিত দর্শকপ্রিয় মঞ্চনাটক ‘ডাকাত’ অবলম্বনে নির্মাণ করলেন চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’। এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এ দেশে সবাক চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়। ছবিটি ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৫৭-১৯৫৮ সালে কোনো ছবি নির্মিত হয়নি। ১৯৫৯ সালে নির্মাণে এলেন চার নির্মাতা। তারা হলেন এ জে কারদার ‘জাগো হুয়া সাভেরা’, ফতেহ লোহানী ‘আকাশ আর মাটি’, মহিউদ্দীন ‘মাটির পাহাড়’ এবং এহতেশাম ‘এ দেশ তোমার আমার’। চারটি ছবিই সফল ছিল। মূলত ১৯৫৯ সাল থেকেই এ দেশে নিয়মিত চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়। ১৯৬০ সালে এহতেশাম ‘রাজধানীর বুকে’ আর ফতেহ লোহানী নির্মাণ করলেন ‘আসিয়া’। দুটি ছবিই দর্শক সাদরে গ্রহণ করে। ১৯৬১ সালে ৪টি ছবি নির্মাণ হলেও সাড়া জাগায় মুস্তাফিজের ‘হারানো দিন’ ও জহির রায়হানের ‘কখনো আসেনি’। ১৯৬২ সালে ৫টি ছবি নির্মাণ হয়। এর মধ্যে আলোচনায় আসে এহতেশামের ‘চান্দা’ ও ‘নতুন সুর’, সালাউদ্দীনের ‘সূর্যস্নান’ এবং আবদুল জব্বারের ‘জোয়ার এলো’ ছবিগুলো। ১৯৬৩ সালে চলচ্চিত্র নির্মাণে আবির্ভাব ঘটে কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হানের। তিনি নির্মাণ করলেন ‘কাঁচের দেয়াল’ ছবিটি। পাশাপাশি মুস্তাফিজের ‘তালাশ’ ও সালাউদ্দীনের ‘ধারাপাত’ এ বছরের সাড়া জাগানো ছবি। ১৯৬৪ সালের উল্লেখযোগ্য ছবি ও নির্মাতাদের মধ্যে রয়েছে জহির রায়হানের ‘সংগম’ (এ দেশের প্রথম রঙিন ছবি), এ বছরই চলচ্চিত্র জগতে অভিষেক ঘটে কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার সুভাষ দত্তের। তিনি নির্মাণ করলেন ‘সুতরাং’ ছবিটি। এ দেশের প্রথম কোনো ছবি হিসেবে এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাড়া জাগায়। তাসখন্দ চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি পুরস্কৃত হয়। এ বছরই অভিনেতা রহমান নির্মাণ করলেন ‘মিলন’। ১৯৬৪ সালে ১৬টি ছবি মুক্তি পায়। ১৯৬৫ সালে সালাউদ্দীন নির্মিত ‘রূপবান’ ছবিটি অসাধারণ ব্যবসা করে এ দেশে উর্দু ছবির পরিবর্তে বাংলা ছবির স্থায়ী আসন গেড়ে দেয়। ১৯৬৫ সালে ১১টি ছবি মুক্তি পায়। ১৯৬৬ সালে ২৬টি ছবি মুক্তি পায়। এর মধ্যে সুভাষ দত্তের ‘কাগজের নৌকা’ ছবিটির মাধ্যমে সুচন্দার নায়িকা হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। ১৯৬৭ সালে ২৩টি ছবি মুক্তি পায়। এর মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি ছবি হলো- খান আতাউর রহমানের ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’, এহতেশামের ‘চকোরি’, সুভাষ দত্তের ‘আয়না ও অবশিষ্ট’, জহির রায়হানের ‘আনোয়ারা’, রহমানের ‘দরশন’, মুস্তাফিজের ‘ছোটে সাহাব’ এবং কাজী জহিরের ‘নয়নতারা’। ১৯৬৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ৩৪টি ছবির মধ্যে সাড়া জাগানো ছবিগুলো হলো-দীলিপ সোমের ‘সাত ভাই চম্পা’, সুভাষ দত্তের ‘আবির্ভাব’, মিতার ‘এতটুকু আশা’, খান আতাউর রহমানের ‘অরুণ বরুন কিরণমালা’। ১৯৬৯ সালে মুক্তি পাওয়া ৩৩টি ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কাজী জহিরের ‘ময়নামতি’, মুস্তাফিজের ‘আনাড়ি’, মিতার ‘নীল আকাশের নিচে’। ১৯৭০ সালে মুক্তি পাওয়া ৪১টি ছবির মধ্যে সাড়া জাগানো ছবিগুলো হলো- আমির হোসেনের ‘যে আগুনে পুড়ি, মিতার ‘কখগঘঙ’, এহতেশামের ‘পিচঢালা পথ’, নজরুল ইসলামের ‘স্বরলিপি’, ইবনে মিজানের ‘কত যে মিনতি’, সুভাষ দত্তের ‘বিনিময়’, কাজী জহিরের ‘মধুমিলন’, কামাল আহমেদের ‘অধিকার’,  মিতার ‘দীপ নেভে নাই’। ১৯৭১ সালে মুক্তি পাওয়া ৬টি ছবির মধ্যে সাড়া জাগায় আলমগীর কুমকুমের ‘স্মৃতিটুকু থাক’, অশোক ঘোষের ‘নাচের পুতুল’। ১৯৭২ সালে মুক্তি পাওয়া ২৯টি ছবির মধ্যে নজর কাড়ে মোস্তফা মেহমুদের ‘মানুষের মন’, আজিজুর রহমানের ‘সমাধান’, চাষী নজরুল ইসলামের ‘ওরা ১১ জন’, এস এম শফীর ‘ছন্দ হারিয়ে গেলো’, বাবুল চৌধুরীর ‘প্রতিশোধ’, কামাল আহমেদের ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’, সুভাষ দত্তের ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, কাজী জহিরের ‘অবুঝ মন’, মমতাজ আলীর ‘রক্তাক্ত বাংলা’।

১৯৭৩ সালে মুক্তি পাওয়া ৩০টি ছবির মধ্যে দর্শকপ্রিয় ছবিগুলো হলো- জহিরুল হকের ‘রংবাজ’, সি বি জামানের ‘ঝড়ের পাখি’, মহসিনের ‘রাতের পর দিন’; ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, কামাল আহমেদের ‘অনির্বাণ’; বাবুল চৌধুরীর ‘অপবাদ’, সিরাজুল ইসলাম ভুইয়ার ‘দস্যুরানী’, কবির আনোয়ারের ‘স্লোগান’, খান আতাউর রহমানের ‘আবার তোরা মানুষ হ’ এবং আজিজুর রহমানের ‘অতিথি’। ১৯৭৪ সালে মুক্তি পায় ৩০টি ছবি। এর মধ্যে সাড়া জাগানো ছবিগুলো হলো- মিতার ‘আলোর মিছিল’, মাসুদ পারভেজের ‘মাসুদ রানা’, রুহুল আমিনের ‘বেইমান’, ইবনে মিজানের ‘ডাকু মনসুর’, মোস্তফা মেহমুদের ‘অবাক পৃথিবী’, ফয়েজ চৌধুরীর ‘মালকা বানু’, ইবনে মিজানের ‘জিঘাংসা’। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া ৩৪টি ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- আজিজুর রহমানের ‘অপরাধ’, বেবী ইসলামের ‘চরিত্রহীন’, মহসিনের ‘বাঁদী থেকে বেগম’, দীলিপ সোমের ‘আলো তুমি আলেয়া’, বাবুল চৌধুরীর ‘চাষির মেয়ে’, মাসুদ পারভেজের ‘এপার ওপার’, মিতার ‘লাঠিয়াল’, শিবলী সাদিকের ‘জীবন নিয়ে জুয়া’, আকবর কবির পিন্টুর ‘বাদশা’ (স্বাধীন দেশের প্রথম রঙিন ছবি), মুস্তাফিজের ‘আলো ছায়া’, খান আতার ‘সুজন সখী’।

১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া ৪৬টি ছবির মধ্যে সুপারহিট ছবিগুলো হলো- আজিমের ‘প্রতিনিধি’, ইবনে মিজানের ‘একমুঠো ভাত’, মুস্তাফিজের ‘মায়ার বাঁধন’, আলমগীর কবিরের ‘সূর্যকন্যা’, দিলীপ বিশ্বাসের ‘সমাধি’, জহিরুল হকের ‘কি যে করি’, মুশতাকের ‘বন্দিনী’, আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’, আলমগীর কুমকুমের ‘গুন্ডা’, এস এম শফীর ‘দি রেইন’, রাজেন তরফদারের ‘পালংক’, বাবুল চৌধুরীর ‘সেতু’, হারুনর রশিদের ‘মেঘের অনেক রং’, মহসিনের ‘আগুন’, মোস্তফা মেহমুদের ‘মনিহার’। ১৯৭৭ সালে মুক্তি পাওয়া ৩১ ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য- আলমগীর কবিরের ‘সীমানা পেরিয়ে’, রাজ্জাকের ‘অনন্ত প্রেম’, দেওয়ান নজরুলের ‘দোস্ত দুশমন’, ইবনে মিজানের ‘নিশান’, সুভাষ দত্তের ‘বসুন্ধরা’, আবদুল লতিফ বাচ্চুর ‘যাদুর বাঁশি’। ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া ৩৮টি ছবির মধ্যে সাড়া জাগায় সাইফুল আজম কাশেমের ‘সোহাগ’, দিলীপ বিশ্বাসের ‘আসামি’, আজহারের ‘পাগলা রাজা’, কাজী জহিরের ‘বধূবিদায়’, আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘সারেং বৌ’, এ জে মিন্টুর ‘মিন্টু আমার নাম’, আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, মিতার ‘অলংকার’, আজিজুর রহমানের ‘অশিক্ষিত’, অশোক ঘোষের ‘তুফান’, দারাশিকোর ‘ফকির মজনু শাহ’, সুভাষ দত্তের ‘ডুমুরের ফুল’। ১৯৭৯ সালে মুক্তি পাওয়া ৫১টি ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য- জহিরুল হকের ‘ঘর জামাই’, কামাল আহমেদের ‘অনুরাগ’, খান আতার ‘দিন যায় কথা থাকে’, শেখ নজরুল ইসলামের ‘নদের চাঁদ’, দিলীপ বিশ্বাসের ‘জিঞ্জির’, আজিজুর রহমানের ‘মাটির ঘর’, সাইফুল ইসলাম কাশেমের ‘ঘর সংসার’, তমিজউদ্দীন রিজভীর ‘ছোট মা’, রাজু সিরাজের ‘আরাধনা’, হাফিজ উদ্দিনের ‘ওয়াদা’, মমতাজ আলীর ‘ইমান’, কাজী হায়াতের ‘দি ফাদার’, আমজাদ হোসেনের ‘সুন্দরী’,  মসিহউদ্দিন শাকের ও শেখ নেয়ামত আলীর ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’। ১৯৮০ সালে মুক্তি পায় ৪৭টি ছবি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘সখী তুমি কার’, আজহারুল ইসলামের ‘জোকার’, আকবর কবির পিন্টুর ‘কথা দিলাম’, আজিজুর রহমানের ‘ছুটির ঘণ্টা’, শেখ নজরুল ইসলামের ‘এতিম’, আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘এখনই সময়’, বাদল রহমানের ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’, আজমল হুদা মিন্টুর ‘দোস্তী’, সাইফুল আজম কাশেমের ‘বৌরানী’, এ জে মিন্টুর ‘প্রতিজ্ঞা’, দিলীপ বিশ্বাসের ‘আনারকলি’, সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকির ‘ঘুড্ডি’ এবং আমজাদ হোসেনের ‘কসাই’।

সর্বশেষ খবর