আরফিন রুমি। হালের অন্যতম আলোচিত ও বিতর্কিত সংগীতশিল্পী। বিশেষ করে নিজের দাম্পত্যকলহ কাঠগড়ায় টেনে এ বিতর্ককে আরও ত্বরান্বিত করেন তিনি। তবে কেউ কেউ বলছেন, রুমি নন, প্রথম স্ত্রী অনন্যাই এ কলহ কাঠগড়ায় নিয়ে গেছেন। ঠিক তেমনি অনন্যার পক্ষে সাফাই গেয়ে অনেকেই বলছেন, রুমির দুর্ব্যবহার ও উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের কারণেই অনন্যা আদালতে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
অবশেষে পরিসমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে রুমি-অনন্যার দাম্পত্যকলহের এ অধ্যায়ের। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বৃহস্পতিবার তাদের মধ্যে আপস হয়ে যেতে পারে বলে জানা গেছে। ১৭ এপ্রিল ছিল এ মামলার শুনানি। ওইদিন রুমির আইনজীবী আদালতে বলেন, সাত দিনের মধ্যে অনন্যার সঙ্গে আপস করবেন তারা। এ শর্তে মামলার কার্যক্রম বা শুনানি পরবর্তী তারিখ পর্যন্ত রাখার অনুরোধ জানান। এও বলেন যে, শেষবারের মতো সময় নিচ্ছেন তিনি এবং ২৪ এপ্রিলের মধ্যেই আপস করে মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করবেন।
এর আগে গত বছরের ১২ অক্টোবর রুমির বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন প্রথম স্ত্রী অনন্যা। অভিযোগ ছিল নির্যাতন ও যৌতুকের জন্য মানসিক চাপ প্রয়োগ। সে সময় একটি আপসনামার ভিত্তিতে জামিন দেওয়া হয় রুমিকে। ১১ নভেম্বর থেকে শুরু হয় এ মামলার শুনানি। মাঝে আরও বেশ কয়েকটি তারিখে শুনানি হয়েছে। হয়েছে চার্জশিট দাখিল। এরই মধ্যে একবার জামিনও নামঞ্জুর হয় রুমির। কয়েক দিনের জন্য কারাগারেও যেতে হয় তাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ এপ্রিল ছিল এ মামলার শুনানি। সব মিলিয়ে নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন এ দম্পতি।
অন্যদিকে, অনন্যাও অনেক ছাড় দিয়েছেন রুমিকে। একের পর এক সময় নিয়ে আদালতের কালক্ষেপণ করেছেন রুমি। কিন্তু কখনই কথা রাখেননি এই সংগীতশিল্পী। এমনকি মাঝে একবার অনন্যার মায়ের বাসায় পুলিশ পাঠান তিনি। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আপসনামা ও কাবিননামা উদ্ধারের জন্য তাদের আসা। রুমি-অনন্যার এ কলহের জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে তাদের একমাত্র সন্তান আরিয়ান। দুই পক্ষের রেষারেষিতে অনেকটাই ম্লানহীন ও নির্জীব হয়ে পড়েছে সে। শুধু আদালতে শুনানির দিন বাবা ও দাদির সান্নিধ্য পায় ছোট্ট আরিয়ান। কারণ, অন্যান্য সময় সন্তানকে এড়িয়ে যেতেন রুমি। এমনকি মাঝে একবার জ্বরের সময় বাবাকে দেখতে চায় আরিয়ান। কিন্তু আসেননি রুমি। তবে মধ্যরাতে একবার এসেছিলেন রুমির মা অর্থাত্ আরিয়ানের দাদি। এ ছাড়া মামলার প্রথম থেকেই আদালতে দেখা যেত রুমির ভাই, দু-এক জন বন্ধু ও সংগীতশিল্পী ইলিয়াসকে। তবে প্রথম দিকে দেখা গেলেও গত দু-তিন তারিখে রুমির মাকে দেখা যায়নি আদালতে। এমনকি ১৭ এপ্রিল শুধু বন্ধুকে নিয়ে আদালতে উপস্থিত হন রুমি।
বৃহস্পতিবারের আপস প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে অনন্যা বলেন, ‘আমি আগের সিদ্ধান্তে অটল। রুমির সঙ্গে যে আপসনামা হয়েছে, তা পূরণ হলেই মামলা প্রত্যাহার করব। অন্যথায় কোনো ছাড় নয়। কারণ চুক্তিটা করেছি ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে।’ আপসনামা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘আরিয়ানের ভরণপোষণের জন্য রুমিকে ২০ লাখ টাকা দিতে হবে, যা ব্যাংকে ডিপোজিট রাখা হবে। এ ছাড়া আমার সঙ্গে সে আর খারাপ ব্যবহার করবে না। স্ত্রীর প্রকৃত মর্যাদা ও অধিকার দেবে। সবচেয়ে বড় কথা আমরা তাদের কাছে যাইনি। রুমির গোটা পরিবার আমাদের বাসায় এসে তার জামিনের জন্য অনুনয়-বিনয় করেন। এমনকি এসব শর্তাবলি লেখার সময় সিডি চয়েজের এমদাদ, প্রিন্স, কাজী শুভ, ইলিয়াস, খেয়া, আরমান উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া রুমির ব্যান্ড দলের মামুন ও লিটনও ছিলেন। এরাও এ শর্ত সম্পর্কে অবগত রয়েছেন।’
রুমির সঙ্গে পুনরায় একই ছাদের নিচে থাকবেন কি না— জানতে চাইলে অনন্যা বলেন, ‘আমি তো কখনো তাকে ছাড়তে চাইনি। কখনো বলিনি তাকে ছেড়ে চলে যাব। যা হোক, বৃহস্পতিবার কী হয় তা-ই এখন দেখার অপেক্ষা। সেদিন দুপুরে রুমির আইনজীবীর চেম্বারে আমরা উপস্থিত হব। দুই পক্ষের আইনজীবী ও বন্ধুবান্ধবদের সহযোগিতায় সমঝোতা করার কথা রয়েছে। এমনটাই তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েই বৃহস্পতিবার সেখানে যাব। সেখানেই দেখা যাবে তারা কী প্রস্তাব দেয়। বাকিটা না হয় ওইদিনের অপেক্ষায় রেখে দিলাম।’
এদিকে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুঠোফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে আরফিন রুমি বলেন, ‘আপসের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এসব ব্যাপার আমার আইনজীবী জানেন। এর বেশি বলতে চাই না।’
অন্যদিকে এ দম্পতির শুভাকাঙ্ক্ষীরা প্রত্যাশা রাখছেন, এবার হয়তো বরফ গলতে শুরু করেছে। কারণ দুই পক্ষকে কিছুটা নরম হতে দেখা যাচ্ছে। অনেকেই নাকি তাদের ফোনে বুঝিয়েছেন। অন্যদিকে রুমি-অনন্যার এ দাম্পত্যকলহের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাদের শুভানুধ্যায়ী ও ভক্তরা। তাদের প্রত্যাশা— এ দম্পতি যেন শীঘ্রই ঝামেলা মিটিয়ে ফেলেন। কারণ তারাও চান না রুমির মতো একজন উদীয়মান শিল্পীকে নিয়ে তর্কবিতর্ক হোক। এখন দেখার পালা রুমি অনন্যার কাছে ফেরেন কি না।